বুধবার ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
৩০ মাঘ ১৪৩১
ভোজনতত্ত্ব ও ভোজনচিন্তা
জুলফিকার নিউটন
প্রকাশ: বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১:১৬ এএম আপডেট: ১২.০২.২০২৫ ১:৪৪ এএম |



 ভোজনতত্ত্ব ও ভোজনচিন্তা ভোজন-রসিকতার ইতিহাসে এই অমূল্য রত্নটির অস্তিত্ব আমার অজানা ছিল। অল্পক'দিন আগে গ্রন্থটি আমার চোখে পড়ে। কয়েক পাতা পড়ে প্রথমে ইচ্ছে হল, রাত জেগে গোগ্রাসে বইটি পড়ে ফেলি। কিন্তু তখনই নিজেকে সংযত করলাম। গোগ্রাসে চেতনাগ্রস্ত করার জিনিস এটি নয়। বেশ তারিয়ে তারিয়ে রসিকোচিত ধীরোদাত্ত আহ্লাদের সঙ্গে এর স্বাদ গ্রহণ করতে হয়, ফরাসি দেশের অনন্য সভ্যতাকে বাফায়দা হাজার কুর্নিশ জানিয়ে। অনন্যতার উদাহরণ-লেখক জাঁ-আঁতেলম ব্রিয়া-সাভার‌্যাঁ (ঔবধহ-অহঃযবষসব ইৎরষষধঃ-ঝধাধৎরহ) যে-সভ্যতা তাঁর জন্মদাত্রী এবং পালিকা, তার প্রতি সম্মান জানিয়ে বলছেন, সভা মানুষের গভীরতম আনন্দের আকর দু'টি সৃষ্টি 'মধংঃৎড়হড়সু' এবং 'পড়য়ঁবঃৎু' ফরাসি সংস্কৃতির দান, তাই এই দুই শব্দের কোনও অনুবাদ সম্ভব হয়নি। সব ভাষাতেই ফরাসি কথাদু'টিই ব্যবহার হয়। 
বইটির মেজাজ বোঝানোর জন্য এর উপান্ত পরিচ্ছেদ থেকে একটি উদ্ধৃতি দিই। 'মানবজাতির আদি পিতা-মাতা, যাঁদের ভোজন-রসিকতা ইতিহাস-বিখ্যাত, একটি আপেলের জন্য তোমরা সব কিছু হারালে, একটি ট্রাফল-পোরা টার্কির জন্য তোমরা কী না করতে। কিন্তু ভূস্বর্গে তো কোনও রাঁধুনি বা ময়রা ছিল না। তোমাদের কী দুর্ভাগ্য।' পরিচ্ছেদটির শেষ প্যারাগ্রাফ ১৮২৫ সালের ভোজনরসিকদের উদ্দেশে রচিত। ১৯০০ সালে বিজ্ঞানের মহিমায় আহার্য কত সমৃদ্ধ হবে, অজাত ভ্রমণকারীরা পৃথিবীর অজ্ঞাত অঞ্চল থেকে কত অজ্ঞাত আনন্দসম্ভার এনে ইউরোপীয় ভোজনকে বৈচিত্রে ভরে দেবে। সে আনন্দ তাদের চেতনাগোচর হল না, আহা তাদের কী দুর্ভাগ্য। লেখক ২০২০ সালে উত্তরার খানা খাজানার রেস্তোরাঁয় চিকেন টিক্কা মসালা খেয়েও কি একই মন্তব্য করতেন। আমি তো বলি, ও বস্তু যারা গলাধঃকরণ করে-আহা তাদের কী দুর্ভাগ্য। 
