কুমিল্লার
লাকসামে বেড়াতে আসা এক তরুণীকে তুলে নিয়ে সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী
তাজুল ইসলামের পরিত্যক্ত বাড়িতে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠেছে। এ অভিযোগে
পুলিশ অভিযান চালিয়ে এক নারীসহ ৫জনকে গ্রেপ্তার করেছে। সোমবার (১৭ মার্চ)
গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কুমিল্লার আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। বলে
জানিয়েছেন লাকসাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজনীন সুলতানা।
গ্রেপ্তারকৃতরা
হলো- লাকসাম উপজেলার কান্দিরপাড় ইউনিয়নের মনোহরপুর গ্রামের মৃত খলিলুর
রহমানের ছেলে মোহাম্মদ আলী (২৫), লাকসাম পৌরসভাধীন শ্রীপুর মধ্যপাড়ার মো.
মমিনুল হকের ছেলে সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক মো. মাসুদ (২৩), বাতাখালী
গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে মো. মনির হোসেন হৃদয় (২৩), উত্তর বিনই এলাকার মৃত
ছিদ্দিকুর রহমানের ছেলে মো. আল আমিন (২৩) এবং মধ্য লাকসাম এলাকার মৃত
মুস্তাফিজুর রহমান মজুমদারের স্ত্রী বিলকিছ আক্তার কল্পনা (৪০)।
পুলিশ,
স্থানীয় এলাকাবাসী ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, নোয়াখালী জেলার সোনাপুর
এলাকার এক তরুণী ও তার স্বামী গত ১৪ মার্চ ভোরে লাকসাম পৌর শহরের বাইপাস
মোড় থেকে একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশার ওঠেন। এ সময় সিএনজি চালিত অটোরিকশা
চালক মো. মাসুদ তাঁরা স্বামী-স্ত্রী কিনা জানতে চায় এবং সন্দেহ প্রকাশ করে।
সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক মো. মাসুদ অত্যন্ত কৌশলে তাঁদের লাকসাম পৌর
শহরের গন্ডামারা এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে আরও কয়েকজন মিলে তাঁদের সঙ্গে
থাকা ব্যাগ তল্লাশি করে। একপর্যায়ে পরিকল্পিতভাবে অভিযুক্তরা তাঁদের
স্বামী-স্ত্রীকে পাশবর্তী লালমাই উপজেলার মগবাড়ি এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে
স্বামীকে ফেলে রেখে ওই তরুণীকে পুন:রায় লাকসাম পৌরসভাধীন পাইকপাড়া এলাকায়
অবস্থিত সাবেক স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রী মো.
তাজুল ইসলামের পরিত্যক্ত বাড়িতে নিয়ে আসে। সেখানে সিএনজি চালিত অটোরিকশা
চালক মো. মাসুদ এবং তাঁর সহযোগী মোহাম্মদ আলী ওই তরুণীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ
করে।
পরবর্তীতে ওই তরুণীকে তারা লাকসাম পৌর শহরের ৮নং ওয়ার্ডের
'তালুকদার ভিলা' নামক একটি বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে বিলকিছ আক্তার কল্পনা
নামে এক নারীর ভাড়া বাসায় রেখে ওই তরুণীকে পুনরায় সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করা
হয়। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় পুলিশ ওই তরুণীকে উদ্ধার করেন।
এই ঘটনায় ওই তরুণীর মা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে লাকসাম থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
ভুক্তভোগী
ওই তরুণীর পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার আগেরদিন (১৩ মার্চ) তাঁরা
লাকসামে তাঁদের এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। পরদিন বাড়ি ফেরার পথে এই
ঘটনার শিকার হয়েছেন। এই ঘটনায় লাকসামে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
এই
ব্যাপারে লাকসাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজনীন সুলতানা জানান,
ভিকটিমের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ
করেছেন। দিনভর অভিযান চালিয়ে পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছেন।
সোমবার (১৭ মার্চ) সকালে গ্রেপ্তারকৃতদের কুমিল্লার বিজ্ঞ আদালতে পাঠানো
হয়েছে। পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মামলাটি তদন্ত করছেন। এ ক্ষেত্রে
ভিকটিমকে প্রয়োজনীয় আইনী সহায়তা প্রদান করা হবে।
উল্লেখ্য; গত বছরের ৫
আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের পর বিক্ষুব্ধ লোকজন সাবেক মন্ত্রী তাজুল
ইসলামের ওই বাড়িটিতে ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেন। বর্তমানে এখানে কেউ
থাকেন না। ফলে এটি এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে।
এদিকে লাকসামে বেড়াতে
আসা এক তরুণীকে তুলে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে ও বিচার দাবিতে
বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। তারা এ ঘটনায় জড়িতদের
দৃৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।