শান্তি ঘোষ ও সুনীতি চৌধুরী, কুমিল্লার ফয়জুন্নেসা গার্লস স্কুলের অষ্টম ও সপ্তম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থী, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে নারীদের সাহসিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তাঁরা। কুমিল্লার ব্রিটিশ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট চার্লস জিওফ্রে বাকল্যান্ড স্টিভেনসকে হত্যা করে এক সাহসী বিপ্লবী অধ্যায়ের সূচনা করেছিলেন, যা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল এবং ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামকে গতি দিয়েছিল। এই ঘটনা কুমিল্লার জন্য এক গর্বের বিষয়। যে কারণে শান্তি ও সুনীতির বীরত্ব আজও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয় এবং তাঁদের সাহস ও আত্মত্যাগের গল্প বক্তৃতায় উচ্চকিতভাবে উচ্চারিত হয়।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদকের মাধ্যমে যখন জানতে পারি মহান বিপ্লবী সুনীতি চৌধুরীর মেয়ে ভারতী সেন এখনও বেঁচে আছেন। তখন তাঁর সাথে দেখা করার জন্য বেশ উদগ্রিব ছিলাম। করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘ চার বছর অপেক্ষার পর ভারতের মুম্বাইয়ে তাঁর সাথে আমার দেখা হয়। ভারতী সেন তাঁর মায়ের বিপ্লবী কর্মকাণ্ড নিয়ে একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন, যেখানে সেই ঐতিহাসিক ঘটনার প্রতিটি অংশ বিশদভাবে তুলে ধরা হয়েছে। বইটি ইংরেজি ও হিন্দি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে। এবার লন্ডন ভ্রমণের সময় হাতে বাড়তি সময় থাকায় ৯৪ বছর আগের এই ঘটনার প্রকাশিত খবরগুলো জানার আগ্রহ জাগে। ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে পুরোনো পত্রিকাগুলো দেখে আমি রীতিমতো অবাক হয়ে যাই। একজন সাংবাদিক ও সম্পাদক হিসেবে এটা আমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয়েছে।
১৯৩১ সালের ১৪ ডিসেম্বর কুমিল্লার ছোটরাস্থ ডিসি বাংলোয় ব্রিটিশ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্টিভেন্সকে হত্যার খবর কীভাবে সেদিন বিকেলেই বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে ইউরোপবাসীকে জানিয়েছিল লন্ডনের ‘দ্য শিল্ডস ডেইলি গেজেট’। রয়টার্সের পরিবেশিত খবরটি তারা প্রধান শিরোনাম করেছিল। এছাড়াও, পরের দিন ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের বেশিরভাগ পত্রিকা খবরটি প্রধান শিরোনাম অথবা গুরুত্ব দিয়ে প্রথম পাতায় প্রকাশ করে।
সবচেয়ে অবাক হয়েছি ১৫ ডিসেম্বরের ‘দ্য ডেইলি মিরর’ দেখে। পত্রিকাটি প্রথম পাতার পুরোটায় স্টিভেন্স ও তার স্ত্রীর বিয়ের ছবি দিয়ে কাভার স্টোরি করেছিল। ৯৪ বছর পর এসেও এই ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রচার আমার কাছে এক বিরাট ধাঁধাঁ। আমি শুধু ভাবি, খবর পাওয়ার পর পত্রিকার সাংবাদিকরা কীভাবে স্টিভেন্সের লন্ডনের ব্ল্যাকহিথের বাড়ির ঠিকানা খুঁজে বের করে, সেখানে গিয়ে ছবি সংগ্রহ করে, তারপর পজিটিভ করে পত্রিকায় ছাপতে পেরেছিলেন। অথচ, এর ৬০ বছর পর কুমিল্লার পত্রিকাগুলো পজিটিভে ছবি প্রকাশ করা শুরু করেছিল মাত্র।
