সোমবার ১৭ মার্চ ২০২৫
৩ চৈত্র ১৪৩১
বাংলাদেশ-চীন সুদৃঢ় বন্ধনে জড়ানো আবশ্যক
গাজীউল হাসান খান
প্রকাশ: সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫, ১:৩৪ এএম আপডেট: ১৭.০৩.২০২৫ ২:২০ এএম |



  বাংলাদেশ-চীন সুদৃঢ় বন্ধনে জড়ানো আবশ্যক চীনের একজন অত্যন্ত প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় নেতা সম্প্রতি বলেছেন, বাংলাদেশের উচিত তার নিজ জাতীয় স্বার্থে কাজ করা, কোনো তৃতীয় পক্ষের জন্য নয়। কিন্তু পতিত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব কাজ দেশের স্বার্থে করেননি, করেছেন নিজের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকার তাগিদে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক দুই দেশের জনগণের পর্যায়ে ছিল না, ছিল ভারতের হিন্দুত্ববাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের সাবেক সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার পর্যায়ে। সর্বত্র অভিযোগ উঠেছে যে শেখ হাসিনা নিজে বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা ধরে রাখার জন্য জাতীয় স্বার্থ এবং এমনকি জনগণের মতামতের তোয়াক্কা না করে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সম্পর্কিত বিষয়াদি মোদির হাতে তুলে দিতে দ্বিধা বোধ করেননি।
বাংলাদেশ ভূখণ্ডের শীর্ষ উত্তর-পশ্চিম অঞ্চল দিয়ে ভারতের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে অর্থাৎ প্রায় বিচ্ছিন্ন উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যে প্রয়োজনে সামরিক সরঞ্জাম এবং সেনাবাহিনী চলাচলের জন্য একটি রেলপথ নির্মাণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ভূমি বরাদ্দ দেওয়া। এতে ব্যক্তিগতভাবে ভারতে নিজ ক্ষমতা বলিষ্ঠতর করার সুযোগ পাবেন নরেন্দ্র মোদি; অন্যদিকে হাসিনা পাবেন অবৈধ পন্থায় নির্বাচন জয়ের নিশ্চয়তা। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, দেশের জনগণের মতামত কিংবা জাতীয় আইনসভায় অনুমোদন ছাড়া শেখ হাসিনা ভারতের নরেন্দ্র মোদিকে কিভাবে দেশের গুরুত্বপূর্ণ এবং কৌশলগত ভূমি কিংবা সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দিতে পারেন। সে অধিকার কোনো দেশের জনগণ প্রধানমন্ত্রীকে দিতে পারে না।
তা ছাড়া আরো উল্লেখ্য, দুটি প্রতিবেশী দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া অভিন্ন নদী তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা বাংলাদেশকে দিচ্ছে না ভারত। উল্লেখ্য, এরও বহু আগে দুই দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত আরেক অভিন্ন নদী গঙ্গার ওপর ফারাক্কা পয়েন্টে বাঁধ নির্মাণ করে একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করেছে ভারত। গঙ্গার (এপারে পদ্মা) পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে শেষ পর্যন্ত জাতিসংঘে যেতে হয়েছে বাংলাদেশকে। অথচ ত্রিপুরা রাজ্যের মানুষের পানীয় জলের চাহিদা মেটানোর জন্য মুহুরী নদী থেকে পানি সরবরাহ করা থেকে আখাউড়ায় রেলযোগাযোগ স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছে।
এর পরও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফ বাংলাদেশি নিরস্ত্র নাগরিকদের কথায় কথায় গুলি করে হত্যা করে। ভারতের সঙ্গে বিবদমান কোনো সমস্যারই খুব সহজে সমাধান হয় না। কথায় কথায় ভারতের বর্তমান সরকার শুধু একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনে বাংলাদেশিদের সাহায্য করার খোঁটা দিয়ে সব কিছুতে ঠকিয়ে চলার প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে। এটি সুস্পষ্টভাবে বাংলাদেশকে দমিয়ে রাখার এবং শোষণ করার একটি চলমান অপকৌশল বলে তথ্যাভিজ্ঞমহল মনে করে। একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে সমতা, ন্যায়সংগত অধিকার এবং মর্যাদার ভিত্তিতে বিবেচনা করে না ভারত।
এখন ব্যক্তি পর্যায়ে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনাকে কেন্দ্র করে নরেন্দ্র মোদি ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ককে এক উদ্বেগজনক পর্যায়ে নিয়ে গেছেন, যা মোটেও কাঙ্ক্ষিত ছিল না দুই দেশের জনগণের কাছে।
