প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১১ মার্চ, ২০২৫, ১:২৫ এএম আপডেট: ১১.০৩.২০২৫ ১:৩৩ এএম |

কুমিল্লার
দেবিদ্বারে ব্রীজের নিচে থেকে উদ্ধার হওয়া নিহত শাহনাজ বেগম হত্যার রহস্য
উদঘাটন করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় রবিবার বিকালে মুরাদনগরের কোম্পানীগঞ্জ এলাকা
থেকে বাসচালক মো. মহিউদ্দিকে দেবিদ্বার থানা পুলিশ ও হেলপার মো.সাত্তারকে
র্যাব গ্রেপ্তার করেছে। এ ঘটনায় জব্দ করা হয়েছে ফারজানা পরিবহনের একটি
বাস, হত্যায় ব্যবহৃত রড ও নিহত শাহনাজের ব্যবহৃত একটি মোবাইল ফোন।
সোমবার
(১০ মার্চ) বিকালে গ্রেপ্তার ও আদালতে জবানবন্দি দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত
করেছেন দেবিদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সামসুদ্দীন মোহাম্মদ ইলিয়াছ।
তিনি জানান, গত ৫ মার্চ বিয়ের জন্য চাপ দেয়ায় ওই নারীকে হত্যার পর তার হাত
পা-বেঁধে ব্রীজের নিচে ফেলে দেয় মহিউদ্দিন। এই ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত দুইজনের
সঙ্গে ওই নারীর অবৈধ সম্পর্ক ছিল। আসামীরা প্রাথমিক জবানবন্দিতে এই তথ্য
জানিয়েছে। সোমবার দুপুরে তাদের আদালতে নেওয়া হলে সেখানে ১৬৪ ধারা জবানবন্দি
দেন। এর আগে গত ৭ মার্চ এ ঘটনায় নিহতের ছেলে মো. সবুজ বাদী হয়ে দেবিদ্বার
থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
গ্রেপ্তার মো. মহিউদ্দিন (৩৫)
মুরাদনগর উপজেলার গুঞ্জর গ্রামের মোসলেম উদ্দিনের ছেলে এবং সে ফারজানা
পরিহনের চালক এবং আবদুস সাত্তার (৫৫) একই উপজেলার কুলুবাড়ী গ্রামের মৃত
সেকান্দর আলীর ছেলে (৫৫) এবং ওই বাসের হেলপার।
ঘটনার বিবরণ ও
পুলিশসূত্রে জানা গেছে, নিহত শাহনাজ বেগমের সাথে বাসের হেলপার মো.
সাত্তারের সঙ্গে প্রায়ই শারীরিক মেলামেশা করতো। এক পর্যায়ে সাত্তারের
মাধ্যমে শাহনাজের সঙ্গে পরিচয় হয় বাস চালক মহিউদ্দিনের। পরে টাকার বিনিময়ে
শাহনাজের সঙ্গে বেশ কয়েকবার শারীরিক সর্ম্পক করেন মহিউদ্দিন। এই সম্পর্ক
গভীর হলে এক পর্যায়ে শাহনাজ মহিউদ্দিনকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেন।
স্ত্রী-সন্তান থাকায় তার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয় মহিউদ্দিন। এরপর বিয়ে না করলে
ধর্ষণ মামলার হুমকি দেয় শাহনাজ। পরে বিষয়টি সমাধানের জন্য গত ৫ মার্চ
মহিউদ্দিন শাহনাজকে কোম্পানীগঞ্জে ডেকে নেয়। এরপর চালক মহিউদ্দিন শাহনাজকে
তার চালিত ফারজানা বাসে করে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ইউসুফপুর এলাকায় নিয়ে
যায়। সেখানে কথাবার্তার এক পর্যায়ে মহিউদ্দিন উত্তেজিত হয়ে বাসে থাকা লোহার
রড দিয়ে শাহনাজের মাথায় আঘাত করলে সে অজ্ঞান হয়ে যায়। পরে ওড়না ও রশি দিয়ে
শাহনাজের হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ব্রীজের নিচে ফেলে দেয়
মহিউদ্দিন। এরপর বাস নিয়ে পালিয়ে যায় সে। পরে হেলপার মো.সাত্তার গাড়ীতে
থাকা রক্ত ও অন্যান্য আলামত ধুয়ে মুছে পরিস্কার করে ফেলেন।
দেবিদ্বার
থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শামসুদ্দীন মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, আসামী
মহিউদ্দিন ও সাত্তার কুমিল্লা আদালতে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে
স্বীকারোক্তমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। শাহনাজ বেগমের ব্যবহৃত ওয়ালটন মোবাইল
সেট উদ্ধার এবং হত্যায় ব্যবহৃত একটি লোহার রড ও ফারজানা পরিবহনের একটি বাস
জব্দ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ৫ মার্চ কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের
দেবিদ্বার উপজেলার ইউসুফপুর এলাকার একটি ব্রীজের নিচে হাত বাধা অবস্থায়
অজ্ঞাত পরিচয়ের এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে বিকালে ওই নারীর
পরিচয় শনাক্ত করে পুলিশ। নিহত শাহনাজ বেগম মুরাদনগর উপজেলার বাখরনগর
গ্রামের শাহ আলমের স্ত্রী।