সে দিনের ঘটনা:
‘সুনীতি চৌধুরী, লাইফ অফ এ ফ্রিডম ফাইটার’ গ্রন্থে প্রখ্যাত বিপ্লবী-স্বাধীনতা সংগ্রামী সুনীতি চৌধুরীর মেয়ে ভারতী সেন সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে লিখেছেন-‘১৯৩১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর । সেদিন স্কুলে বিশেষ পরীক্ষা ছিল। সুনীতি কুমিল্লা শহরের ডিগাম্বরীতলার বাসা থেকে তাঁর মাকে বলে আগেই বেরিয়ে যায়। শ্রীমতী চন্দ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ন্যাশনাল গার্লস স্কুলের সামনে ঘোড়ার গাড়ি অপেক্ষা করার কথা ছিল। সুনীতি সেই স্থানে পৌঁছালে ন্যাশনাল স্কুলের কয়েকজন মেয়ে তাকে চিনতে পারে। এই মেয়েরা ফয়জুন্নেসা স্কুল ছেড়ে ন্যাশনাল স্কুলে যোগ দিয়েছিল। তাই তারা সুনীতিকে সেখানে এত সকালে কী করছে তা জিজ্ঞাসা করতে শুরু করে। কিছু অস্পষ্ট উত্তর দিয়ে সুনীতি গাড়িতে উঠে পড়ে। গাড়িটি শান্তির বাড়ির দিকে চলতে শুরু করে। গাড়ির সাথে যে ব্যক্তি অপেক্ষা করছিল সে ছিল অপরিচিত। তার বর্ণনা সুনীতিকে দেওয়া হয়েছিল। তাই সুনীতি বর্ণনা মিলিয়ে তাকে চিনতে পারে। অনেক পরে সে জানতে পারে যে সে ব্যক্তিটি সতীশ রায় ছিল। ফয়জুন্নেসা স্কুলের পাশের বাসা থেকে শান্তি গাড়িতে উঠার পর সতীশ রায় রিভলভারগুলো হস্তান্তর করে চলে যায়। শান্তি ও সুনীতি সেগুলো তাদের চাদরগুলোর নিচে লুকিয়ে রাখে। গাড়িটি ম্যাজিস্ট্রেটের বাংলোতে পৌঁছে, তাদের গেটের সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়। শান্তি ও সুনীতি বাংলোর বাগানে প্রবেশ করে। তখন মালিরা চারপাশে ঘুরছিল। শান্তি ও সুনীতিকে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে সাক্ষাৎকারের স্লিপ দেওয়া হয়। স্লিপে তাদের নাম ছিল ইলা সেন (শান্তি) এবং মীরা দেবী (সুনীতি)। স্লিপ নিয়ে একজন ভিতরে যান। কিছুক্ষণ পর ম্যাজিস্ট্রেট স্টিভেনস বাঙালি এসডিও নেপাল সেনকে নিয়ে বেরিয়ে আসেন। শান্তি ও সুনীতি মেয়েদের জন্য একটি সুইমিং পুল চালু করার আবেদনপত্র নিয়ে এসেছিল। আবেদনপত্রটি জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে লেখা হয়েছিল। চিঠিতে শান্তি নিজেকে ঢাকার একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসারের কন্যা হিসেবে বর্ণনা করে। তারা ম্যাজিস্ট্রেটকে পৃষ্ঠপোষক করতে চেয়েছিল। মিস্টার স্টিভেনস বলেন, ফয়জুন্নেসা গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মিসেস বিশ্বাস তাদের সাহায্য করতে পারবেন। শান্তি ও সুনীতি ফয়জুন্নেসা স্কুলের ছাত্রী ছিল, অথচ তারা ভান করে যে তারা ঢাকা থেকে এসেছে এবং শহরে নতুন এবং তাকে চেনে না। (গুজব ছিল যে মিসেস বিশ্বাস একজন ব্রিটিশের দালাল ছিলেন)। ম্যাজিস্ট্রেট আবেদনপত্রে একটি সুপারিশ লাইন লিখতে ভিতরে যান। মেয়েরা একে অপরের দিকে তাকায়, হৃদস্পন্দন বাড়তে থাকে। অনেক সময় নষ্ট হয়ে গেছে। ম্যাজিস্ট্রেট যদি