মঙ্গলবার ১৮ মার্চ ২০২৫
৪ চৈত্র ১৪৩১
সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চাই
অধ্যাপক ডাঃ মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ
প্রকাশ: সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫, ১:৩৪ এএম আপডেট: ১৭.০৩.২০২৫ ২:২০ এএম |



 সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চাই রাজধানীর বাসাবাড়ি ও রেস্তোরা থেকে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার টন বর্জ্য সংগ্রহ হয়। দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের এক বিরাট অংশ রাজধানী কেন্দ্রিক। স্বাভাবিকভাবেই এখানে বর্জ্য উৎপাদনের পরিমাণও বাড়ছে। এই বিশাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সীমিত পরিসরের এই নগরীর সীমাবদ্ধতা অনেক। এ অবস্থায় যত্রতত্র ময়লা ফেলে রাখার দৃশ্য প্রায়ই চোখে পড়ে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি বিরাট হুমকি। এক্ষেত্রে নগরবাসীর অসহায়ত্মকে পুঁজি করেই যে ময়লা বাণিজ্যে রমরমা ব্যবসা চলছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ জন্য সিটি কর্পোরেশন নির্ধারিত বিলের কয়েকগুণ অর্থ গুণতে হয় বলে যে অভিযোগ এসেছে, তা থেকেই স্পষ্ট বুঝা যায় ঢাকাবাসী বর্জ্য সিন্ডিকেটের কাছে কতটা জিম্মি, নগরবাসীকে এই দুর্ভোগ থেকে রেহাই দিতে হলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খাতে জরুরি ভিত্তিতে স্বচ্ছতা, পেশাদারিত্ব ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের স্থান বিশে^র ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৬০তম। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় পরিবেশ বান্ধব যে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসৃত হয় তা একদিকে এ খাতে বিদ্যমান বিশৃঙ্খলা যেমন দূর হবে, অন্যদিকে পরিবেশ দূষণের শহর হিসেবে রাজধানীর দূর্নাম খুচাতেও সম্ভব হবে। 
কুমিল্লায় বড় বড় রাস্তার পাশে বর্জ্যরে স্তুপ পরে থাকে। রাস্তার পাশে তৈরি কিছু ভাগাড় এবং অনেক স্থানে ভাগাড় না থাকলেও স্থানীয় লোকজনের তৈরি করা প্রস্রাব করার নামে পলিথিন ও আবর্জনা ফেলে স্তুপিকৃত করে ভাগাড়ে। অনেকে আবার রাস্তার পাশে দিয়ে বয়ে যাওয়া ড্রেনের মধ্যেও আবর্জনা ফেলতে অভ্যস্ত। স্তুপিকৃত আবর্জনা এখন পাচার হয়ে যাচ্ছে নতুন গোমতিতে ভূমি দখলের ইচ্ছায় এবং কিছু নিয়ে ফেলা হয় পুরাতন গোমতীতে। জায়গার সীমানা বাড়ানোর ইচ্ছায়, পুরাতন গোমতীতে দুই পাড়ের অধিবাসীরা গোমতীর মধ্যে আবর্জনা ফেলে এবং বাড়ির সেনেটারী পাইপটি খুলে দেয় গোমতীর মধ্যে। অনেক পাড়ায় নিচু জায়গা থাকলে তা সমতল করার জন্য পলিথিন মিশ্রিত ময়লা আবর্জনা ফেলে তা পূরণের কাজে ব্যবহার করে। মাঝেমধ্যে ড্রেন থেকে ময়লা আবর্জনা তুলে রাখা হয় রাস্তার ওপর এবং কয়েকদিন পর মানুষ নাক ছিটকানোর পর খোলা ট্রাকে করে নিয়ে ফেলা হয় সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত বিবির বাজার রোডের অদ্ভুত এক ভাগাড়ে। তার থেকে খসে পড়ে রাস্তায় ওই ময়লা আবর্জনার অংশ যা তীব্র গতিতে ট্রাক চালালে একটু পরিমাণ রাস্তায় পড়ে। নিয়ম হচ্ছে পাশের ভাগাড় গুলিতে তিনটি প্রকোষ্ঠ তৈরি করে দেয়া। একটি প্রকোষ্ঠ ধারালো দ্রব্যাদি একটি প্রকোষ্ঠ ফলের খোসা থেকে শুরু পরে রান্নাঘরে উচ্ছিষ্ট ও শিল্প কারখানার আবর্জনা এবং আরেকটি জলজ আবর্জনা এবং প্রতিদিন সকালে তিনটি প্রকোষ্ঠ থেকে এই আবর্জনা পৌর কর্মীরা পরিচ্ছন্ন করবে। কেন্দ্রীয় ভাগাড়ে পুরাতন পদ্ধতি হল ইনসিনেটার ব্যবহার করা, কম্পোস্টিং করে আবর্জনা কে মাটিতে রূপান্তর অথবা জমিয়ে মাটির আস্তরণ দিয়ে অনেকদিন ঢেকে রেখে মাটিতে রূপান্তর করা। ইনসিনেটারও নাই, মাটিতে রূপান্তরের প্রক্রিয়াও নাই, আছে শুধু স্তুপীকৃতভাবে কেন্দ্রীয় ভাগাড়ে ফেলে রাখা। সেখান থেকে কুকুর বিড়ালরা পাশর্^বর্তী এলাকায় ছড়ায় আরও ছড়ায় কাকপক্ষী ও ওই জাতীয় পাখিরা। বিবির বাজার রোডের পাশে গেলে ঝাঁকুনিপাড়া দৌলতপুর এলাকায় দেখা যায় সিটি কর্পোরেশনের কেন্দ্রীয় ভাগাড়। সেথায় দেখা যায়, উঁচু উঁচু পাহাড়ের ন্যায় ময়লার