আলাহামদু
লিল্লাহ। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যাঁদেরকে তৌফিক দিয়েছেন তাঁরা যাকাত আদায়
করবেন। যাকাত একটি ফরজ ইবাদত সম্পদশালীদের জন্য। যাকাতের দ্বারা সম্পদ
পবিত্র হয় এবং সাথে সাথে সম্পদের পরিমান বৃদ্ধিও পায়। যাকাত সবার মাঝে
সাম্যতা ও মানবতা তৈরী করে। যাকাতের মাধ্যমে ধনী গরীবের ব্যাবধান কমিয়ে
মানুষ একে অপরের প্রতি ভালবাসার বন্ধন তৈরী হয়। আর যাকাতের মূল উদ্দেশ্যও
তাই। কিন্তু আমরা যাকাতকে করে ফেলেছি একটি লোক দেখানো ইবাদত। মহান আল্লাহর
দরবারে কবুল হওয়ার প্রতিযোগিতার পরিবর্তে উঠে পড়ে লেগে যাই ভাইরাল হওয়ার
প্রতিযোগিতায়। ফেইসবুকে শুধু ছবি তোলার হিড়িক। আসতাগফিরুল্লাহ।
আসলে
আমরা জাগতিক দিক নিয়ে এত বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছি যে, আমার প্রত্যেকটা
কিছুতেই খুজি শুধু আমাকে কয়জন চিনতে পারলো, কয়জন দেখলো আমার দান? না না না।
যাকাতের পদ্ধতি এমনটি নয়। যাকাত দিতে হবে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।
চাই সেটা অর্থ বা পন্য যাই হোক না কেন। লম্বা লাইন লাগিয়ে, মিডিয়া কভারেজের
ব্যবস্থা করে বড় ছবি বা ভিডিও করে প্রচার প্রসার চালানো আমাদের অভ্যাসে
পরিনত হয়েছে। অনেক সময় দেখা যায় আমার সামান্য দানের জন্য অনেক গরীব অসহায়
লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। আবার কখনোও কখনোও দেখা যায় নির্দিষ্ট
দারোয়ানের লাঠির আঘাতে আহত হয়ে ঐ যাকাত গ্রহিতা ব্যাক্তি নিজ প্রাণ নিয়ে
ছুটে পালান। অথচ এমনটি হবার কথা নয়। ইসলাম এই আদেশ দেয়না।
যাকাত দিবেন
শান্তিপূর্ণভাবে। মানুষের সন্মান বজায় রেখে। হোক ঐ যাকাত গ্রহিতা গরীব।
তারপরও তার সন্মানের ও জানের প্রতি খেয়াল রাখা ধনীদের অবশ্য কর্তব্য তাই
নিজে খোঁজ খবর নিয়ে সর্ব প্রথম শুরু করবেন ০১. নিজ ভাই বোন, আত্মীয়
স্বজনদের মাধ্যমে। যদিও কোন কারণে তাঁদের সাথে মনমালিন্যতা হয়ে থাকে।
তারপরও তাঁরা যাকাতের দিক দিয়ে প্রথম হক্বদার। তারপরেই আছে আপনার আমার ০২.
প্রতিবেশি। চাই সে যে ধর্মেরই হোক না কেন? এরপর মাদ্রাসা বা অন্য কোন খাত।
উপরের দুই খাতকে বাদ দিয়ে যদি আপনি আমি মাদ্রাসা বা অন্য কোথায় যাকতের অর্থ
ব্যায় করি তা যথাযথ হক্ক আদায় করা যাকাত হবেনা। প্রাধান্য দিতে হবে ঐ দুই
খাতকেই। এরপর অন্য কিছু। তাই যাকাত দিবেন মানুষকে কষ্ট না দিয়ে। গোপন রেখে।
যদিও কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রকাশ্যে দেওয়া জায়েজ দিয়েছে ইসলাম। সেটি হলো
অন্যকে উৎসাহিত করার জন্য। যাকাতের সত্যিকার বন্টন ও দান যদি আমাদের সমাজে
বাস্তবায়ন থাকত তাহলে একটি পরিবারও অভাবে থাকতনা।
এখানে আরেকটি কথা না
বললেই নয়। যাকাত দিতে হবে হালাল উপার্জন থেকে। হারাম উপার্জন থেকে যাকাত
দিলে যাকাত আদায় হবেনা। আর হারাম বা অবৈধ উপার্জন থেকে যাকাত দিয়ে ছাওয়াবের
নিয়্যত করলে তো ঈমানই থাকবেনা। ঠিক তেমনিভাবে মানুষকে জিম্মি করে অর্থ
উপার্জন করে সেখান থেকে যাকাত আদায় করলে হবেনা। চাই সেটা দ্রব্যমূল্যের
মাধ্যমে জিম্মি করে হোক বা অন্য যে কোন উপায়েই হোক না কেন।
তাই আসুন
একে অপরের সুখ দুঃখ ভাগাভাগি করে সবাই মনবিকতার চর্চার মাধ্যমে কাধে কাধ
মিলিয়ে এই ধরাধামকে শান্তিময় করে তুলি। মহান রবের দরবারে এই হলো প্রার্থনা।
প্রধান ইমাম ও খতীব, কান্দিরপাড় কেন্দ্রিয় জামে মসজিদ ও কেন্দ্রিয় ঈদগাহ, কুমিল্লা।