জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক বৈঠকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল আলাস্কা থেকে গ্যাস বহন করে এশিয়ায় মার্কিন মিত্রদেশে তা সরবরাহ করা। প্রায় এক দশকের পুরোনো এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে এশিয়ায় জাপানের মতো মিত্রদের জন্য মধ্যপ্রাচ্য নির্ভরতা কমাতে চায় ওয়াশিংটন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই সূত্রের বরাতে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
ওই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্পে যুক্ত হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা।
ওই বৈঠকের পর ট্রাম্প একাধিকবার প্রকল্পের কথা উল্লেখ করলেও ইশিবার পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এমনকি আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতেও ওই প্রকল্পের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়নি।
এ বিষয়ে এক ডজনের বেশি মার্কিন ও এশীয় কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে রয়টার্স। তাদের বক্তব্যে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগীদের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক দৃঢ় করতে জীবাশ্ম জ্বালানির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র।
শুল্ক আরোপ এবং জ্বালানি আমদানি নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে এশীয় দেশগুলো। মার্কিন কর্মকর্তারা এর সুযোগ নিচ্ছেন বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। যদিও আলাস্কা এলএনজি প্রকল্পের ব্যয় ও অবকাঠামোগত চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তবুও জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ানের মতো দেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও বেশি গ্যাস আমদানি করতে আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে চাঙা করতে পারে এবং চীন ও রাশিয়ার প্রভাব সীমিত করতে সহায়তা করতে পারে।
ট্রাম্পের পরিকল্পনায় জাপানের অংশগ্রহণ একাধিক কারণে বাড়তি গুরুত্ব বহন করে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এলএনজি ক্রেতা দেশটি জ্বালানি অবকাঠামো খাতের অন্যতম বিনিয়োগকারী। পাশাপাশি জাপান ইতোমধ্যেই এলএনজি সরবরাহের একটি অন্যতম বাণিজ্য কেন্দ্র। ফলে মার্কিন এলএনজির সরবরাহ বৃদ্ধি পেলে দক্ষিণ এশিয়ার বাজারেও তার বিপুল চাহিদা সৃষ্টি হতে পারে।
রক্ষণশীল থিংক ট্যাংক হাডসন ইনস্টিটিউটে জাপান বিষয়ক প্রধান গবেষক কেন্নেথ ওয়েনস্টেইন বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের পরিকল্পনামাফিক সব অগ্রসর হলে জাপান হয়ে দক্ষিণ কোরিয়া এবং পর্যায়ক্রমে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতেও মার্কিন এলএনজির সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে। ফলে এই অঞ্চলে জ্বালানি নির্ভরতার কাঠামোতেই আমূল পরিবর্তন ঘটবে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী শনিবার এক যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সুলভ ও নির্ভরযোগ্য জ্বালানি সরবরাহের মাধ্যমে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ সম্মত আছে। বিবৃতিতে কোথাও আলাদাভাবে আলাস্কার নাম উল্লেখ করা হয়নি।
হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র ব্রায়ান হিউজ বলেছেন, বিশ্বের অন্যতম বিশুদ্ধ এলএনজি উৎপাদনকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র। তাদের আশা, প্রাচুর্যে ভরপুর মার্কিন তেল ও গ্যাস ক্রয়ে জাপানের বৃহত্তর ভূমিকা থাকবে।
ইশিবা-ট্রাম্পের বৈঠক নিয়ে রয়টার্সের প্রশ্নের জবাব দিতে অসম্মতি জানিয়েছে জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এদিকে, বৃহস্পতিবার জাপানি সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়, সামনের মাসে ওয়াশিংটন সফরে যাচ্ছেন দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রী। ওই সফরে ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আরোপ থেকে গা বাঁচানো এবং মার্কিন এলএনজি ক্রয় বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।