রামাদ্বান
মাসের শেষ মাগফিরাতের জু'মা আজ। ক্ষমার আশায় সারা বিশ্বের মানুষ মহান রবের
দরবারে অশ্রুশিক্ত নয়নে ক্ষমা চাইবে এবং নিজকে পাপমুক্ত করার আপ্রাণ
চেষ্টা করবে সেটাই স্বাভাবিক ও করা উচিত। মানুষ অন্যায় করবে, পাপ করবে,
অপরাধ করবে শয়তানের প্রবঞ্চনায় পড়ে। আর মহান রব ঐ অপরাধী বান্দাদেরকে ক্ষমা
করে দিবেন এই ঘোষনাও দিয়ে রেখেছেন। একাধিকবার পবিত্র কুরআনুল কারিমে ঘোষনা
করেছেন মহান আল্লাহ এই ক্ষমার কথা। তার রহমত থেকে নিরাশ না হওয়ার কথা।
তাইতো আমরা দো'য়ার মাধ্যমে বারবার যাই তাঁরই দরবারে ক্ষমা পাওয়ার আশায়।
তিনি ক্ষমাও করেন বারবার। কেননা মুসলমানদের একমাত্র আশ্রয়স্থল, ভরসাস্থল,
একমাত্র সহায় আল্লাহ। তিনি ছাড়া আর কেউযে নাই মুসলমানদের আকুতি মিনতি শোনার
মত। দুঃখ বুঝার মত। এখন প্রশ্ন থেকে যায় ক্ষমা পাওয়ার মত আমরা যোগ্য কিনা?
একদিকে আমরা নিজকে পাপ মুক্ত করার চেষ্টায় রত অন্য দিকে আমারই ভাই বোন, মা
বাবা, সন্তান তথা নিরপরাধ মানুষ পুরুষ নারী শিশু নির্বিশেষে তাঁদের রক্ত
ঝড়ছে ফিলিস্তিন ও গাজায় অবিরত। কাবা শরিফের ইমাম থেকে শুরু করে সবাই আরাম
আয়েশে ইফতারী সাহরী খেয়ে পেট ফুলিয়ে এসি গাড়িতে, এসি বাড়িতে, এসি মসজিদে
নামাজ দো'য়া করে অধির অপেক্ষায় থাকি মাগফিরাতের জন্য। অন্যদিকে মুসলিম নিধন
চলে নির্বিচারে সেদিকে বিন্দুমাত্র খবরও নাই তথাকথিত আমেরিকা ও ইসরাইলের
দালাল রাষ্ট্রগুলোর, দালাল ইমামগুলোর। মাগফিরাতের জন্য শতকোটি দোয়া করা
হলেও আমাদের মাফ হবেনা। কেননা ফিলিস্তিন ও গাজার মুসলমান নারি শিশুর আর্ত
চিৎকারে ভারী হয়ে আছে আকাশ বাতাস জমিন। ঐ ভারী স্তর ভেদ করে আমাদের দো'য়া ও
মাগফিরাতের জন্য কান্নাকাটি মহান রবের দরবারে পৌঁছাবেনা কোনদিনই। হয়তবা
আমরা আমাদের ব্যক্তিগত গুনাহ থেকে ক্ষমা পেতে পারি কিন্তু নির্যাতিত
মুসলমানদের পাশে না দাঁড়িয়ে তাঁদের পক্ষে জিহাদ না করে ঐ পাপ থেকে ক্ষমা
পাবনা কোনদিনই। নির্যাতিত ঐ সকল মানুষদের কথা মহান আল্লাহ নিজেই ঘোষনা করেন
এই ভাবে-আর তোমাদের কি হলো যে, আল্লাহর রাহে লড়াই করছনা দূর্বল সেই সকল
পুরুষ নারী ও শিশুদের পক্ষে যারা বলে হে আমাদের পালনকর্তা আমদেরকে এখানকার
এই অত্যাচারী অধিবাসী অধ্যুষিত জনপদ থেকে নিষ্কৃতি দান কর আর আমাদের জন্য
পক্ষালম্বনকারী নির্ধারণ করে দাও এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য
সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দাও। সুরা নিসা, আয়াত-৭৫। সারা বিশ্বের মুসলমান