লেখক জীবনরসিক। কূটনৈতিক তালেরার প্রতিধ্বনি করে বারবারই বলেছেন, ফরাসি বিপ্লবের আগে ফ্রান্সে বাস করার সৌভাগ্য যার হয়নি, বেঁচে থাকার আনন্দ কত গভীর হতে পারে, তা সে কখনও জানবে না। আর সে-আনন্দের কেন্দ্রে সভ্যতার দুই মহৎ দান-'মধংঃৎড়হড়সু' এবং 'পড়য়ঁবঃৎু"। ব্রিয়া-সাভার্যাঁ বলেছেন, সে সুখের চরম বিকাশ মধ্যবিত্ত জীবনে। রাজ্যরক্ষার দায়িত্ব নেই, জীবিকা উপার্জনের জন্য দিনের মধ্যে সামান্য কয়েক ঘণ্টার কাজই যথেষ্ট, বাকি সময় কাটে সংগীত, সাহিত্য আর সর্বোপরি সুখাদ্য এবং 'পড়য়ঁবঃৎু'র চর্চায়। 
ব্রিয়া-সাভার‌্যার জন্ম বেলে নামে এক অখ্যাত শহরে, ফ্রান্সের বুজে নামক নিতান্ত অবিশিষ্ট অঞ্চলে। কিন্তু এক ব্যাপারে অঞ্চলটি বিশেষ সমৃদ্ধ। খাদ্যবস্তুর সুস্বাদে ফ্রান্সের সব নামজাদা জায়গার সঙ্গে টেক্কা দিতে পারে। এই অঞ্চলের গরু, ভেড়া, টার্কির মাংস তথা হাঁস, মুরগি, চিংড়ি আর ট্রাউট মাছ, বুনো পাখি তথা হরিণ আর সব অঞ্চলকে হার মানায়। আর তার অরণ্যভূমি মাশরুম এবং ট্রাফলের স্বর্গীয় স্বাদে উদ্ভাসিত। তার মদ্য বার্গান্ডি বা বোর্দোর পানীয়র সঙ্গে তুলনীয় না হতে পারে, কিন্তু কোনও মতেই ফেলনা নয়। তার নন্দনশক্তি অসাধারণ, পান করলে মুখ শুদ্ধ, মস্তিষ্ক পরিচ্ছন্ন হয়ে যায়। 
ঈশ্বরের আশীর্বাদধন্য এই জনপদে ভোজনরসিক এক পরিবারে তাঁর পরমা সুন্দরী মায়ের যিনি স্থানীয়দের কাছে সুন্দরী অরোরা নামে পরিচিত ছিলেন-অনবদ্য রান্না খেয়ে লেখক বড় হন। যতদূর মনে হয়, অকৃতদার মানুষটি সভ্যতার জগতে ফ্রান্সের দ্বিতীয় মহৎ অবদান 'পড়য়ঁবঃৎু'র সঙ্গেও অপরিচিত ছিলেন না। তবে ওই বিষয়টি সম্পর্কে ওঁর রচিত কোনও বই এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। খাদ্য-রসিকতায় ওঁর মা-বাবার মতো দুই ভাই এবং একমাত্র ভগ্নীটিরও খ্যাতি ছিল। ভগ্নী পিয়েরেত একশো বছর বেঁচে ছিলেন। গ্রন্থকার জন্মস্থানে বছরে মাত্র দু'মাস কাটাতেন, আহারের ব্যাপারে খুঁতখুঁতে ভাইটির খিদমত করতে পিয়েরেত এত ক্লান্ত হয়ে পড়তেন যে, বাকি দশমাস শয্যায় কাটত। একটি সুসভ্য এবং পর্যাপ্ত ডিনার খেয়ে মিষ্টান্ন আনতে বলে তিনি অস্তিম শয্যায় শয়ন করলেন, বোধহয় সুখের পর্যাপ্তিতে। 
