অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে এখনো প্রধান চ্যালেঞ্জ দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা। সারা দেশেই ঘটছে হুমকি-ধমকি ও চাঁদাবাজির ঘটনা। একের পর এক চাঁদাবাজি, অপহরণ এবং মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় নতুন করে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
গত শুক্রবার রাজধানীর কলাবাগানে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে চাঁদা দাবি করে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কলাবাগান থানার আহ্বায়কসহ ১৪ জনকে আটক করে যৌথ বাহিনী। গত বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয়ে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের এজিএম ও তাঁর গাড়িচালককে অপহরণের পর মুক্তিপণ হিসেবে ২০ লাখ টাকা নিয়ে নগরীর পাহাড়তলী এলাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালের সামনে তাঁদের রেখে পালিয়ে যায় অপহরণকারীরা। পরে তাঁদের উদ্ধার করে পুলিশ।
গত সোমবার ফতুল্লায় দাবি করা চাঁদা না দেওয়ায় এক ইট-বালুর ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে দুর্বৃত্তরা।
সমাজে খুনখারাবিসহ অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির এ রকম অবনতির কারণ কী? কেন খুনখারাবির লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না? কেন বন্ধ করা যাচ্ছে না নৃশংসতা, অমানবিকতা?
পেশাদার অপরাধীদের তৎপরতা বেড়ে যাওয়া এবং ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর কারণেই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। অনেকে মনে করছেন, এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পুলিশের কাজের গতিহীনতা।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় সারা দেশে অনেক থানায় হামলা হয়। অস্ত্র, গোলাবারুদ লুট হয়। কয়েকটি কারাগারেও হামলা হয়। অস্ত্র লুটের পাশাপাশি অনেক অপরাধীও বের হয়ে যায়। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর একটি দীর্ঘ সময় পুলিশের নিয়মিত কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পুলিশ এখনো স্বাভাবিক হতে না পারায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হচ্ছে।
নিরাপদে বসবাস করা মানুষের মৌলিক অধিকার। আর মানুষের সেই মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। খুনখারাবির লাগাম টেনে ধরতে না পারলে জনমনে নিরাপত্তাহীনতার বোধ তীব্র হবে। তাই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এখনই কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে আরো তৎপর হতে হবে। অপরাধ বিশ্লেষকরাও বলছেন, অপহরণ ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে আরো কঠোর হতে হবে। কোনো সংগঠনের নামে কিংবা ছদ্মনামে চাঁদাবাজির মতো অপরাধ করলে অপরাধীর বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা জরুরি। তাঁদের মতে, রাজনৈতিক দল, সংগঠন, বৈষম্যবিরোধী বা সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজি ও অপহরণের ব্যাপারে রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনায় না নিয়ে যে অপরাধ করবে, তাকে শাস্তির আওতায় আনা উচিত।
আমাদের প্রত্যাশা, অবনতিশীল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কঠোর হাতে দমন করা হবে অপহরণ-চাঁদাবাজিসহ সব ধরনের অপরাধ।