স্তুপ কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ময়লা আবর্জনার স্তুপ অনেক দূর থেকে নাকে লাগে দুর্গদ্ধের বাতাস। দুর্গদ্ধ এতটাই তীব্র যে সড়কটি দিয়ে চলাচল করা মুশকিল। স্থানীয় লোকজনরা বলে বছর পর বছর ময়লা আবর্জনা ওই স্থানে কোন ধরনের সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই খোলা জায়গায় ফেলে রাখা হচ্ছে। এসব বর্জ্যে স্থানীয় অন্তত দশ গ্রামের মানুষ দুর্গন্ধে নাকাল। পাশাপাশি সর্বনাশ হচ্ছে পরিবেশ। শত আন্দোলন প্রতিবাদে কোন লাভ হয়নি দশ গ্রামের জনতার। গ্রামের অবস্থা এমন পর্যায়ে এসেছে যে এই গ্রামগুলোতে আত্মীয়তা করতে চাচ্ছে না ভিন গ্রামের লোকজন।
বিশ^স্ত সূত্রে জানা যায়, বেশ কয়েক বছর আগে আদর্শ সদর উপজেলার ঝাকুনি পাড়া ও দৌলতপুর গ্রামে প্রায় ১০ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়। প্রায় তিন দশক আগ থেকে ওই ময়লা এই স্থানে ফেলা হচ্ছে। আগে পৌরসভা থাকতেও এখানে ময়লা ফেলা হতো। ২০১১ সালে কুমিল্লা পৌরসভা ও কুমিল্লা দক্ষিণ পৌরসভা নিয়ে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন গঠিত হয়। এরপর থেকে ২৭ টি ওয়ার্ডের বেশির ভাগ ময়লা এবং সিটি কর্পোরেশনের বাহিরে অবস্থিত মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকার ময়লা ও ফেলছে এস্থানে। ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বর্জ্য ফেলার কারণে ঝাঁকুনিপাড়া ও দৌলতপুর গ্রামের পাশাপাশি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাজগড্ডা খামার কৃষ্ণপুর জগন্নাথপুর শুয়ারা নবগ্রাম বালুতুপা সহ আশেপাশের অনেক গ্রাম। এসব ময়লা আবর্জনার স্তুপ সিটি কর্পোরেশনের জায়গা ছাড়িয়ে ওই এলাকার বাসিন্দাদের বাড়ির আশপাশসহ সড়কের পাশে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা রিজিওনাল শাখার ভাষ্যে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টি নিয়ে ধূয়াশা সৃষ্টি করা হয়েছে। কিভাবে পরিবেশ দূষণ না করে ময়লা আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে সীমাবদ্ধ করে রাখা যায় প্রকৃতপক্ষে এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের কোন উদ্যোগ ছিল বলে বাপার স্বেচ্ছাসেবীদের জানা নাই। 
বর্তমানে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৮০ মেট্রিক টন ময়লা ভাগাড়ে ফেলা হচ্ছে। অনেকদিন যাবত এলাকাবাসী এর প্রতিবাদ করে আসছেন, সিটি কর্পোরেশনের বক্তব্য হচ্ছে তারা বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকল্প হাতে নিয়েছিল, সরকার পরিবর্তনের ফলে এটা কোন্ পর্যায়ে আছে সেটা কেউ জানে না। পরিবেশবিদরা মনে করে স্থগিত প্রস্তাবটি বর্তমান কর্তৃপক্ষ আবারো চেষ্টা করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে বাস্তবতার পর্যায়ে নিয়ে আসুক। নতুন প্রকল্পের প্রস্তাবনার মাধ্যমে হলেও বর্জ্য রিসাইকেল করে কিভাবে কাজে লাগানো সম্ভব সে চেষ্টা করে যতদ্রুত সম্ভব ১০ গ্রামের লোকজনকে সুস্বাস্থ্য ও সুন্দর পরিবেশে জীবনযাপনের নিশ্চয়তা বিধান করা হোক। 
লেখক: সাবেক অধ্যক্ষ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ












সর্বশেষ সংবাদ
অর্থ আত্মসাৎ মামলায় কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কারাগারে
হঠাৎ বন্ধ কুমিল্লা সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসের কার্যক্রম
ডা. প্রাণগোপালের অবরুদ্ধ মেয়েকে ৮ ঘন্টা পর উদ্ধার
ফোরলেনের ভেতরে অনিয়ম করলে কোন দয়ামায়া নাই: জেলা প্রশাসক
তিতাসে আসামী ধরতে গিয়ে অবরুদ্ধ পুলিশ যৌথবাহিনীর সহযোগিতায় ২ঘন্টা পর উদ্ধার
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
হঠাৎ বন্ধ কুমিল্লা সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসের কার্যক্রম
কুমিল্লায় ৫ অবৈধ ইটভাটা সিলগালা, ৫ লাখ টাকা জরিমানা
ফোরলেনের ভেতরে অনিয়ম করলে কোন দয়ামায়া নাই: জেলা প্রশাসক
বিএনপি’র পতাকায় মুড়িয়ে দাফন হতে চান সাক্কু
ডা. প্রাণগোপালের অবরুদ্ধ মেয়েকে ৮ ঘন্টা পর উদ্ধার
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২