কল্যাণের
প্রতি মানুষকে আহবান করতে হবে দুটি পদ্ধতিতে। একটি হলো সুন্দর কলা কৌশল
অপরটি হলো সর্বাধিক উত্তম বিতর্ক। একটি প্রশ্ন কারো কারো মনে জাগতে পারে
যে, কলা কৌশলের ব্যপারটি না হয় বুঝলাম কিন্তু ভালো কাজের জন্য বিতর্ক হবে
কেন? এর উত্তর একেবারেই সহজ। যুগ যুগ ধরেই ভাল কাজের ব্যাপারেই বাঁধা ও
বিতর্ক সৃষ্টি করেছে তথাকথিত কিছু মানুষ এবং তারা সাধারণ কেউ নয়। সমাজের
গণ্যমান্য নেতৃস্থানীয় ব্যাক্তিবর্গ তাদের বিশাল অনুসারীদেরকে নিয়েই। এটা
বর্তমানেও যদি আমরা সমাজ বা রাষ্ট্রের দিকে তাকাই একই চিত্র দেখতে পাই।
আবার একই সমাজের কিছু ব্যাক্তিকে দেখতে পাই যাঁদেরকে মহান আল্লাহ হেদায়াত
দান করেছেন তাঁরা ভাল কাজের সহযোগিতা করে ভাল কাজটি প্রতিষ্ঠা করেছেন। তবে
এঁদের সংখ্যা নিতান্তই কম। ধর্মীয় ব্যাপারগুলো তুলনামূলক একটু ভিন্ন বিধায়
এখানে অনেক কিছু ভেবে চিন্তে তারপর এগোতে হয়। আর এ জন্যই উত্তম বিতর্কের
কথা কুরআনুল করিমে বলা হয়েছে। সবাই কিন্তু এ বিষয় অর্থাৎ কৌশল ও উত্তম
বিতর্ক করতে জানেনা বা জানবেনা। এটাও একটি বিশাল নেয়ামত। তারাই এ ক্ষেত্রে
অগ্রগামী যাদেরকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এই নেয়ামত দান করেছেন। কুরআনুল
করিমে এই ব্যাপারেও দিক নির্দেশনা দিয়ে আল্লাহ পাক এরশাদ করেন-আল্লাহ
তায়ালা যাকে চান তাকে হিকমত বা কৌশল দান করেন। যিনি কৌশলপ্রাপ্ত হন তিনি
বহু মঙ্গলপ্রাপ্তের অধিকারী হয়েছেন। কেবলমাত্র জ্ঞানবান ব্যাক্তিরাই উপদেশ
গ্রহণ করেন। পারা-৩, সুরা-বাক্বারা, আয়াত-২৬৯।
কৌশলের ব্যাপারটি আমরা
হাদিস শরিফ থেকে এর ব্যাক্ষা পাই। প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে
আব্বাস রাঃ বলেন- তুমি মানুষকে সপ্তাহে একদিন বা একবার ওয়াজ নসিহত করবে।
যদি এটা অমান্য কর (অর্থাৎ আরও করত তোমার মন চায় বা প্রয়োজন মনে কর) তাহলে
সপ্তাহে দু দিন। যদি আরও বেশি করার প্রয়োজন হয় তাহলে সপ্তাহে তিন দিন করবে।
তবে তুমি (খেয়াল রাখবে একটি বিষয়) তুমি মানুষকে কুরআনুল করিমের প্রতি
বিরক্তবোধ সৃষ্টি করিওনা। আমি তোমাকে কখনও যেন এমন না পাই যে, তুমি তোমার
সম্প্রদায়ের নিকট এমন অবস্থায় যাবে যে তারা তাদের নিজস্ব কোন কথাবার্তায়
লিপ্ত রয়েছে। অতঃপর তুমি (তোমার ইচ্ছানুযায়ী) কথাবার্তা শুরু করে দিবে এর
ফলে তুমি তাদেরকে বিরক্ত করে ফেলবে। বরং (তোমার উচিত হবে তোমার সম্প্রদায়ের
নিকট গিয়ে) প্রথমে চুপ করে থাকবে (পরিস্থতি বুঝবে, অবস্থা ও অবস্থান
দেখবে)। অতঃপর তারা তোমাকে বলার জন্য আদেশ দিলে তাদের আগ্রহ প্রতক্ষণ
পর্যন্ত থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের সাথে কথা বলবে। আর দোয়াতে অতিরিক্ত
ছন্দ থেকে বেঁচে থাকবে। আমি রাসুলুল্লাহ দঃ এর নিকট এ ব্যাপারে অঙ্গিকার
নিয়েছি এবং তাঁর অন্যান্য সাহাবীগণও এমনটি করতেন না। বুখারী শরিফ ২য় খন্ড,
হাদিস নং-৬০৯২। এখানে কল্যাণে প্রতি আহবান সহ সব ধরণের কথাবার্তার কথ
সুন্দর বিধান পেয়ে গেলাম আমরা। পাঁচটি বিষয় এখানে বলা হয়েছে। এক. ওয়াজ
নসিহত বা কথাবার্তার বেলায় (ওয়াজ নসিহত সম্পর্কে অন্য এক সময় লিখব
ইনশাআল্লাহ) প্রথমে গিয়েই নিজের কথা শুরু করা যাবেনা। দুই, পূর্বে আলোচনায়
লিপ্ত থাকা ব্যক্তিদের কাছে অনুমতি নিয়ে চুপ করে বসে থাকা। তিন. পরিস্থিতি ও
সময় বুঝা। চার, তাদের অনুমতি স্বাপেক্ষে যতক্ষণ আগ্রহ থাকে ততক্ষন বলা।
(যদিও আমরা মাইক বা ফ্লোর পাইলে আর ছাড়তেই মন চায়না)। পাঁচ, আমার বলা যেন
শ্রোতাদের বিরক্তির কারণ না হয় সেদিকে যথেষ্ট খেয়াল রাখা। এই পাঁচটি বিষয়
খেয়াল করে যদি আমরা কথা বার্তা বা ওয়াজ নসিহত করতাম তাহলে কতইনা সুন্দর হতো
আমাদের অনুষ্ঠানগুলো। ধর্মীয় ব্যাপারগুলো তো আরও স্পর্শকাতর। কিন্তু আমরা
করি তার বিপরীত। আমার কথা কারও ভাল লাগুক আর না লাগুক অবিরাম চালিয়েই
যাচ্ছি। যার ফলে একদিক দিয়ে যেমন তা হচ্ছে বিরক্তকর অপরদিক দিয়ে তার ফলাফর
বেরুচ্ছে শূণ্য। কারণ ঐ পাঁচটি জিনিসের শূণ্যতা থাকলে তা শ্রবণ করা হয় ঠিকই
কিন্তু হৃদয়গ্রাহী হয়না। আর মানুষের পরিবর্তনটা কিন্তু হহৃদয় বা অন্তরের
পরিবর্তনের সাথে অনেক শক্তিশালী সম্পর্ক রাখে। (অসমাপ্ত)
প্রধান ইমাম ও খতীব, কান্দিরপাড় কেন্দ্রিয় জামে মসজিদ ও কেন্দ্রিয় ঈদগাহ, কুমিল্লা।