বেরিয়ে না আসেন এবং আবেদনপত্রটি একজন বাহকের মাধ্যমে তাদের কাছে পাঠানো হয়, তাহলে তারা কী করবে চিন্তা করছিল? সকাল ১০টা সময় ম্যাজিস্ট্রেট নিজেই এসডিওকে নিয়ে বেরিয়ে আসেন। ম্যাজিস্ট্রেট যখন শান্তির হাতে আবেদনপত্র হস্তান্তর করছিলেন, তখন সুনীতি, যে তার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়েছিল, তার রিভলভার বের করে তার বুকে গুলি করে। স্টিভেনস এবং এসডিও ভিতরে দৌড়াতে শুরু করেন। শান্তি এসডিওকে লক্ষ্য করে গুলি চালাতে শুরু করে, কিন্তু একজন বাধা দেয় এবং গুলিটি তার হাত ছুঁয়ে যায়। চাপরাশিরা তাদের পেছন থেকে শক্ত করে ধরে, মালিরাও তাদের সাথে যোগ দেয়। তাদের ওপর মারধোর চলতে থাকে, তারা এসডিওর চিৎকার শুনতে পায়, পাকড়ো, পাকড়ো (ধরো, ধরো)।
তাদের হাত থেকে রিভলভারগুলো ছিনিয়ে নেওয়া হয়। তাদের যতটা সম্ভব শক্ত করে বাঁধা হয়। লাথি, চড়, ঘুষি অবিরাম চলতে থাকে। দুই বা তিন ঘণ্টা পর শান্তি ও সুনীতিকে প্রিজন ভ্যানে করে কুমিল্লা কারাগারের মহিলা ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের আদালতে নিয়ে যাওয়ার প্রথম ধাপটি বাদ দেওয়া হয়েছিল। কর্তৃপক্ষ ভয় পেয়েছিল যে মেয়েদের রাস্তা বা আদালত থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হতে পারে। কোনো ঝুঁকি নেওয়ার দরকার নেই। তাই ম্যাজিস্ট্রেট নিজেই শান্তি ও সুনীতিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে ওয়ার্ডে আসেন। তিনি মন্তব্য করেন যে, ‘গুলিটি কত ভালোভাবে লক্ষ্য করা হয়েছিল যে ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনাস্থলেই মারা যান। শান্তি ও সুনীতি তাদের কর্মের সাফল্য অবশেষে নিশ্চিত হয়। দুজনেই অবশেষে স্বস্তি বোধ করে।’
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে কাপন
মুহূর্তের মধ্যে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্টিভেনসকে গুলি করে হত্যার খবর কুমিল্লা শহরে ছড়িয়ে পড়ে। খবর ছড়িয়ে পড়ে কলকাতায়-লন্ডনেও। পুরো ইউরোপে সৃষ্টি হয় তোলপাড়। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে কাঁপন ধরে যায়। সেদিন বিকেলেই বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে ইউরোপবাসীকে খবরটি জানিয়েছিল লন্ডনের ‘দ্য শিল্ডস ডেইলি গেজেট’। রয়টার্সের পরিবেশিত খবরটি তারা প্রধান শিরোনাম করেছিল। এছাড়া পরের দিন ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের বেশিরভাগ পত্রিকা খবরটি প্রধান শিরোনাম অথবা গুরুত্ব দিয়ে প্রথম পাতায় প্রকাশ করে। লন্ডন থেকে প্রকাশিত ডেইলি মিরর পর দিন ১৫ ডিসেম্বর কাভার স্টোরি প্রকাশ করে। সেখানে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্টিভেনস ও তার স্ত্রীর বিয়ের ছবি প্রকাশ করে প্রথম পাতা জুড়ে। শিরোনাম দেয় ‘ইয়ং ইন্ডিয়ান ওম্যান স্যুটস ব্রাইটন ডেড’। তাতে বলা হয়-বাংলার ত্রিপুরা জেলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং কালেক্টর চার্লস জিওফ্রে বাকল্যান্ড স্টিভেনস ১৪ ডিসেম্বর সকালে দুই