লিয় থেকে আইনের ডিগ্রি নিয়ে ১৭৯১ সালে তিনি ভার্সাইয়ে জাতীয় সভার সভ্য নির্বাচিত হন এবং ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে বেলে ফিরে আসেন। কিন্তু পরের বছর যখন রাজতন্ত্র লোপ পেল, সেই লুপ্ত ব্যবস্থার সমর্থক হিসাবে ১৭৯৩ সালে মহাবিপ্লবের সূচনায় তাঁর শুধু চাকরি গেল না, মুণ্ডু নিয়েও রীতিমতো টানাটানি পড়ে। একজন কট্টর বিপ্লবীর স্ত্রীর সঙ্গে সংগীতচর্চা মারফত বন্ধুত্বের কৃপায় কোনও মতে গিলোটিনের হাত থেকে সে যাত্রা মুণ্ডুটি রক্ষা পায়। 'আপনি বাঁচলে বাপের নাম' এই মহামন্ত্র স্মরণ করে তিনি ফ্রান্স ছেড়ে পালান, প্রথমে কোলোন, পরে সুইজারল্যান্ডে আশ্রয় নেন। সুইস রান্না খেয়ে বেশ আনন্দেই ছিলেন আর সময়টা নষ্ট না করে সুইস রন্ধনশৈলীর সুউচ্চ শীর্ষ ফদ্যু-নামক সুপ-তথা-মাছ-মাংস-তরকারি সমৃদ্ধ রসাল পদটি রাঁধতে শিখে ফেলেন। সেখান থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে 'আশ্রয়, উপার্জনের উপায় এবং শাস্তির' সন্ধান পান। নতুন দেশের অরণ্যে শিকারলব্ধ পশু-পাখি ওঁর বিদগ্ধ রসনাকে তৃপ্তি দেয়। আর জীবিকা উপার্জন করেন সংগীত শিখিয়ে। জীবনরসিক মানুষটির কাছে মার্কিন রাজ্যের জীবনযাত্রা এবং ভোজনশৈলী অপ্রিয় ঠেকেনি। বোধ হয় গত দু'শো বছরে সমৃদ্ধি যত বেড়েছে সেই অনুপাতেই ওই দুই ক্ষেত্রেই মার্কিন মুলুকে কিঞ্চিৎ অবনতি ঘটেছে। পয়সা রোজগারে মনপ্রাণ ঢেলে দিলে জীবন উপভোগের ফুরসত কোথায়? বিশ্বায়ন নীতির উৎসাহী প্রচারক এবং মুনাফার লোভে যাঁরা জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁরা কথাটা একটু মনে রাখবেন? 
১৭৯৬ সালে দেশে ফিরে তিনি জাতীয় সৈন্যবাহিনীর আহার-ব্যবস্থার দায়িত্ব পান। মনে হয় ফরাসি মহৎ বাহিনী (এৎধহফব ধৎসল্কব) মহৎ আহার্যে তৃপ্ত হয়েই লড়াই করেছেন। শেষাশেষি যে কদন্নভুক্ত ইংরাজদের কাছে তাদের পরাজয় হল, এ নিতান্তই ভাগ্যের পরিহাস। লেখকের শেষ জীবনটা কাটে উচ্চতম আপিল আদালতের বিচারকের পদে। নেপোলিয়ন তাঁকে নাইটহুডে সম্মানিত করেন। তাঁর: শেষের বছরগুলি মধংঃৎড়হড়সু এবং পড়য়ঁবঃৎু-র যৌথ সুখের চর্চায় পরিপূর্ণ ছিল। ১৮২৫ সালে নিজ ব্যয়ে আলোচ্য বইটি ছাপিয়ে রাতারাতি বিখ্যাত হন। আর সম্ভবত উপযুক্ত দ্বিতীয় আনন্দের সঙ্গিনী ছিলেন ঘনিষ্ঠ আত্মীয়া মাদাম রেকামিয়ের। বইটি তাঁকে উপহার দিতে গিয়ে তিনি বন্ধুত্ব 'এবং হয়তো আরও মোলায়েম এক অনুভূতি'র কথা বলেছেন। অতি সত্য, ফ্রান্সে প্রকাশ্যে পরস্ত্রীকে প্রেম নিবেদন করলে অনেক ক্ষেত্রেই স্বামীর সকৌতুক কাঁধ ঝাঁকানো ছাড়া আর কোনও বিপদের আশঙ্কা ছিল না। এক গাড়োলরাই গাঁক গাক করে ডুয়েলের আহ্বান জানাতেন। মেগাস্থিনিস লিখে গেছেন-মৌর্য যুগে বাঙালিরা হাতির এত সম্মান করতেন যে পত্নীকে কেউ হাতি উপহার দিলে দাতা মহিলাটির নিভৃত সঙ্গ লাভের অধিকার পেতেন। সভ্য জাতির রীতিনীতিই আলাদা। 
