কুমিল্লায় দুই উপজেলা থেকে তিনটি লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সদর দক্ষিণ উপজেলার মোহনপুরে গলায় ফাঁসের চিহ্নসহ টিপু সুলতান(২৮) নামে এক যুবকের লাশ, চন্ডিমুড়া এলাকায় পাহাড়ের উপর থেকে মো. রিফাত হোসেন (৯) নামে এক শিশুর গলা কাটা লাশ এবং চৌদ্দগ্রামে বসতঘরের পেছনে নলকূপের পাশের সেপটিক ট্যাংকের ভেতর থেকে শাহিদা বেগম (৬৫) নামে এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। রিফাত ও শাহিদা বেগমকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। টিপু সুলতানের মৃত্যুর কারণ জানতে কাজ করছে তারা।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দিনের বিভিন্ন সময় এসব লাশ উদ্ধার করা হয়।
টিপু সুলতান সদর দক্ষিণ উপজেলার গাবতলী গ্রামের দেলু মিয়ার ছেলে, সে পেশায় একজন মাটি ব্যবসায়ি। রিফাত হোসেন পার্শ্ববর্তী বরুড়া উপজেলার চণ্ডিপুর গ্রামের মো. আব্দুর রশিদের ছেলে, ফলকামুড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র এবং শাহিদা বেগম ঘোলপাশা ইউনিয়নের ধনুসাড়া পূর্বপাড়া গ্রামের ইমাম মাওলানা আব্দুল মমিনের স্ত্রী।
নিহতের টিপু সুলতানের চাচাতো ভাই কৃষি কর্মকর্তা মুহিবুর রহমান জানান, '১ ফেব্রুয়ারি শনিবার রাতে টিপু বাড়িতে শেষ বার কথা বলে। সোমবার রাতে মোহনপুর গ্রামের কামাল হোসেনের বাড়ির ভাড়াটিয়া প্রবাসী স্ত্রী রূপা আক্তারের ঘরে টিপু সুলতানের লাশ পড়ে থাকার খবর পায়। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।'
টিপু সুলতানকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে নিহতের পরিবার। পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
লাশ উদ্ধার করে আনা সদর দক্ষিণ থানার উপ পরিদর্শক দিলীপ কুমার মজুমদার জানান, 'রূপা আক্তার নিজে থানায় শশরীরে গিয়ে জানায় তার ঘরে এক যুবক আত্মহত্যা করেছে। আমরা তাকে থানায় থাকতে বলেছি। পরে তার বাসা থেকে টিপু সুলতানের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আমরা টিপুর মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখছি।'
দিলীপ কুমার আরো বলেন, 'টিপুর গলায় ফাঁসের দাগ আছে। রূপার বাসায় টিপু কিভাবে আসলো তা জানতে চেষ্টা করছি।'
এদিকে দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র রিফাতের মৃত্যুর বিষয়ে স্বজনদের বরাত দিয়ে সদর দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত শনিবার রিফাত বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও না পেয়ে রবিবার বিকালে রিফাতের পরিবার বরুড়া থানায় জিডি করে । সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে চন্ডিমুড়ার লালমাই পাহাড়ে গলা কাটা লাশ দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা পুলিশকে জানায়। লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায় পুলিশ।’
ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ধারালো অস্ত্র দিয়ে পরিকল্পিতভাবে গলা কেটে শিশুটিকে হত্যা করা হয়েছে। শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছি আমরা।’
অপর দিকে চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় শাহিদা বেগমের মৃত্যুর বিষয়ে স্বামী মাওলানা আব্দুল মমিন বলেন, ‘আমি স্থানীয় একটি মসজিদে ইমামতি করি। প্রতিদিনের মতো সোমবার ভোরে ইমামতির জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে যাই। তখন আমার স্ত্রী নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। বাড়িতে আমরা দুজনই থাকি। নামাজ শেষ করে সকাল ৭টার দিকে বাড়িতে এসে স্ত্রীকে খোঁজ করি। কোথাও না দেখে একপর্যায়ে ঘরের পাশের টিউবওয়েলের কাছে তার পায়ের জুতা ও পরনের কাপড় দেখি। টানাহেঁচড়ার দাগ দেখে শাবল এনে সেপটিক ট্যাংকের স্লাব খুলে দেখি স্ত্রীর লাশ। পরে পুলিশ এসে লাশটি উদ্ধার করে। আমার স্ত্রীকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। আমি হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’
নিহতের ছেলে পল্লী চিকিৎসক মাছুম বিল্লাহ ওয়াহেদ বলেন, ‘আমরা পুরাতন বাড়িতে থাকি। নতুন বাড়িতে শুধু বাবা-মা থাকেন। কী কারণে কে বা কারা মাকে এভাবে হত্যা করেছে, তা বলতে পারছি না। যারাই এ ঘটনায় জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই আমরা।’
চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ প্রাথমিকভাবে বলা যায় -এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের কারণ জানতে তদন্ত শুরু হয়েছে। পিবিআইও তদন্ত করছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানা যাবে।’