নিজস্ব
প্রতিবেদক : উপরের কোনো চাপের ‘তোয়াক্কা’ না করে আগামী জাতীয় নির্বাচনে
ডিসিদের ষোলো আনা দায়িত্ব পালন ও আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ করতে ইসির তরফে
নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার-সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, এখন থেকেই ডিসিদের নির্বাচনের কাজে নেমে পড়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে ডিসি সম্মেলনে নির্বাচন কমিশন-ইসির আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন সিইসি।
রাজধানীর
ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত শেষ দিনে নির্বাচন কমিশনের আলোচনা হয়।
এবারই প্রথম ডিসি সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ডিসি
সম্মেলনে আলোচনা শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, “যখন জাতীয় নির্বাচন
হয়, ডিসিরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন। পুরো প্রক্রিয়াটা,
আইনের প্রয়োগ থেকে শুরু করে সবকিছুতে তাদের সম্পৃক্ততা থাকে।
“আমরা
তাদেরকে বলেছি এই যে সামনে যে নির্বাচনটা আসছে, নিজ উদ্যোগে আইনের
সর্বোচ্চ প্রয়োগ করবেন। আমরা নির্বাচন কমিশন থেকে আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ
করব। আপনাদের ক্ষমতা আইন দিয়েছে, এর সর্বোচ্চ প্রয়োগ করবেন।”
আচরণবিধি
লঙ্ঘন হচ্ছে- সাংবাদিক বা কেউ একজন অভিযোগ করলেন, তার ভিত্তিতে ব্যবস্থা
নেওয়া নয়। ব্যবস্থা নিতে হবে নিজেরা উদ্যোগী হয়ে, ডিসিদের এই নির্দেশনা
দেওয়ার কথা বলেছেন নাসির উদ্দিন।
“প্রো-অ্যাকটিভলি নট রি-অ্যাকটিভলি। যে কোনো ধরণের নির্বাচনী অপরাধ যাতে ট্রেস করা হয় সেই মেসেজটা দিয়েছি।”
ডিসিদের
দিক থেকে আলোচনার বিষয়ে তিনি বলেন, “ডিসিরা কিছু অসুবিধার কথা বলেছেন,
পার্টিকুলারলি স্টোরেজ প্রবলেম, এগুলো বলেছেন। আর এনআইডি নিয়ে মানুষের
হয়রানির কিছু কথা বলেছেন।”
ডিসিরা যে অসুবিধার কথা বলেছেন সেগুলো স্পষ্ট করা হয়েছে এবং সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছেন বলে তুলে ধরেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
“আমি
প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে তো সহযোগিতা চাইতে হয়, আমাদের কমিশনার
স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ডিসিরা এই সহযোগিতা করতে বাধ্য, তিনি আইন পড়ে
শুনিয়েছেন।”
রিটার্নিং অফিসাররা যারা থাকেন, তারা এটা কোনো দয়া নয়, আইনত
করতে বাধ্য বলে তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা চাই আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ এবং
এই আইনের মাধ্যমে ফ্রি ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন দিতে চাই।”
সিইসি
বলেন, “আমরা যে ওয়াদা করেছি সেটা পালন করতে চাই। আমরা জেলা প্রশাসক এবং
বিভাগীয় কমিশনার, এটা যার যার ভূমিকা, যাতে ষোলো আনা পালন করেন সেটা আমরা
তাদের বলেছি।”
এখন থেকেই তাদের নির্বাচনের কাজে নেমে পড়ার নির্দেশন
দেওয়া হয়েছে তুলে ধরে তিনি বলেন, “নির্বাচনের দিন থেকে নয় এখন থেকে
নির্বাচনের কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত হয়ে যান। আপনারা যেখানে যাবেন, বিভিন্ন
সভা সমাবেশে, সেখানেই বক্তব্যের একটা অংশ যাতে নির্বাচনের অংশ থাকে।
“অ্যাওয়ারনেস
যাতে থাকে, কারণ মানুষ তো নির্বাচনের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। আস্থার
সংকট আছে। মানুষের ভোটের অধিকার সম্পর্কে যখন জনসচেতনতামূলক বক্তব্য
রাখবেন, তাহলে এর একটা প্রভাব পড়বে।”
সুন্দর নির্বাচন উপহার দেওয়াকে
যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করে ডিসিদের দায়িত্ব পালনের বিষয়ে আলোচনা তুলে ধরে
নাসির উদ্দিন বলেন, “আমরা অনুরোধ করেছি আপনারা আজকে থেকেই আমরা যেমন
নির্বাচন কমিশন নির্বাচন নিয়ে কাজ করছি, আপনারাও আমাদের সহযোদ্ধা। আপনারা
এখন থেকে কাজ শুরু করে দেন। উনারা কথা দিয়েছেন সেভাবে কাজ করবেন।”
অভিযোগের
খেলা বাদ দিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “অতীতে কী হয়েছে সেটা
নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করে আমাদের নিজেদের কাজ ফেলে রাখতে পারব না। তাদের (ডিসি)
বলেছি, সামনের দিকে আগান, হাতে হাত রেখে এক সাথে কাজ করব। তারা ওয়াদা
দিয়েছেন।”
আগে ডিসিদের ওপর নানা ধরনের চাপ আসা কথা তুলে ধরে প্রধান
নির্বাচন কমিশনার বলেন, “আমি উনাদের নিশ্চিত করেছি, উপর থেকে অবৈধ কোনো চাপ
দিব না, আমরা আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ করব, আমাদের যত ক্ষমতা আছে। আপনারা
আপনাদের ক্ষমতার সর্বোচ্চটা প্রয়োগ করবেন। অন্যায় কোনো চাপ আপনাদের উপর
দিব না।
“উপর থেকে কোনো চাপ আসলে সেটা সহ্য করবো আমরা, আপনাদের কোনো
চাপের মধ্যে থাকতে হবে না। আপনারা শুধু আইন অনুযায়ী, আইনে আপনাদের যে
ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, সেই ক্ষমতার সর্বোচ্চ প্রয়োগ করবেন।”
অতীতে ডিসিরা
ক্ষমতাটা সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারেননি তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা
ছেলেবেলায় পড়েছি- ডিসিরা হলেন সরকারের চোখ, হাত ও মুখ৷ এই ডিসিদের চোখ দিয়ে
সরকার দেখে, মুখ দিয়ে সরকার বলে এবং হাত দিয়ে সরকার কাজ করে৷ কিন্তু এই
চোখ, মুখ এবং হাত আজ নষ্ট হয়ে গেছে।”