গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ছয় মাস অতিক্রান্ত হয়েছে। গত দেড় দশকে সীমাহীন লুটপাটের মাধ্যমে দেশকে জরাজীর্ণ করে ফেলা হয়েছিল। দেশের ব্যাংকিং খাতের রীতিমতো মেরুদণ্ড ভেঙে ফেলা হয়েছিল। শঙ্কা কাটিয়ে রপ্তানি আয়েও সুখবর এসেছে। রপ্তানি আয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে।
দেশ নানামুখী চ্যালেঞ্জ ও বহু ধরনের ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করেছে। এর মধ্যেও কিছু প্রাপ্তি, কিছু অর্জন আমাদের উৎসাহিত করে। গত সোমবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) পণ্য রপ্তানি আয়ের যে হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) দেশ থেকে মোট দুই হাজার ৮৯৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে।
এই রপ্তানি আয় আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১১.৬৮ শতাংশ বেশি। রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) আয় বেড়েছে ১২ শতাংশ। সাত মাসে তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি আয়ের মধ্যে এক হাজার ২৬৮ কোটি ৭৬ লাখ ডলার এসেছে নিটওয়্যার রপ্তানি থেকে, যা বছর ব্যবধানে ১২.০৩ শতাংশ বেড়েছে। রপ্তানিতে দ্বিতীয় শীর্ষ স্থানে চলে এসেছে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য।
চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ৬৭ কোটি ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। জানুয়ারিতে সাত কোটি ৮৩ লাখ ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২১.৩৫ শতাংশ।
দেশ এগিয়ে চলেছে-দেশপ্রেমিক যেকোনো মানুষের কাছে তা স্বস্তিকর, আনন্দদায়ক। বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত থাকুক।
আমাদের এখন ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যাংক ঋণসহ পুঁজির জোগান বৃদ্ধি ও সহজলভ্য করতে হবে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমাতে হবে। রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণ করতে হবে। বাজার সম্প্রসারণের উপযুক্ত উদ্যোগ নিতে হবে। রপ্তানি বহুমুখীকরণ বা বহুমুখী রপ্তানির উপাদান নিয়ে কাজ করতে হবে। রপ্তানি বহুমুখীকরণের প্রধান শর্ত পণ্য বহুমুখীকরণ। রপ্তানির ক্ষেত্রে অপ্রচলিত পণ্যও সম্ভাবনাময় হতে পারে। পণ্য বহুমুখীকরণ ও রপ্তানিযোগ্য পণ্যের নতুন বাজার খুঁজে বের করতে বা নতুন বাজার সৃষ্টি করতে আমাদের বৈদেশিক মিশনগুলোকে কাজ করতে হবে। বিকল্প ও নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে। রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে বিকল্প ও নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে। বিশ্ববাজারে আমাদের কৃষিপণ্যের চাহিদা ও সম্ভাবনা আছে। বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের শাক-সবজি ও ফলমূলের চাহিদা রয়েছে। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে এখন বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে দেশে উৎপাদিত সিরামিক পণ্য। সরকারকে নানামুখী উদ্যোগ নিতে হবে।
আমরা চাই বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত থাকুক। এ জন্য গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসহ অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। ব্যাংকঋণসহ পুঁজির জোগান বৃদ্ধি ও সহজলভ্য করতে হবে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমাতে হবে। এ থেকে শিল্প ও বাণিজ্যকে রক্ষা করতে হবে। সর্বোপরি বাজার বিস্তৃত করা ও নতুন নতুন বাজার সৃষ্টির চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। আমরা আশা করি, সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে এবং উত্তরোত্তর আরো সমৃদ্ধ হবে।