চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও
প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) ১৮ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীকে আবাসিক হল
থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। একইসঙ্গে তিন জনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ
দিয়েছে প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) চুয়েট স্টুডেন্ট ডিসিপ্লিন
কমিটির সদস্য সচিব ও ছাত্র কল্যাণ অধিদফতর পরিচালক স্বাক্ষরিত পৃথক নোটিশে
বহিষ্কার ও কারণ দর্শানোর বিষয়টি জানানো হয়।
জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী
আন্দোলনের সময় এবং এর পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী এবং জনস্বার্থ
বিরোধী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে তাদেরকে হল থেকে বহিষ্কার ও
কারণ দর্শানোর এই নোটিশ দেওয়া হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে ছাত্রলীগের
সাবেক সদস্যদের বিচার, মদপানে অভিযুক্ত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও পুরকৌশল
বিভাগের শিক্ষক শাফকাত আর রুম্মান এবং চুয়েট প্রশাসনের সংস্কারের দাবিতে
চুয়েট উপাচার্য ভবন ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
পরে বৈঠকে বহিষ্কারের এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
শাস্তি প্রাপ্তদের মধ্যে আট জন চুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি, সাত জন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও ছয় জন সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ছিলেন।
চুয়েট
সূত্র জানিয়েছে, কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয় তিন শিক্ষার্থীকে। তারা
হলেন- চুয়েট পুরকৌশল বিভাগের ছাত্র এবং ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক
রাকিব উদ্দিন চৌধুরী, মেকাট্রনিকস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ার
বিভাগের ছাত্র ও ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বিজয় হোসেন ও পুরকৌশল বিভাগের
ছাত্র ও ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি চিন্ময় কুমার দেবনাথ।
এ তিন শিক্ষার্থীকে
দেওয়া নোটিশে বলা হয়, জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় এবং এর পর
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং জনস্বার্থ বিরোধী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত
থাকার বিষয়ে তোমার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়। উক্ত লিখিত অভিযোগ ও
অভিযোগকারী শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকারের ওপর স্টুডেন্টস ডিসিপ্লিন কমিটির
২৮১ তম (জরুরি) সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়। তোমার এমন আচরণ বিশ্ববিদ্যালয়ের
শৃঙ্খলা বিধি অনুযায়ী একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তোমাকে নিম্নোক্ত অভিযোগে
অভিযুক্ত করা হয়।
অভিযোগে বলা হয়, জুলাই-আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের
সময় এবং এর পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী এবং জনস্বার্থ বিরোধী
কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকা।
কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব ২৬ ফেব্রুয়ারি
বিকাল ৩টার মধ্যে সশরীরে হাজির হয়ে দাখিল করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা
হলো। এ ছাড়া ইচ্ছে করলে ব্যক্তিগতভাবে ২৭ ফেব্রুয়ারি বিলাল ৩টায় শুনানি
বোর্ডের সম্মুখে উপস্থিত হয়ে তোমার সপক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন করতে পারো।
এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত শুনানির জন্য লিখিত আবেদন নিম্ন স্বাক্ষরকারীর অফিসে
ওই দিন দুপুর ১টার মধ্যে জমা দেওয়া হবে। অন্যথায় তোমার বিরুদ্ধে
বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বিধি অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
একই
অভিযোগে আবাসিক হল থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার হওয়া ১৮ জন ছাত্রলীগের
নেতাকর্মী হলেন- চুয়েট নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের আব্দুর রহমান জিহান,
একই বিভাগের ইমাম হোসেন, বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তাহসিন
ইশতিয়াক ইফতি, যন্ত্রকৌশল বিভাগের আশিকুল ইসলাম, মেকাট্রনিকস অ্যান্ড
ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ার বিভাগের মইনুল হক, পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মাইনিং
ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আজহারুল ইসলাম মুন্না, একই বিভাগের সাদিকুজ্জামান,
সাদিকুজ্জামান, তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক কৌশল বিভাগের ইরফানুল করিম তোহা, একই
বিভাগের রিফাত হোসাইন, তালহা জোবায়ের, পুরকৌশল বিভাগের মাহামুদুল হাসান
জাহিদ, যন্ত্রকৌশল বিভাগের সৌমিক জয়, একই বিভাগের তানভীর জনি, তোফাইয়া
রাব্বী, ইউসুফ আব্দুল্লাহ রনি, মোহাম্মদ তৌফিকুর রহমান, পুরকৌশল বিভাগের
ইফতেকার সাজিদ সম্রাট।
এ প্রসঙ্গে চুয়েট ছাত্রকল্যাণ অধিদফতরের
উপ-পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে ও
অভিযোগকারীদের সাক্ষাৎকার শেষে স্টুডেন্ট ডিসিপ্লিন কমিটি সভায় তাদেরকে
দোষী সাব্যস্ত করে ন্যূনতম এ শাস্তি দিয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে বৈষম্যবিরোধী
ছাত্র আন্দোলনের চুয়েট শাখার সমন্বয়ক মাহাফুজার রহমান মোহাব্বত বলেন,
‘দেশের বুয়েট, কুয়েটসহ অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের বিচার করলেও এতদিন
চুয়েট প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তাই বৃহস্পতিবার
ছাত্রলীগের নেতাদের বহিষ্কার ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও মদপানে অভিযুক্ত
পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষক শাফকাত আর রুম্মানের বিচারের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ
করি। পরে শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন তাদের এ শাস্তি
দিয়েছে।’