কেউ কি এর দায় এড়াতে পারবে? শুধুমাত্র ইরান, ইয়েমেন, লেবানন, হামাস ও
হিযবুল্লাহর
কিছু প্রতিরোধ আমাদের চোখে পড়ে। আর অন্যরা সবাই ব্যস্ত নিজ নিজ স্বার্থ
নিয়ে। সৌদি আরব, মিশর, কাতার, বাহরাইন, লিবিয়া, ইরাক, জর্ডান, সিরিয়া,
সংযুক্ত আরব আমিরাত, পাকিস্তান ও তুরস্ক সব হিজরা রাষ্ট্রে পরিনত হয়ে আছে।
দেখেও না দেখার ভান করে পড়ে আছে। সকল মুসলিম বিশ্ব কি এতোই অসহায়? সবাই
ঐক্যবদ্ধ হয়ে যদি জিহাদে অংশগ্রহণ করতো তাহলে ইসরাঈল নামক সন্ত্রাসী এই
জাতি ও রাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্য থেকে নিশ্চিহ হয়ে যেত বহু আগেই। আরও আশ্চর্যের
বিষয় হলো সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে তারা আর সন্ত্রাসী লকব দিচ্ছে
মুসলমানদের উপর। আর এর সবকিছুই সম্ভব হচ্ছে মুসলমানদের পরস্পর বিরোধ ও
অনৈক্যের কারণে। যেখানে মহান আল্লাহ ও রাসুল করিম দঃ মুসলমানদের ঐক্যের
ব্যাপারে কতইনা সুন্দর সমাধান দিয়ে গেছেন। মহান আল্লাহর বানী-তোমরা সকলে
মিলে একত্রিত হয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের রুজ্জুকে আঁকড়ে ধর এবং পরস্পর
বিচ্ছিন্ন হয়োনা। সুরা আল ইমরান, আয়াত-১০৩। হাদিস শরিফে নূর নবিজী দঃ কত
সুন্দর ভাবে ঐক্যবদ্ধতার ব্যাক্ষা দিয়েছেন- মুমিন মুসলমানদের পরস্পরের
মধ্যে একে অপরের প্রতি সম্পূতি, দয়া ও মায়া
মমতার উদাহরণ হলো একটি
দেহের মত। যখন দেহের কোন অঙ্গ পিড়ীত হয় তখন তার দেহই পিড়ীত, অনিদ্রা ও
জ্বরে আক্রান্ত হয়। বুখারী শরিফ-৬০১১, মুসলিম শরিফ-৬৭৫১। অর্থাৎ সমগ্র
মুসলিম জাতি একটি দেহের মত। পৃথিবীর যে প্রান্তেই মুসলমানের উপর কোন
নির্যাতন হবে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে তা প্রতিরোধ করবে। কিন্তু আমরা মুসলমানরা
কি তা করতে পেরেছি। পারি নাই। এই মাগফিরাতের অংশে সারা বিশ্বের মুসলমান
গুনাহ থেকে মুক্তির গ্যারান্টির আশায় থাকলেও মুক্তি পায়নি গাজা ও
ফিলিস্তিনের বাসিসন্দারা ইসরাঈলী বর্বরতা থেকে। এর দায় সকল মুসলিম
রাষ্ট্রকে নিতে হবে। জবাব দিতে হবে প্রতিটি ফিলিস্তিনি রক্তের ফোঁটার।
পরিশেষে মহান রবের নিকট ফরিয়াদ- ওগো দয়াময় মাবুদ, রক্ষা কর ফিলিস্তিনিদের,
রক্ষা কর ভারতীয় মুসলিমদেরসহ সারাবিশ্বের নির্যাতীত মুসলমানদের। একমাত্র
তুমি ছাড়া কেউ নাই তাঁদের। ফিলিস্তিন স্বাধীন হোক, মুক্তি পাক। ইসরাঈল ও
তার দোসররা নিপাত যাক, ধ্বংস হোক।
প্রধান ইমাম ও খতীব, কান্দিরপাড় কেন্দ্রিয় জামে মসজিদ ও কেন্দ্রিয় ঈদগাহ, কুমিল্লা।