এ পর্যায়ে একটু পেছন ফিরে যাওয়া যাক। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বশেষ চীন সফর সংঘটিত হয়েছে ৮-১০ জুলাই ২০২৪। এর আগে তিনি সে বছরেরই জুন মাসে এক রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে গিয়েছিলেন। সে দুই সফর থেকেই চীন ও ভারতের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থানগত দৃষ্টিভঙ্গি নির্ণয় করার চেষ্টা করেছেন বিশ্বের  নেতৃস্থানীয় সংবাদ বিশ্লেষকরা। শেখ হাসিনার সর্বশেষ সফরের আগে চীন বাংলাদেশের চট্টগ্রামে কর্ণফুলী টানেল নির্মাণসহ পদ্মা সেতুর কাজ সম্পন্ন করেছে। তা ছাড়া হাত দিয়েছে ঢাকা-আশুলিয়ার মধ্যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মতো দীর্ঘ উড়ালসড়কের কাজসহ আরো বেশ কিছু প্রকল্পে। বাংলাদেশ চীনের কাজে সন্তোষ প্রকাশ করলেও সমস্যা দেখা দেয় উত্তরবঙ্গের প্রস্তাবিত তিস্তা বহুমুখী প্রকল্প নিয়ে। দেড় দশকের মতো দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা গত বছরের জুলাইয়ের প্রথম দিকে চীন সফরের আগেও কয়েকবার গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন, বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও প্রতিরক্ষা বিষয়ক বিভিন্ন প্রস্তাব নিয়ে বেইজিংয়ে যান। শেখ হাসিনা ভারত-বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া অভিন্ন নদী তিস্তার বিভিন্ন সমস্যা চীনের রাষ্ট্রপ্রধান শি চিনপিং ও অন্যদের কাছে তুলে ধরেন। উত্তরবঙ্গের পাঁচটি মঙ্গাপীড়িত জেলা এবং তাদের ওপর তিস্তার প্রভাব নিয়ে বাংলাদেশের সাবেক সরকারপ্রধান একটি বক্তব্যের মাধ্যমে সম্ভাব্য প্রতিকারের জন্য চীনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। চীনের রাষ্ট্রপ্রধান শি চিনপিংয়ের পরামর্শে শেখ হাসিনাকে তখন তাঁদের এককালের খ্যাপাটে হোয়াংহো নদীর তীরে গড়ে তোলা সুকিয়ান সিটি পরিদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সব কিছু দেখেশুনে অত্যন্ত মুগ্ধ হয়েছিলেন শেখ হাসিনা এবং চীন সরকারের কাছে অনুরোধ করেছিলেন তিস্তাপারের দুই কোটি মানুষের অবস্থার উন্নয়নের জন্য একটি কৌশলপত্র প্রণয়নের লক্ষ্যে। ভারতের ওপর সেচের পানির জন্য নির্ভর করে বসে থাকার চেয়ে তিস্তা নদী খনন, তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ, পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা এবং একটি কৃষি, শিল্প ও পর্যটন বান্ধব বন্দর গড়ে তোলার পরামর্শ দেয় চীন এবং সম্পূর্ণ তিস্তা অববাহিকাটি সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করে চীন বেশ কিছু প্রস্তাব তৈরি করে। এতে অনেক সময় ব্যয় হয়েছে চীনের। সে প্রস্তাবিত মহাপ্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় এক বিলিয়ন ডলার খরচ ধরা হয়েছিল, যা ঋণ হিসেবে প্রদান করার জন্য চীন রাজি হয়েছিল। তারপর বাংলাদেশের সিদ্ধান্তের জন্য তারা প্রায় দুই বছর অপেক্ষা করেছে। তত দিনে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রেও অনেক জল গড়িয়ে গেছে। প্রথমত, ‘চিকেন নেক’ নামে খ্যাত ভারতের সীমান্তে শিলিগুড়ি করিডরের স্পর্শকাতর অঞ্চলের আশপাশে তারা চীনের কোনো প্রকৌশলী কিংবা কর্মী বাহিনীর কর্মতৎপরতায় বাধা প্রদান করে। ভারত সে অঞ্চলে তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি উত্থাপন করে লালমনিরহাটে অবস্থিত পুরনো বিমানবন্দরটি পুনরায় চালু করার ব্যাপারেও আপত্তি জানায়। তা ছাড়া চট্টগ্রামের পেকুয়ায় চীনের তত্ত্বাবধানে একটি আধুনিক সাবমেরিন ঘাঁটি নির্মাণের ব্যাপারেও বাধা প্রদান করে তারা। মোটকথা, ভারত তখন বাংলাদেশে চীনের অনুপ্রবেশ ঠেকানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং পেন্টাগনের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও কাজ শুরু করে। এতে তিস্তা অববাহিকায় শেখ হাসিনার সব পরিকল্পনা থমকে দাঁড়ায়।
