কোচ
পিটার বাটলারের অধীনে অনুশীলন করবেন না বলে ১৮ জন নারী ফুটবলার ঘোষণা
দিয়েছিলেন ৩০ জানুয়ারি। সেই থেকে আজ পর্যন্ত বিদ্রোহীরা নিজেদের সিদ্ধান্তে
অটল। অনুশীলনে ফিরতে বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়ালের অনুরোধও রাখেননি তাঁরা। এ
অবস্থায় বাফুফে তাদের পথ বেছে নিয়েছে। বিদ্রোহী খেলোয়াড়দের বাইরে রেখে
ক্যাম্পে থাকা খেলােয়াড়দের সঙ্গে চুক্তি করেছে। ১৮ বিদ্রোহীসহ ক্যাম্পে
আছেন ৫৫ জন। এই ১৮ জনসহ আরও ১ জনকে বাদ দিয়ে বাকি ৩৬ জনের সঙ্গে সোমবার
চুক্তি করেছে দেশীয় ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
চুক্তির ব্যাপারে
আনুষ্ঠানিকভাবে বাফুফে কিছু বলছে না। চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড়দের নামও তারা
প্রকাশ করছে না। তবে ভেতরে–ভেতরে নিজেদের কাজটা এগিয়ে নিচ্ছে। একাধিক সূত্র
জানিয়েছে, বাফুফে ভবনের চতুর্থ তলায় থাকা মেয়েদের ক্যাম্প থেকে একজন একজন
করে ডেকে দ্বিতীয় তলার সভাকক্ষে এনে চুক্তিপত্রে তাঁদের স্বাক্ষর নেওয়া
হয়েছে।
প্রথমে চুক্তি করা হয় সাবিনাদের সঙ্গে বিদ্রোহে অংশ না নেওয়া
১২ জনের সঙ্গে। তাঁরা হলেন আফঈদা খন্দকার, কোহাতি কিসকু, মুনকি আক্তার,
শাহেদা আক্তার রিপা, স্বপ্না রানী, ইয়ারজান বেগম, আইরিন খাতুন, অর্পিতা
বিশ্বাস, সুরভী আক্তার, আকলিমা খাতুন, হালিমা আক্তার ও সুরমা জান্নাত।
তাঁদের মধ্যে প্রথম সাতজন সাফজয়ী দলের।
২০২২ সালে সাফ জেতার পর নারী
ফুটবলাররা বাফুফের কাছে মাসিক বেতন ভাতার দাবি তুলেছিলেন প্রথম। অনেক
অপেক্ষার শেষে ২০২৩ সালের ১৬ আগস্ট বাফুফে ৩১ জন নারী ফুটবলারের সঙ্গে ৬
মাসের জন্য চুক্তি করে। সে বছর ১ সেপ্টেম্বর কার্যকর হয়ে ওই চুক্তি শেষ হয়
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে। এরপর স্বয়ংক্রিয়ভাবে চুক্তি নবায়ন হয় গত বছরের
অক্টোবরে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ পর্যন্ত।
প্রথমবারের চুক্তিতে দ্বিতীয়
ক্যাটাগরিতে থাকা উন্নতি খাতুন ক্যাম্পে যোগ দেননি। তাই তিনি বাদ পড়েন।
পারফরম্যান্সের কারণে বাদ পড়েন আরেকজন। নতুন করে চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত হন
ছয়জন। নতুন চুক্তিতে সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৫ জনে। তখন মেয়েদের সর্বোচ্চ মাসিক
বেতন ছিল ৫০ হাজার টাকা, সর্বনিম্ন ১৫ হাজার। ৫০ হাজার টাকা করে বেতন পান
সাবিনা খাতুন, রুপনা চাকমা, মাসুরা পারভীন, শামসুন্নাহার, শিউলি আজিম,
নিলুফা ইয়াসমিন, আনাই মোগিনি, মারিয়া মান্দা, মনিকা চাকমা, শামসুন্নাহার
জুনিয়র, ঋতুপর্ণা, সানজিদা আক্তার, মার্জিয়া আক্তার, কৃঞ্চারানী সরকার ও
তহুরা খাতুন।
যদ্দুর জানা গেছে, এবার ৬ ক্যাটাগরিতে ৫০ হাজার, ৩০ হাজার,
২৫ হাজার, ২০ হাজার, ১৫ হাজার ও ১০ হাজার টাকা করে বেতন দেওয়া হবে
মেয়েদের। চুক্তি কার্যকর হবে ক্যাম্পে যোগ দেওয়ার দিন গত ১৫ জানুয়ারি ২০২৫
থেকে।
প্রশ্ন হচ্ছে, ঢালাওভাবে বাফুফের এই চুক্তি কতটা প্রত্যাশিত ছিল?
বাফুফের কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁদের পরিকল্পনায় ছিল সিনিয়র-জুনিয়র সবার
সঙ্গেই চুক্তি করা। আগামী জুলাইয়ে ঢাকায় অনূর্ধ্ব-২০ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ
হওয়ার কথা। এর ফলে তরুণদেরও ক্যাম্পে তোলা হতো মার্চ-এপিলের দিকে। ১৮ জনের
বিদ্রোহের কারণে হয়তো একটু আগেই তোলা হয়েছে তাঁদের। তবে অনেকে বলছেন, এখনই
সবার সঙ্গে চুক্তি করে বাফুফে আসলে বিদ্রোহীদের চাপে রেখেছে, যাতে চুক্তিতে
থাকতে বিদ্রোহীরা ফিরে আসেন।
বাফুফের কর্মকর্তারা আগেই জানিয়েছিলেন,
অনুশীলনে না ফিরলে সাবিনা খাতুনদের চুক্তির জন্য বিবেচনা করা হবে না।
তাঁদের সঙ্গে চুক্তি তখনই হবে, যখন তাঁরা ফিরবেন অনুশীলনে এবং সেটা
বাটলারের অধীনে। বাটলারকে বাদ দেওয়ার যে শর্ত সাবিনারা দিয়েছিলেন, তা
কোনোভাবেই মানবে না বাফুফে। বরং বাফুফে মনে করছে, মেয়েরা এভাবে বিদ্রোহ করে
শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। তবে শাস্তির পথে যেতে চাইছে না বাফুফে।
বাফুফে
বরং কৌশলী পথে গেছে। তারা বিদ্রোহীদের চমকে দিয়ে এই টালমাটাল অবস্থার
মধ্যেই চুক্তির ব্যাপারটা সামনে নিয়ে এসেছে। বিদ্রোহীদের সামনে দিয়ে
জুনিয়ররা চুক্তির কাগজপত্র নিয়ে রুমে যাচ্ছেন, বিদ্রোহীরা তা দেখছেন। আর তা
বিদ্রোহীদের জন্য পরোক্ষে একটা বার্তাও। এর ফলে সাবিনা, মনিকা, মারিয়ারা
এখন বুঝতে পারছেন, পিটারের অধীনে অনুশীলনে না ফিরলে তাঁদের ক্যারিয়ার শেষও
হয়ে যেতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে বাফুফে সভাপতির আগামীকাল ইংল্যান্ডে
যাওয়ার কথা। যাওয়ার আগে আজ সাবিনা খাতুনকে ডেকে তিনি কথা বলেছেন। কী বলেছেন
সভাপতি, তা নিয়ে কেউই মুখ খুলছেন না।