পবিত্র রমজান মাস শুরু হতে আর মাত্র ১৭-১৮ দিন বাকি। এরই মধ্যে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী বাজার অস্থির করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। রোজায় বেশি প্রয়োজন হয় ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, ডাল, পেঁয়াজ, খেজুরসহ আরো কিছু পণ্যের। অসাধু ব্যবসায়ীরা এসব পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করেন।
প্রতিবছর রমজান মাসের আগে আগে এমনটিই দেখা গেছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু সরকারও সচেতন। সরকার ভ্যাট কমিয়েছে, আমদানি শুল্ক কমিয়ে আমদানিকে উৎসাহিত করছে।
সরকারিভাবেও অনেক পণ্য আমদানি করা হচ্ছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, অনেক পণ্যই রমজান মাসের চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত আমদানি হয়ে গেছে। অনেক পণ্য পথে রয়েছে। শিগগিরই সেসব দেশে পৌঁছে যাবে।
ফলে রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ার যৌক্তিক কোনো কারণ নেই।
কিছুদিন ধরেই ভোজ্যতেলের কিছুটা সংকট দেখা যাচ্ছে। ভোজ্যতেল আমদানিকারক ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা বলছেন, আগের বছরগুলোর তুলনায় তাঁরা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাজারে তেলের সরবরাহ বাড়িয়েছেন। গত জানুয়ারি মাসে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ। কাজেই বাজারে সংকট থাকার কোনো কারণ নেই।
তাঁদের মতে, মাঠ পর্যায়ে কেউ কেউ অতিরিক্ত মজুদ করে থাকতে পারে এবং সে কারণেই এমন সংকট দেখা দেখা দিতে পারে। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) হিসাবে রোজায় বাজারে ভোজ্যতেলের চাহিদা থাকে প্রায় তিন লাখ টন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্যে দেখা যায়, জানুয়ারি মাসের প্রথম ২৯ দিনে সয়াবিন ও পাম তেল আমদানি হয়েছে প্রায় চার লাখ টন। আবার সয়াবিন তেল তৈরির কাঁচামাল সয়াবিন বীজ আমদানি করা হয়েছে তিন লাখ টন। তা থেকেও পাওয়া যাবে প্রায় অর্ধলাখ টন সয়াবিন তেল। কাজেই রোজায় সংকট হওয়ার কোনো কারণই নেই। একইভাবে রোজায় চিনির চাহিদা তিন লাখ টনের মতো। জানুয়ারি মাসেই এসেছে এক লাখ ৫৩ হাজার টন। বন্দরে এসে ভিড়েছে আরো প্রায় এক লাখ টন চিনিসহ জাহাজ। ফেব্রুয়ারি মাসেও চিনি আমদানি করা হচ্ছে। বিশ্ববাজারে পণ্যটির দামও কমছে। ছোলা, ডালসহ অন্যান্য পণ্যও পর্যাপ্ত পরিমাণে আমদানি করা হয়েছে এবং হচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন যথার্থই বলেছেন, ‘আসন্ন রমজান মাসে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়বে না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বাজারের সঙ্গে যারা অংশীজন আছে, তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে বাজারকে আমরা ব্যবস্থাপনার চেষ্টা করছি।’
বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, বাজারে পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি বাজার মনিটরিংয়ে জোর দিতে হবে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কোনো সিন্ডিকেট যাতে বাজার অস্থির করার সুযোগ না পায়, অন্যায় মুনাফা না করতে পারে—সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। পাশাপাশি ট্রাক সেল, ওপেন মার্কেট সেল, ফ্যামিলি কার্ড ও অন্যান্য মাধ্যমে বাজারে সরকারের হস্তক্ষেপ বাড়াতে হবে।