শেখ হাসিনা ও তাঁর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা তখন রাজনৈতিক ক্ষমতা রক্ষার জন্য ভারত এবং উন্নয়ন সহযোগিতার জন্য চীনের প্রয়োজনীয়তার কথা মুখে বললেও বাস্তবে চীন থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করেন। এবং এক পর্যায়ে তিস্তা মহাপ্রকল্প বাস্তবায়নের সম্পূর্ণ কাজ ভারতকে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে তখন প্রশ্ন ওঠে যে মহাপ্রকল্প বাস্তবায়নের অর্থ জোগান দেবে কে? বাংলাদেশে তখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন ক্রমে ক্রমে দুর্বার গতি লাভ করে। সংগ্রামী ছাত্র-জনতার আন্দোলন কর্মসূচি চূড়ান্ত পর্যায়ে এক দফায় রূপান্তরিত হয়। আর তা ছিল শেখ হাসিনার অপসারণ এবং ভারতীয় দখলদারি থেকে সম্পূর্ণ মুক্তিলাভের প্রচেষ্টা। চীন তার গভীর পর্যবেক্ষণমূলক কূটনীতির আলোকে গত বছরের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ১২তম জাতীয় সংসদের ‘ডামি নির্বাচন’ থেকেই হাসিনা সরকারের স্থায়িত্ব নিয়ে চরম সন্দেহের দোলাচলে দুলছিল। তা ছাড়া শেখ হাসিনার আগের দুটি ভোটারবিহীন নির্বাচন ও ভারতের সঙ্গে তাঁর (হাসিনার) রাজনৈতিক বোঝাপড়ার কারণে চীন প্রস্তাবিত তিস্তা মহাপ্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়েছিল। সে কারণে শেখ হাসিনা যখন গত বছর নির্বাচনের পর অর্থাৎ জুন মাসে প্রথমে ভারত সফর করেন এবং পরের মাসে চীনে গিয়ে ঋণ সহযোগিতা চাইলেন, প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং তখন তা তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। প্রথমে অর্থাৎ বাংলাদেশের বিগত সংসদ নির্বাচনের আগে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার দক্ষিণবঙ্গের উন্নয়ন কর্মসূচি ও অন্যান্য চলমান প্রকল্প এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য চীনের কাছে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলারের ঋণ (অনুদান ও এককালীন সাহায্যসহ) প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছিল। কিন্তু তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের প্রাক্কালে তা পাঁচ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। বেইজিংয়ে দুই দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আলোচনাকালে প্রেসিডেন্ট শি সে ঋণ সহযোগিতার প্রস্তাব বাতিল করে শেষ পর্যন্ত ১০০ মিলিয়ন ডলারের একটি প্যাকেজ ঘোষণা করেন। চীন চার ভাগে অর্থাৎ ঋণ, অনুদান ও প্রকল্প সহযোগিতার মাধ্যমে বিভিন্ন সাহায্যের আশ্বাস দিয়ে শেখ হাসিনাকে বিদায় করে। তা ছাড়া নির্বাচনের বেশ আগে থেকেই প্রস্তাবিত তিস্তা মহাপ্রকল্পটি নিয়ে ভারতের সঙ্গে তৎকালীন শেখ হাসিনা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা চলছিল। চীন সরকার তখন থেকেই এই প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে তাদের আগ্রহ একরকম হারিয়ে ফেলেছিল। অথচ চীন প্রায় দুই বছর অপেক্ষা করেছে এ প্রকল্পের ব্যাপারে বাংলাদেশের কাছ থেকে একটি সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তের জন্য। শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট শি ধরেই নিয়েছিলেন যে ব্যক্তিগত রাজনৈতিক স্বার্থে শেখ হাসিনা ভারতের প্রভাববলয় থেকে কখনো বেরিয়ে আসতে সম্পূর্ণ অক্ষম হয়ে পড়েছেন। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে তখন তিনি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিলেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার জুলাই-আগস্টের আন্দোলন যখন একটি পরিপূর্ণ গণ-অভ্যুত্থানে পরিণত হলো, তখন থেকেই শুরু হয়েছিল একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার অবিনাশী প্রত্যয়। নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-রাজনৈতিকভাবে দিনবদলের পালা। আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন বিশ্বসভায় ড. ইউনূস বাংলাদেশকে তুলে ধরতে শুরু করলেন একটি সম্পূর্ণ স্বাধীন সত্তা এবং নতুন উন্নয়ন পরিকল্পনার আলোকে। বাংলাদেশের মিরসরাই শিল্প এলাকায় এবং কর্ণফুলী টানেলের ওপারে আনোয়ারায় চীনের বৃহৎভাবে শিল্প-কারখানা স্থাপন এবং বিশেষ করে সোলার এনার্জি উৎপাদনের (সূর্যরশ্মিভিত্তিক জ্বালানি শক্তি) লক্ষ্যে অবিলম্বে কারখানা নির্মাণের ওপর জোর দেন ড. ইউনূস। গতবার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়ে তিনি চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এ ব্যাপারে চীনকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানান। তা ছাড়া চলতি ডিসেম্বরের মধ্যে তিস্তা মহাপ্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে