দেশের অর্থনীতিতে এখনো অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদহারের কারণে অনেক শিল্প-কারখানা চলতি মূলধনের কঠিন সংকটে রয়েছে। এরই মধ্যে কয়েক শ শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। গত দেড় দশকে সীমাহীন লুটপাটের মাধ্যমে দেশকে জরাজীর্ণ করে ফেলা হয়েছিল।
দেশের ব্যাংকিং খাতের রীতিমতো মেরুদণ্ড ভেঙে ফেলা হয়েছিল। এর মধ্যেও কিছু প্রাপ্তি, কিছু অর্জন আমাদের উৎসাহিত করে। শঙ্কা কাটিয়ে রপ্তানি আয়ে সুখবর এসেছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, দেশের পণ্য রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় রয়েছে।
গত মাসে ৩৯৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের ফেব্রুয়ারির তুলনায় ২.৭৭ শতাংশ বেশি।
গত মঙ্গলবার পণ্য রপ্তানির হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। পরিসংখান অনুযায়ী চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে অর্থাৎ জুলাই-ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানি হয়েছে তিন হাজার ২৯৪ কোটি ডলারের পণ্য।
গত অর্থবছরের একই সময়ে এই রপ্তানির পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৯৮০ কোটি ডলার। সেই হিসাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে রপ্তানি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ১০.৫৩ শতাংশ। ইপিবির তথ্য বলছে, গত ফেব্রুয়ারিতে তৈরি পোশাক, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, প্লাস্টিক পণ্য, হিমায়িত খাদ্য এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে দুই হাজার ৬৮০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১০.৬৪ শতাংশ বেশি।
শুধু ফেব্রুয়ারিতে ৩২৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের ফেব্রুয়ারির তুলনায় ১.৬৬ শতাংশ বেশি। দেশের শীর্ষ রপ্তানি আয়ের খাত তৈরি পোশাক থেকে ফেব্রুয়ারিতে আয় এসেছে ৩২৪ কোটি ৪৪ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১.৬৬ শতাংশ। এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩১৯ কোটি ডলার। নিট পণ্য রপ্তানি থেকে এ সময় ১৫৯ কোটি ২৭ লাখ ডলার আয় এসেছে। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩.৭৭ শতাংশ। ওভেন পোশাক রপ্তানি খাত থেকে আয় এসেছে ১৫৯ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। আগের বছর এই খাতের আয় ছিল ১৫৯ কোটি ১৬ লাখ ডলার। কৃষিপণ্য রপ্তানি থেকে ছয় কোটি ৮৬ লাখ ডলার আয় এসেছে। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৪.৩৭ শতাংশ। প্লাস্টিক পণ্যে প্রবৃদ্ধি ৭.৯৫ শতাংশ। আয় হয়েছে দুই কোটি ১৮ লাখ ডলার।
আমরা জানি, রপ্তানি আয় বাড়ানোর জন্য আমরা তৈরি পোশাক খাতের ওপর নির্ভরশীল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রপ্তানিতে একক খাত নির্ভরতার কারণে যেকোনো সময় ঝুঁকিতে পড়বে দেশের রপ্তানি আয়। কাজেই আমাদের এখন রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণের উপযুক্ত উদ্যোগ নিতে হবে। রপ্তানি বহুমুখীকরণ বা বহুমুখী রপ্তানির উপাদান নিয়ে কাজ করতে হবে। রপ্তানি বহুমুখীকরণের প্রধান শর্ত পণ্য বহুমুখীকরণ। পণ্য বহুমুখীকরণ ও রপ্তানিযোগ্য পণ্যের নতুন বাজার খুঁজে বের করতে বা নতুন বাজার সৃষ্টি করতে আমাদের বৈদেশিক মিশনগুলোকে কাজ করতে হবে। বিকল্প ও নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে।
রপ্তানি সাফল্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমে। ফেব্রুয়ারিতে পণ্য রপ্তানি বেড়েছে, এটি আমাদের জন্য বড় সুখবর। আমাদের এখন রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে। বিকল্প ও নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে। গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানিসহ অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। ব্যাংকঋণসহ পুঁজির জোগান বৃদ্ধি ও সহজলভ্য করতে হবে। আমরা চাই, বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত থাকুক। বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধির এই ধারা আগামী দিনেও অব্যাহত থাকবে এবং উত্তরোত্তর তা আরো শক্তিশালী হবে-এটাই আমাদের প্রত্যাশা।