সমাজসেবা
অধিদপ্তরের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং গড়িমসিতে কুমিল্লায় ২৪৪টি এতিমখানায় ৯
মাস যাবত মিলছে না সরকারি ক্যাপিটেশন বরাদ্দের অর্থ। এতে জেলার এসব
এতিমখানায় অধ্যায়নরত ১৫ হাজার শিশু খাদ্য সংকটে দিন কাটাচ্ছে।
জানা
গেছে, গত ৯ মাসেরও বেশি সময় ধরে ঝুলে আছে দেশের ৪ হাজার ৫৫টি এতিমখানার
ক্যাপিটেশন বরাদ্দের অর্থ। এতে ১ লাখ ১৬ হাজার ৬৬৬ জন ক্যাপিটেশন
সুবিধাভোগী দুস্থ অসহায় শিশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে এতিমখানার মুহতামিম এবং
পরিচালকরা। আসছে ঈদের আগেই দুস্থ এবং এতিমদের বরাদ্দের অর্থ ছাড় দিতে সমাজ
সেবা অধিদপ্তরে লিখিত আবেদন করেও কোন সাড়া মিলছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা
গেছে, সারাদেশে ৪ হাজার ৫৫টি নিবন্ধিত ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ড প্রাপ্ত
বেসরকারি এতিমখানা রয়েছে। এসব এতিমখানার ১ লাখ ১৬ হাজার ৬৬৬জন শিক্ষার্থী
প্রতি মাসে ২হাজার টাকা করে ক্যাপিটেশন বরাদ্দ পায়। কুমিল্লার ২৪৪টি
এতিমখানায় ১৫ হাজার দুস্থ অসহায় এবং এতিম শিশু লেখা পড়া করছে। এরমধ্যে ৭
হাজার নিবাসী ক্যাপিটেশনের আওতায় রয়েছে।
সূত্র বলছে, সমাজ সেবা
অধিদপ্তর থেকে ৬ মাস পর পর ক্যাপিটেশনের বরাদ্দ ছাড় দেওয়ার কথা । সর্বশেষ
গত বছরের জুন মাসে বরাদ্দ ছাড় দেওয়া হয়। রীতি অনুযায়ী ডিসেম্বরের শেষ দিকে
এতিমদের বরাদ্দ ছাড় দেওয়ার কথা কিন্তু মার্চেও পাচ্ছে না ক্যাপিটেশনের
বরাদ্দ। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন এতিমখানার কর্তৃপক্ষ। যথা সময়ে বরাদ্দের
অর্থ না পেয়ে এতিমখানা গুলোতে সঠিক নিয়মে খাদ্য সরবরাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
এতে চলমান মাহে রমজান এবং আসছে ঈদে চরম খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে।
জেলার
মুরাদনগর উপজেলার কাজিয়াতল এতিমখানার পরিচালক মাওলানা ফারুক আহমেদ বলেন,
ধার দেনা করে আমরা এখন প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছি। যথা সময়ে বরাদ্দের অর্থ না
পেয়ে প্রতিষ্ঠান চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। বিধি অনুসারে ডিসেম্বরের ৩০ তারিখের
মধ্যে আমাদের বরাদ্দের অর্থ ছাড় দেওয়ার কথা। কিন্তু তারও তিন মাস অতিবাহিত
হয়ে গেছে। কিন্তু আমরা বরাদ্দের অর্থ পাচ্ছি না।
দেবিদ্বার উপজেলা
সদরের দারুল উলুম এতিমখানার পরিচালক হাফেজ আবু তাহের বলেন, চলমান রমজানে
নিবাসীদেরকে নিয়ে আমরা যে কত সমস্যায় আছি তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।
তাছাড়া সরকারি অনুদান পায় বলে এসব প্রতিষ্ঠানে সামাজিক অনুদান অনেক কমে
গেছে। তাই সরকারি বরাদ্দের উপরই আমাদের অনেকটা নির্ভর করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ
বেসরকারি এতিমখানা কল্যাণ পরিষদের সভাপতি কাজী লোকমান বলেন, নয় মাস
অতিবাহিত হয়ে গেছে কিন্তু আমরা এখনো ক্যাপিটেশনের অর্থ পাচ্ছি না। পবিত্র
রমজান মাসে নিবাসীদের খাবার জোগাতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। বিভিন্ন দোকানপাট
থেকে বকেয়া রেখে রেখে নিবাসীদেরকে কোনরকম চালাচ্ছি। আসছে ঈদের আগে বরাদ্দের
অর্থ না পেলে আমরা চরম সংকটে পড়বো। আমাদের চরম এ সংকটের বিষয়টি উল্লেখ করে
সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নিকট আমরা লিখিতভাবে আবেদন করেছি।
আমাদের জোরালো দাবী থাকবে ঈদের আগেই যেন এসব এতিমদের বরাদ্দ ছাড় দেওয়া হয়।
এ
বিষয়ে জেলা সমাজ সেবা অধিদফতরের উপ-পরিচালক নুরুল ইসলাম পাটোয়ারী জানান,
নিয়ম অনুযায়ী জানুয়ারির শুরুতেই এতিমখানা গুলোর ক্যাপিটেশন বরাদ্দের অর্থ
পেয়ে যাওয়ার কথা। কাগজপত্রের কোন জটিলতা থাকলে হয়তো সমস্যা হতে পারে। চলমান
সংকট উত্তরণ এবং যথাসময়ে যেন ক্যাপিটেশনের টাকা প্রতিষ্ঠানগুলো পেয়ে যায়
সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।