ফিজিওলজি অফ টেস্ট' (মূল ফরাসিতে যার নাম 'ফিজিওলজি দ্যু গু') যখন ছাপা হল, রসিকজন তার জয়জয়কার করে বললেন, কোনও ভাষায়ই এর তুলনীয় কোনও বই লেখা হয়নি। বইটির অন্যতর সম্পদ সূত্রাকারে জ্ঞানগর্ভ সুচিন্তিত মন্তব্য, অ্যাফোরিজমস্ জীবন ও জগৎসংক্রান্ত নানা বিষয় নিয়ে, ইতিহাস, দর্শন ইত্যাদি সভা মানুষের জীবনে বিভিন্ন মূল্যবান সব দিক সম্বন্ধে অসাধারণ সব বক্তব্য, যার কেন্দ্রে রয়েছে সুখাদ্য বিষয়ক গভীর চিন্তা। ফরাসি ছাড়া আর কোনও জাতির কলম থেকে এমন জিনিস বের হতে পারত। না। প্রথম পরিচ্ছেদেই আছে কিছু জ্ঞানগর্ভ সুভাষিতাবলী। দু'-একটি উদাহরণ দিই, 'জন্তুরা গোগ্রাসে গেলে। মানুষ ভোজন করে। শুধু বিদগ্ধ মানুষই জানে কী ভাবে আহার করতে হয়।' 'একটি নতুন সুখাদ্য আবিষ্কারে মানুষের যে সুখ বৃদ্ধি হয় একটি নতুন তারা আবিষ্কারের আনন্দ তার সঙ্গে তুলনীয় না।' 
ফরাসি সভ্যতায় আহার নিয়ে লঘুচিত্ততার কোনও সুযোগ নেই। আলোচা গ্রন্থটি উচ্চাঙ্গ সাহিত্য এবং তত্ত্বালোচনার আঙ্গিকে রচিত। একটি অধ্যায়ের নাম 'ভাজাতত্ত্ব' (ঞযবড়ৎু ড়ভ ঋৎুরহম)। প্রথম পরিচ্ছেদটির সূচনা এইভাবে: 'মে মাসের রৌদ্রোজ্জ্বল একটি দিন। আনন্দ-নগরী প্যারিসের ধোঁয়ায় মসীকৃত ছাদগুলির উপর সূর্যের নরম ছায়া এসে পড়েছে। অত্যাশ্চর্য ঘটনা-শহরের রাস্তায় কোনও ধুলা বা কাদা ছিল না।' আহা, এ কি রন্ধন বিষয়ক বইয়ের ভূমিকা। 
বইটি বৈজ্ঞানিক তথা সাহিত্যিকের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লেখা। আলোচনার সুর কোনও মতেই লঘু না। লেখক এখানে বহু ভূমিকায় অবতীর্ণ-পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, শারীরতত্ত্ব, কিছুই আলোচনা থেকে বাদ পড়েনি। রচনার কোনও অংশই পাণ্ডিত্যবর্জিত নয়। ভোজনরসিকতা (মড়ঁৎসধহফ রংস) সম্পর্কে একটি সুচিন্তিত সারবান পরিচ্ছেদ আছে। জিনিসটা যে গোগ্রাসভোজনের সমার্থক নয় সে বিষয়ে উনিশ শতকের অভিধান-রচয়িতারা নাকি যথেষ্ট সচেতন ছিলেন না। একথা ভেবে লেখক মর্মাহত। যাঁরা