কুমিল্লার
বাজারে সয়াবিন তেলের তীব্র সংকট চলছে। জেলা সদর থেকে উপজেলা সর্বত্র একই
চিত্র। পাইকারি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ তেল সরবরাহকারী কম্পানি থেকে তেল কিনতে
সাথে অন্তত ১০/১২টি পণ্য সামগ্রী কিনতে বাধ্য করায় অনেকে তেলের চালান কমিয়ে
এনেছেন। এতে খুচরা বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট ক্রমেই বাড়ছে।
সোমবার (৩
মার্চ) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নগরীর নিউ মার্কেট, রাজগঞ্জ, চকবাজার,
টমছমব্রিজ বাজারের অন্তত ৩০টি খুচরা দোকান ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
খুচরা
ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারী বাজার থেকে তেলের সাথে চাল, ডাল আটা, মশলাসহ
৮/১০ টি পণ্য কিনতে বাধ্য করার কারণে দোকানে তেল রাখেন না তারা।চকবাজারে
খুচরা দোকানে তেল কিনতে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বালুতুপার এলাকার গৃহিনী
ফেরদৌসী বেগম ও হাবিবা নাছরিন । তারা বলেন, চার-পাঁচটি দোকান ঘুরেও সয়াবিন
তেল না পেয়ে ফিরে যাচ্ছি।
মনে হচ্ছে তেলের বাজার একটি সিন্ডিকেট চক্র
নিয়ন্ত্রণ করছে। রমজানে এমন ভোগান্তি কাম্য ছিল না। সরকারের উচিত এসব
জনভোগান্তি দূর করতে কাজ করা। রাজগঞ্জ বাজারে সয়াবিন তেল নিতে আসা
অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা সালেহ আকরাম বলেন, সরকারের লোকজন টিভিতে
বক্তব্য দেয় তেলের সংকট নাই।কিন্ত দোকানে তো পেলাম না। তাই খোলা সয়াবিন
নিয়ে নিতে হলো। কুমিল্লা নিউ মার্কেটের খোকন স্টোরের মালিক মো. আলাউদ্দিন
বলেন, আমার দোকানে গত তিন মাস ধরে সয়াবিন তেল নাই, কম্পানির তেল নিলে তারা
তেলের সাথে এমন ১০/১২ টি পণ্য কিনতে বাধ্য করে। তেলের সাথে এমন কিছু পণ্য
দেয় যা মানুষের চাহিদা নেই। পোলাও চাল, সরিষা তেল, ডাল, আটা, মাংসের মসলা
দেয়।আমার দোকানে পোলাও চাল ২০ বস্তা জমেছে। পোলাও চাল তো প্রতিদিন বিক্রি
হয় না। এগুলো নষ্ট হচ্ছে। তাই এখন দোকানে তেল রাখি না।
একই কথা বলছেন
একই মার্কেটের বিসমিল্লাহ স্টোরের মালিক আনিছুর রহমান মারুফ, ব্যবসায়ী গণেশ
চন্দ্র সাহা, চকবাজারের আনোয়ার স্টোরের মো.আনোয়ার হোসেনসহ অন্তত ৩০ জন
ব্যবসায়ী। তাদের অভিযোগ সামান্য লাভের আশায় চাহিদা কম এমন পণ্য এনে আমরা কি
করবো। তাই তাই লোকশানের আশংকায় সয়াবিন তেল রাখছি না।
চকবাজারের
মেসার্স ইসলাম স্টোরের মালিক আনোয়ার হোসেন বলেন, দেড় মাস ধরে দোকানে সয়াবিন
তেল রাখি না ৷ কম্পানি তেল নিতে হলে আটা, সরিষা তেল, পোলার চাল, সুজি,
মসলাসহ অন্তত ৮/১০ টি পণ্য নিতে বাধ্য করা হয়। তাই সয়াবিন তেল রাখি না।
চকবাজারের
তীর কম্পানির ডিলার হীরেন চন্দ্র সাহা ট্রেডার্সের মালিক বিভূতিভূষণ সাহা
বলেন, কম্পানি এমন নিয়ম করেছে আমাদের করার কিছু নেই, আমার দোকানও তেল নেই।
আপনি যা বলার কম্পানির ম্যানেজার আছে তার সাথে কথা বলুন। তার বক্তব্যই আমার
বক্তব্য।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সিটি গ্রুপের কুমিল্লা জোনাল
ম্যানেজার মো. হারেস বলেন, আমরা কখনই ব্যবসায়ীদের তেলের সাথে অন্যান্য পণ্য
নিতে বাধ্য করি না। তবে বর্তমানে মার্কেটে তেলে ঘাটতি চলছে। এখন আমি
চেষ্টা করছি কুমিল্লায় ঘাটতি পূরণ করতে।
যারা তেলের সাথে অন্যান্য পণ্য
নিতে বাধ্য করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে কুমিল্লা ভোক্তা
অধিকার অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. কাউছার মিয়া বলেন, বাজারে বোতলজাত
তেলের সংকট দেখা দিয়েছ। তবে পর্যাপ্ত খোলা তেল আছে। আগামীকাল (মঙ্গলবার) এই
বিষয়ে চকবাজার বেলা ১১টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে তেলের ডিলারদের
সঙ্গে একটি সভা হওয়ার কথা রয়েছে। ওই সভায় সয়াবিন তেলের সংকট সমাধান করার
চেষ্টা করা হবে। যারা তেলের সাথে অন্যান্য পণ্য নিতে বাধ্য করবে তাদের
বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে সোমবার সন্ধ্যায় কুমিল্লা জেলা
প্রশাসক মো. আমিরুল কায়সার কুমিল্লা নগরীর বিভিন্ন বাজার পরিদর্শনে যান। এ
সময় তিনি দ্রব্যমূল্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যবসায়ীদের নির্দেশ দেন।