ভারতীয় মহিলা নৈরাজ্যবাদী (ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামীকে নৈরাজ্যবাদী বলা হতো) কর্তৃক গুলিবিদ্ধ হন। জানা গেছে যে একজন বাঙালি মহিলা কুমিল্লার তার অফিসে মিঃ স্টিভেনসের কাছে একটি পিটিশন পেশ করেছিলেন এবং তিনি যখন এটি পড়ছিলেন তখন রিভলভার দিয়ে তার পেটে গুলি করেছিলেন। তাকে এবং অন্য একজন মহিলাকে তার সহযোগী বলে অভিযোগ করা হয়েছে এবং গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রয়টার্স বলছে, মহিলাদের মধ্যে একজনের বয়স মাত্র বিশ বছর এবং আরেকজন একুশ বছর বয়সী। অপরাধের উদ্দেশ্য রাজনৈতিক বলে মনে করা হয়। ভারতীয় সন্ত্রাসী প্রচারে এই প্রথম মহিলারা খুনি (তাদের ভাষায়) হিসেবে সক্রিয়ভাবে মাঠে নেমেছে। এতদিন তারা শুধুমাত্র বিপ্লবীদের সহযোগী হিসেবে যোগ দিয়েছে, যেমন ভাইসরয়ের ট্রেনে বোমা হামলার ঘটনা, যার বিচার এখন দিল্লিতে চলছে। অভিযোগ করা হয়েছে যে অনেক মহিলা সেই মামলায় অধীনস্থ ভূমিকা পালন করেছে। মিঃ স্টিভেনসের বাড়ি ব্ল্যাকহিথে, তার বয়স ছিল বিয়াল্লিশ বছর। তিনি ওল্ড মার্চেন্ট টেইলরস স্কুল এবং ইমানুয়েল কলেজ, কেমব্রিজে শিক্ষিত হন এবং ১৯১৩ সালে ভারতীয় সিভিল সার্ভিসে নিযুক্ত হন। তিনি বাংলায় সহকারী কমিশনার এবং কালেক্টর হিসেবে কাজ করেন এবং ১৯২২ সালে ডেপুটি কমিশনার হন। তিনি ১৯২৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ম্যাজিস্ট্রেট এবং কালেক্টর ছিলেন।
মিঃ স্টিভেনসের মা, যিনি ওল্ড ডিয়ার পার্ক-গার্ডেনস, রিচমন্ড, সারেতে থাকেন, গতকাল সোমবার বলেছিলেন: “আমার ছেলে গত দুই বছর ধরে কুমিল্লায় বসবাস করছিল। প্রায় দুই বছর আগে তার বিয়ে হয়েছিল এবং তার একটি সন্তান ছিল।” মিঃ স্টিভেনসের বাবা, যিনি এখন মৃত, ইপসউইচ এবং পিটারবরোতে পোস্টমাস্টার ছিলেন।
লন্ডনের আরেক বিখ্যাত পত্রিকা ‘দি ডেইলি হেরাল্ড’ পত্রিকায় ১৫ ডিসেম্বর প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, ১৪ ডিসেম্বর সকালে কুমিল্লায় আরেকটি সন্ত্রাসবাদী ঘটনা ঘটেছে, যখন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সি. জি. বি. স্টিভেনসকে তার অফিসে একজন মধ্যবয়সী মহিলা এবং ২০ বছর বয়সী একটি মেয়ে গুলি করে হত্যা করে। শান্তি ঘোষ এবং সুনীতি চৌধুরী নামে মহিলারা একটি সাঁতার প্রদর্শনীতে যোগ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে একটি আবেদনপত্র নিয়ে মি. স্টিভেনসের অফিসে প্রবেশ করে। তিনি যখন আবেদনপত্রটি পড়ছিলেন, তখন তারা তাকে গুলি করে হত্যা করে, রিভলভার দিয়ে খুব কাছ থেকে তার বুকে গুলি চালায়। উভয় মহিলাকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই দুই মহিলা ভাইসরয়ের নতুন অধ্যাদেশ অনুযায়ী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল দ্বারা প্রথম বিচার করা হবে। স্টিভেনসের স্ত্রী এই জেলার একমাত্র শ্বেতাঙ্গ মহিলা, নতুন বছরে আবগারি কমিশনার হিসেবে কলকাতায় বদলি হওয়ার কথা ছিল। তিনি দুই বছর আগে বিবাহ করেছিলেন এবং ভারতীয়দের মধ্যে জনপ্রিয় ছিলেন।