তিতিরের একটি ডানা সাবলীল ভঙ্গিতে কনিষ্ঠাঙ্গুলির ছোঁয়া বাঁচিয়ে অতি উচ্চাঙ্গের কোনও মধ্যের সাহায্যে উদরস্থ করেন, অভিধান রচয়িতারা সেই মহান ভোজনরসিক মণ্ডলীর সভ্য নন, এ বিষয়ে লেখক নিঃসন্দেহ তাঁরা নাকি সভ্য সামাজিকতার কেন্দ্রে যে ভোজনরসিকতা 'যার প্রকাশে এথেন্সের সুরুচি, রোমের বিলাসিতা, ফ্রান্সের সূক্ষ্ম রুচিবোধ একত্র হয়েছে, যার সেবায় সুষ্ঠু পরিকল্পনা, ভোজনে পরম উৎসাহ আর জ্ঞানসমৃদ্ধ বিচারবোধ হাত মিলিয়েছে... যে-প্রবণতা আমাদের শুদ্ধতম আনন্দের মূলে' তার সঙ্গে অপরিচিত। 
এই রসিকতার প্রশস্তিতে লেখক আরও বলেছেন, 'ভোজনরসিকতা সেই আবেগময় অথচ যুক্তিপূর্ণ সর্বব্যাপী ভালমন্দ বিচারের প্রবৃত্তি যা আমাদের স্বাদেন্দ্রিয়কে তৃপ্ত করে। এ প্রবণতা আতিশয্যের শত্রু। বদহজম বা মাতলামি দোষে দুষ্ট ব্যক্তি রসিকদের তালিকা থেকে পত্রপাঠ বহিকৃত হন।' 'নৈতিক দিক থেকে দেখতে গেলে, ভোজনরসিকতা ঈশ্বরের আদেশ মানারই অন্যতর দিক। যখন তিনি আদেশ দিলেন বেঁচে থাকতে হলে আহার করো, তিনি ক্ষুধা দিয়ে আহারের প্রেরণা দিলেন, সুস্বাদ সৃষ্টি করে উৎসাহ জোগালেন আর ভোজনজনিত সুখ দিয়ে আমাদের পুরস্কৃত করলেন।' 
ভোজনরসিকতার আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক অবদান বিষয়ে লেখক বিশেষ সচেতন। সুখাদ্য আর লোকোত্তর পানীয় বিনিময়ের ভিত্তিতে পৃথিবীর সব দেশ একনীড় হয়েছে। ওই প্রবণতাই খাদ্য-পানীয় উচ্চ বা নিম্নস্তরের এবং সে অনুযায়ী তার মূল্য নির্ধারণ করছে। লক্ষ লক্ষ চাষি, শিকারি, মৎস্যজীবী অন্নসংস্থান হচ্ছে এর কৃপায়। হাজার হাজার রাঁধুনি, মিষ্টান্ন প্রস্তুতকারী, রুটি ইত্যাদি নিত্য প্রয়োজনীয় খাবার যাঁদের শিল্পকর্ম তাঁদের সম্বন্ধেও কথাটি সত্যি। 
এই প্রসঙ্গে আমার একটি বক্তব্য আছে। বিশ্বায়নের বামপন্থী প্রবক্তারা বলছেন-বাণিজ্য সম্বন্ধে সম্পূর্ণ মুক্ত নীতি চালু করতে হলে কোথাও সরকারি সাহায্য দিয়ে বিশেষ করে কৃষিভিত্তিক শিল্পগুলিকে জোরদার করে তৃতীয় বিশ্বের কৃষকদের বেহাল করা চলবে না। ভাল কথা। তাহলে ফ্রান্সের শ্যামপেন, কাসাঁব্যার চিজ, ইটালির প্রসুতো হ্যাম পৃথিবী থেকে লুপ্ত হয়ে যাবে, সম্ভবত সুইস এবং বেলজিয়ান চকোলেটও। সবিনয়ে আবেদন করছি আমাদের প্রজাতির এই অমূল্য সম্পদগুলি রক্ষার ভার যেন ইউনেস্কো গ্রহণ করেন। এদের অনুপস্থিতি মানব সংস্কৃতির দৈন্যদশা ঘটাবে। 
