পরিবেশ
অধিদপ্তর ও বিশ^ব্যাংক ঢাকার বায়ুদূষণের উপর ২০১৯ সনে একটি গবেষণা
পরিচালনা করার রেকর্ড আছে। ঐ গবেষণায় পাওয়া যায় বায়ুদূষণের তিনটি কারণ আছে।
তা হলো Ñযানবাহনের ধোঁয়া ও ধুলা, কাজের সৃষ্ট ধুলা, ইটভাটার ধোঁয়া।
গবেষণার তথ্যের সঙ্গে বাস্তবের হুবহু মিল খুজে পাওয়া যায়। রাজউকের
তথ্যানুসারে বছরে ৫০০ টি নতুন ভবন তৈরি হয়। নতুন ভবন নির্মান তাদের অনেকেই
ধুলার উৎস প্রতিরোধ না করে ভবনসমূহ নির্মাণ করেন। শীতের সময় প্রতিবছরই
ঢাকার সড়কে বিভিন্ন সংস্থা সমূহের খোরাখুরি চলে। এগুলো থেকে প্রচুর ধুলা
তৈরি হয়। পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ফুটপাত ও নর্দমা সংস্কারের জন্য প্রায় ৩০০
কিলোমিটারের বেশি সড়কে খুড়াখুড়ি চলে। এসব সড়ক উন্নয়নের কাজ ঠিকাদাররা ধুলা
নিয়ন্ত্রণ করে করার কথা থাকলেও তারা তা করছেন না বা মানছেন না। ঢাকার
আশেপাশে অনেক ইটভাটা রয়েছে যারা ধোয়া উড়িয়ে বাতাসকে নষ্ট করছে। সরকার
নির্মাণ কাজে ইটের বদলে ব্লক এবং সিমেন্টের বদলে স্প্যাশাল গাম ব্যবহারের
নির্দেশ দিলেও কার্য্যত সেখান থেকে কোন সুফল আসেনি। একটি বিশেষ মতে
(বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি) ঢাকার এক
তৃতীয়াংশ মোটরযান দূষণের কারণ। তাছাড়া ঢাকার গাড়ীতে নিম্নমানের জ¦ালানির
ব্যবহার বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ। ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ওনার্স এসোসিয়েশনের
মতে ঢাকার আশপাশের এলাকায় ২০ হাজার ট্রাক, বালু, ইট-সিমেন্ট, পাইলিং এর
কাদামাটি, নির্মাণ এলাকার মাটি, রেডিমিক্স কংক্রীট ব্যবহার হয়। এ ট্রাকগুলো
মোহাম্মদপুর, আমিনবাজার, গাবতলী, আব্দুল্লাপুর, বছিলা, পোস্তাগোলা,
শ্যামপুর, সারুলিয়া, কাঁচাপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বালু ও অন্যান্য
নির্মাণসামগ্রী নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চলাচল করে। অভিজ্ঞজনের মতে
নভেম্বর মাস থেকে ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত ঢাকার বাতাস বেশি অস্বাস্থ্যকর
থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার ধুলাদূষণ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। এটা নিয়ে
সিটি কর্পোরেশন একাধিক সভা করেছে এবং সার্বিক কার্যক্রম তদারকি করতে একটি
কমিটিও গঠন করেছে। আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে কার্যক্রম তদারকি করা হবে বলে
জানা যায়। নাখালপাড়াÑতেজগাঁও রুটে সম্প্রসারণের কাজ চলছে বিধায় খুড়াখুড়ি
চলছে। সম্পূর্ণ এলাকা ধুলায় ধুলায়িত। আব্দুল্লাপুর থেকে ঢাকাÑআশুলিয়া
এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পে একই অবস্থা বিরাজ করছে। সাভার থেকে শ্যামলী,
মীরপুর, মহাখালী, উত্তরা ও পুরাণ ঢাকার সবখানে ধুলার রাজত্ব কায়েম হয়েছে।
একই অবস্থা রাজধানীর মোহাম্মদপুর বেরিবাধ থেকে বছিলা পর্যন্ত সড়কে
বিরাজমান। পরিস্কার কাপড় পড়ে ঐসব সড়কে চললে তা পরিস্কার না করে আবার
ব্যবহার করার কোন সুযোগ নাই।
নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারী ও ফেব্রুয়ারী
এই চারমাসে ঢাকার বাতাসের মান খুব খারাপ থাকে। বায়ুদূষণ বাড়ার সঙ্গে শিশুসহ
সব বয়সী মানুষের শ^াসকষ্টসহ এজমার ও বিভিন্ন ধরনের শ^াসতন্ত্রের রোগের
প্রাদুর্ভাব বাড়ে। রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে এ সংক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায়
দ্বিগুণ হয়েছে। যেসব সংস্থা ঢাকার আবহাওয়া, ধূলা ও বায়ুদূষণ তদারকিতে
নিয়োজিত সেগুলো হচ্ছে Ñঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, পরিবেশ
অধিদপ্তর, রাজউক, মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ এবং পানি, বিদ্যুৎ গ্যাস সেবা
সংস্থাসমূহ। এর মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর ব্যতীত সকল সংস্থাগুলো সেবা
নিশ্চিতের নামে ও উন্নয়ন কাজের উছিলায় বায়ুদূষণ ঘটায়। পরিবেশবিদরা বলেন
কাজের সময় খুব সতর্কতার সাথে ঢেকে কাজ করার বিধান রয়েছে। পাশাপাশি ধুলা
নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত না হলে এক বা দুদিন অন্তত পানি ছিটানো এবং
নির্মাণসামগ্রী ঢেকে গাড়িতে পরিবহন করার কথা। বায়ু ও ধুলাদূষণ যেন না হয়
তার জন্য ঠিকাদারদের বাড়তি বরাদ্দও রয়েছে। এসব দেখভালের দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত
প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, নালিশ আছে কিন্তু প্রতিকার
নাই।
অনেকেই মুখে মাস্ক ও চোখে চশমা থাকা অবস্থায় মোটর সাইকেলে অফিসে
যাওয়ার সময় চোখে একধরনের ধুলা ঠুকে যায়, চোখ খোলা যায় না, পানি পড়তে থাকে।
ঢাকায় সব সড়কে যাতায়াতকারী সাধারণের এ দশা থেকে রেহাই দিতে পাড়ছেনা
তত্ত্বাবধায়করা। দিনে দিনে ঢাকা হয়ে পড়েছে বসবাসের অনুপযোগী। ঢাকার বাতাসে
ভারী ধূলিকণার পরিমাণ বাড়তে বাড়তে শীর্ষে পৌঁছেছে দূষিত বায়ুর তালিকায়।
সুইস বায়ুমান পরীক্ষার সংস্থা আইকিউ-এর শহরভিত্তিক এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স
Ñএ (একিউআই) দূষিত শহরের তালিকায় ঢাকা কখনো প্রথম কখনো দ্বিতীয় বা তৃতীয়
অবস্থানে থাকে এর থেকে নিচে নামছেই না। নগরের সড়কসহ যেটুকু খোলা জায়গা আছে
তাও ধূলাবালির দখলে, বাতাসের সঙ্গে দূষিত ধূলা মিশে চরম অস্বস্তিকর অবস্থা
সৃষ্টি করে। স্বস্তিতে শ^াস নেয়া নগরবাসীর জন্য যেন ভাগ্যের ব্যাপার।
লেখক: সাবেক অধ্যক্ষ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