অন্তর্র্বতী
সরকারের জন্য অপেক্ষা করছে অসম্ভবকে সম্ভব করার সুবিশাল কর্মপরিধি। সেই
কর্মপরিধির একটি হচ্ছে সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন। গত জুলাই-আগস্টে
ছাত্র-জনতার রক্তঝরা অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন
হয়। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারে
হাত দেয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত ১১
সেপ্টেম্বর নির্বাচনব্যবস্থা, সংবিধান, পুলিশ, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন
কমিশন (দুদক) ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠনের ঘোষণা দেন। এরই মধ্যে ছয়টি
সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার বিচার বিভাগ
সংস্কার কমিশন ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এই দুই
কমিশনের প্রতিবেদন গ্রহণ করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন,
‘আমরা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনগুলো জনগণ, রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের
কাছে দিয়ে দেব, যাতে তারা একমত হতে পারে; কী করলে তাদের ভালো হবে।
আমি
আশা করি, সবাই মিলে প্রস্তাবগুলো একমনে গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করবে।’ একই দিন
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার গেটে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার
প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ছয় সংস্কার কমিশনের
প্রস্তাবিত সুপারিশ নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুধীসমাজের সঙ্গে আলোচনা
করবে। তাদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে কতটুকু সংস্কার এখনই করতে
হবে, কতটুকু পরে করা যাবে, এখনই যেগুলো করা যাবে তা করতে হলে সাংবিধানিক
সংস্কার প্রয়োজন হবে কি না, তা ঠিক করা হবে। বিস্তারিত আলোচনার পর
অংশগ্রহণকারী সব রাজনৈতিক দল ও সুশীল নাগরিকের সবার মতামতের ভিত্তিতে যেসব
সংস্কার নিয়ে সবাই ঐকমত্যে পৌঁছবে, সেগুলোতে সবাই স্বাক্ষর করবে।
এই
স্বাক্ষরের মাধ্যমে যতগুলো সংস্কার চূড়ান্ত হবে, তা-ই হবে জুলাই চার্টার।
এই জুলাই চার্টারের কিছু বাস্তবায়ন করবে অন্তর্বর্তী সরকার। কিছু করবে
পরবর্তী সরকার এসে।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা
মহানগরের জনসংখ্যা ও পরিষেবার ব্যাপ্তির কথা বিবেচনায় রেখে ভারতের রাজধানী
নয়াদিল্লির মতো ফেডারেল সরকার নিয়ন্ত্রিত ক্যাপিটাল সিটি গভর্নমেন্ট অর্থাৎ
রাজধানী মহানগর সরকার গঠনের সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। দেশকে
চারটি প্রদেশে ভাগ করা, সরকারি নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত ও কার্যকর করতে
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষা এক বছরের মধ্যে শেষ করা, ডিসিদের
(জেলা প্রশাসক) পদবি পরিবর্তন করার মতো আরো কিছু সুপারিশ করা হয়েছে।
স্বতন্ত্র
সচিবালয়, নিজস্ব বাজেট প্রণয়ন এবং বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থাপন,
গ্রাম আদালত গঠনসহ ২৮টি সুপারিশ এসেছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন থেকে।
এসব সুপারিশ বা সংস্কার প্রস্তাব প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিরাজমান সমস্যা,
সংবিধানে বিচার বিভাগ সংক্রান্ত বিধান, সংশ্লিষ্ট আইন, প্রাতিষ্ঠানিক
কাঠামো, জনবল, আর্থিক এবং ভৌত ও লজিস্টিক বিষয়াদি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে বলে
সারসংক্ষেপ প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে সংস্কার কমিশন।
দুই সংস্কার
কমিশনের প্রতিবেদন গ্রহণ করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক
মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন শুধু বাংলাদেশ নয়,
পৃথিবীর সম্পদ। দেশের মানুষ প্রতিদিন নাগরিক অধিকার থেকে যেভাবে বঞ্চিত হয়,
সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেই বঞ্চনা থেকে মুক্তি
মিলবে।
আমাদের প্রত্যাশা, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা, সুশাসন, বৈষম্যহীন
সমাজ, সমৃদ্ধি, শান্তি-শৃঙ্খলা আর ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবে
সংস্কার প্রস্তাবগুলো।