যখন মি. স্টিভেনসকে গুলি করা হয় (রয়টারের সংযোজন), একজন পিয়ন তৎক্ষণাৎ পরিস্থিতি বুঝে মহিলাদের দিকে ছুটে যায় এবং তাদের ও মি. স্টিভেনসের মধ্যে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। তিনি বাহুতে আহত হন এবং হাসপাতালে স্থানান্তরিত হন। অভিযুক্ত মহিলাদের মধ্যে একজন, মিস শান্তি ঘোষ, কুমিল্লা কলেজের প্রয়াত অধ্যাপক দেবেন্দ্র ঘোষের কন্যা। এই ঘটনার খবর জেলায় ছড়িয়ে পড়লে কুমিল্লা, চাঁদপুর এবং চট্টগ্রামের সরকারি অফিস এবং অন্যান্য অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দিনের বাকি অংশের জন্য বন্ধ ছিল। স্থানীয় বার অ্যাসোসিয়েশনের সভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে “কাপুরুষোচিত হত্যাকাণ্ডের” নিন্দা জানিয়ে প্রস্তাব পাস করা হয়।
রাতে পুলিশ অ্যাডভোকেট কামিনী দত্তকে গ্রেপ্তার করে, যিনি গত এপ্রিলে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার অভিযানের সাথে জড়িত অভিযুক্ত “সন্ত্রাসীদের” পক্ষে আইনজীবী ছিলেন এবং অনন্ত সিংয়ের বোন মিসেস ইন্দুমতী সিংকেও গ্রেপ্তার করা হয়, যিনি অভিযানের কথিত নেতা। ভাইসরয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী পুলিশ সপ্তাহান্তে কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে আরও অনেককে গ্রেপ্তার করার পর এই গ্রেপ্তারগুলি করা হয়েছে।
স্কটল্যান্ডের অ্যাবারদিন প্রেস এন্ড জার্নাল পত্রিকায় ২১ ডিসেম্বর সংখ্যায় ‘বাংলার ম্যাজিস্ট্রেট খুন’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়-‘কলকাতা “স্টেটসম্যান”-এর কুমিল্লা সংবাদদাতা ১৪ই ডিসেম্বর নিহত কুমিল্লা জেলার ম্যাজিস্ট্রেট মিঃ স্টিভেনসের মৃত্যু সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন। মিঃ স্টিভেনস যখন একজন মহকুমা কর্মকর্তার সাথে তার অফিসে ছিলেন, তখন দুইজন মেয়ে তাকে দেখার জন্য বারান্দায় আসে। কর্মকর্তা বাইরে গিয়ে তাদের সাঁতার প্রদর্শনীর বিষয়ে কলেজের মহিলা প্রধানের কাছে যেতে বলেন। মিঃ স্টিভেনস তখন বেরিয়ে আসেন এবং মেয়েদের অনুরোধে একটি আবেদনে স্বাক্ষর করতে রাজি হন। তিনি যখন আবেদনপত্রটি এক মেয়ের হাতে ফেরত দিচ্ছিলেন, তখন অন্যজন ভারী রিভলভার দিয়ে ৩ ফুট দূরত্ব থেকে তাকে গুলি করে। মিঃ স্টিভেনস অফিসারের উপর পড়ে যান এবং তারপর নিজেকে সামলে চিৎকার করে বলেন, “আমি আঘাত পেয়েছি,” এবং অফিসের দিকে দৌড়ে যান। দুবার গুলি করা হয়েছে। মহকুমা কর্মকর্তা মেয়েটিকে ধরে ফেলেন, যে তাকে দুবার গুলি করেছিল। অফিসার এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়া একজন পুলিশ সদস্য তাকে আটক করে। পিয়নরা অন্য মেয়েটিকে ধরে ফেলে এবং সাধারণ ধস্তাধস্তিতে একজন পিয়নের বাম হাতে গুলি লাগে। মিসেস স্টিভেনস কিছু দূর থেকে গুলির শব্দ শুনে দ্রুত বাড়িতে ফিরে এসে তার স্বামীকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। পুরো ঘটনাটি তিন মিনিটের মধ্যে শেষ হয়ে যায়। অভিযুক্ত খুনি (পড়ুন মুক্তিযোদ্ধা) একটি জবানবন্দী দিয়েছে বলে জানা গেছে।