ব্রিয়া-সাভার‌্যা তাঁর বিচিত্র গ্রন্থে সুরুচিপূর্ণ গাম্ভীর্যর সঙ্গে ত্রিশটি বিষয়ের বৈজ্ঞানিক আলোচনা করেছেন। শুরু করেছেন আমাদের বিচিত্র চেতনাবোধ নিয়ে। দ্বিতীয় পরিচ্ছেদেরই বিষয়-সুরুচি। লেখক ফরাসি। সুতরাং তৃষ্ণা এবং তার শান্তি পানীয় বিষয়েও বিদগ্ধ আলোচনা আছে। তৃপ্তিদায়ক ভোজনের জন্য আবশ্যক জীর্ণ করার শক্তি, বিশ্রাম, সুনিদ্রা। সুতরাং তারাও বাদ পড়েনি। সারা জীবন সুখাদ্য গ্রহণের অস্তে আছে মৃত্যু। সে বিষয়েও একটি পরিচ্ছেদ। তার প্রথমেই একটি ঋষিজনোচিত ল্যাটিন উদ্ধৃতি, বী বংঃ, হড়হ ঢ়ড়বহধ, ঢ়বৎরৎব'। 'মৃত্যু শাস্তি নয়, নিয়ম'। তাঁর এক আত্মীয়ার মৃত্যুর দৃশ্য লেখক বর্ণনা করেছেন। অতি বৃদ্ধ মানুষটিকে তুলে ধরে নিজের ভাণ্ডার থেকে শ্রেষ্ঠ মদিরাটি তাঁর ঠোঁটের কাছে নিয়ে গেলেন। একটু পান করে তাঁর একদা অতি সুন্দর চোখ দু'টি আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে উঠল। আত্মীয়া বললেন, 'আমার মতো দীর্ঘদিন যদি বেঁচে থাকো তবে দেখবে মৃত্যু একটা প্রয়োজন হয়ে পড়ে, ঠিক ঘুমের মতন।' সুসভ্য জীবনদর্শনের দান গভীর অন্তর্দৃষ্টি, সংস্কৃতিলালিত দেহমনের চরম সুখ ভোগ করার পর মৃত্যুকে বীরোচিত শান্তমনে আবাহন। রজোগুণকেন্দ্রিক জীবনের পূর্ণ পরিণতি।












সর্বশেষ সংবাদ
ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে কমিশন
কুমিল্লায় তিন দিনে গ্রেপ্তার ১৯ জন
অপারেশন ডেভিল হান্টে সারাদেশে গ্রেফতার আরও ৬০৭ জন
কুমিল্লার আদালতে এক যুবকের বিরুদ্ধে ৫ মামলা
নগরীর ২৪নং ওয়ার্ডে কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনা ও সম্মাননা ক্রেষ্ট বিতরণ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
অপারেশন ডেভিল হান্ট : কুমিল্লায় গ্রেপ্তার ১৩ জন
কুমিল্লায় ১৮০০ ফুট অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন
কুমিল্লায় দুই ইটভাটা বন্ধ ঘোষণা পানি ঢেলে নিভিয়ে দেওয়া হলো চুল্লির আগুন
কুমিল্লায় দেড় কোটি টাকার ভারতীয় মোবাইল ফেলে পালিয়েছে মালিক
চান্দিনায় ঘুড়ি আনতে ১৩২ কেভি লাইনের তারে উঠে যুবক!
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২