পুরনো চুক্তিটি নবায়ন করবে বলে জানিয়েছে ইউনূসের অন্তর্র্বতী প্রশাসন। মার্চের ২৬ থেকে ২৯ তারিখ পর্যন্ত চীনের হাইনান প্রদেশে অনুষ্ঠেয় বোয়াও সম্মেলনে যোগ দিতে যাচ্ছেন ড. ইউনূস। বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) হচ্ছে একটি আন্তর্জাতিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, যা এশিয়া এবং বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে। বোয়াও সম্মেলনকে তাই এশিয়ার ডাবোস বলা হয়ে থাকে। এতে এশিয়া এবং বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে এশিয়া ও অন্যান্য মহাদেশের সরকার, শিল্প ও ব্যাবসায়িক এবং একাডেমিক মহলগুলোর নেতাদের মধ্যে আলোচনা হয়ে থাকে। তবে এ সম্মেলন বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে একটি বিশেষ কারণে যে এতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের সঙ্গে অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা হবে। চীনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্যে অন্যদের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা বাড়াতে হবে বাংলাদেশকে। এ পর্যবেক্ষণ বাংলাদেশের তথ্যাভিজ্ঞমহলের। বাংলাদেশকে সামরিক প্রযুক্তি হস্তান্তর করতে আগ্রহী চীন। তারা বাংলাদেশকে চীনের মিসাইল প্রযুক্তি দিচ্ছে, যার রেঞ্জ হবে ৩৫০ কিলোমিটার। বাংলাদেশ বর্তমানে চীন থেকে তার ৭২ শতাংশ সমরাস্ত্র ক্রয় করছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ চীন থেকে বহুমুখী যুদ্ধবিমান (মাল্টিরোল কমব্যাট ফাইটার জেট) জে১০সি (ঔ১০ঈ) কিনতে আগ্রহী, যা যুক্তরাষ্ট্রের এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের চেয়ে বেশি ক্ষমতাশালী। ড. ইউনূসের আসন্ন সফরে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের কিছু যুগান্তকারী চুক্তি হতে পারে, যা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় পরবর্তী সরকারগুলোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে বলে বিশ্বাস।
দ্বিতীয় ধাপের মিসাইল প্রযুক্তি বাংলাদেশকে হস্তান্তর করতে প্রস্তুত চীন। তা ছাড়া বঙ্গোপসাগরের জলসীমা রক্ষার্থে চীনের সঙ্গে সাবমেরিন প্রকল্পে কাজ করাও জরুরি বলে মনে করে বাংলাদেশ। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ২০১৪ সালে সামরিক অস্ত্রশস্ত্র ক্রয়ের ক্ষেত্রে একটি চুক্তি হয়েছিল বলে জানা যায়। বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহী তাঁর দেশ। বাংলাদেশের টেক্সটাইল, ক্লিন এনার্জি, ইলেকট্রিক যানবাহন এবং ডিজিটাল প্রযুক্তিসহ গুরুত্বপূর্ণ খাতে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত চীন। বাণিজ্য সহযোগিতা সম্প্রসারণ এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীর করার জন্য বেইজিং প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। চীনের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, ১৪টি চীনা সংস্থা এরই মধ্যে বাংলাদেশে মোট ২৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক জনগণকেন্দ্রিক, ব্যক্তি বা নেতা কেন্দ্রিক নয়।
লেখক : বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাবেক প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক












সর্বশেষ সংবাদ
অর্থ আত্মসাৎ মামলায় কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কারাগারে
হঠাৎ বন্ধ কুমিল্লা সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসের কার্যক্রম
ডা. প্রাণগোপালের অবরুদ্ধ মেয়েকে ৮ ঘন্টা পর উদ্ধার
ফোরলেনের ভেতরে অনিয়ম করলে কোন দয়ামায়া নাই: জেলা প্রশাসক
তিতাসে আসামী ধরতে গিয়ে অবরুদ্ধ পুলিশ যৌথবাহিনীর সহযোগিতায় ২ঘন্টা পর উদ্ধার
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
হঠাৎ বন্ধ কুমিল্লা সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসের কার্যক্রম
কুমিল্লায় ৫ অবৈধ ইটভাটা সিলগালা, ৫ লাখ টাকা জরিমানা
ফোরলেনের ভেতরে অনিয়ম করলে কোন দয়ামায়া নাই: জেলা প্রশাসক
বিএনপি’র পতাকায় মুড়িয়ে দাফন হতে চান সাক্কু
ডা. প্রাণগোপালের অবরুদ্ধ মেয়েকে ৮ ঘন্টা পর উদ্ধার
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২