ঈদে
বাড়ি এসে মা বাবা স্ত্রী ও দুই কন্যাকে নিয়ে আনন্দ করবে এমন আশায় ছুটি
নিয়ে রেখেছিলো বেলাল হাসানের। তাই দুই মেয়ের সাথে, মা বাবার সাথে কত
পরিকল্পনা করা হলো। বাবার সাথে মোবাইল ফোনে জানায়, '২৫ তারিখ থেকে আমার
ছুটি মঞ্জুর হয়েছে। টাকা পাঠিয়েছি। আপনি আপনার মত করে সবার জন্য নতুন পোষাক
কিনে নিবেন। আমি আসছি। '
এতসব পরিকল্পনা করেও সীমান্তরক্ষী বাহিনী
বিজিবির সদস্য বেলালের আর বাড়ি ফেরা হলো না চাকরি ক্ষেত্র টেকনাফ থেকে
কুমিল্লার নিজ বাড়ি মুরাদনগরে।
গত শুক্রবার ২১ মার্চ গভীর রাতে টেকনাফ
নদীতে দায়িত্ব পালনকালে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবির সদস্য বেলাল হাসান
পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করেন বলে বিজিবি থেকে জানানো হয়। এমন সংবাদে নিহত
বেলালের পরিবারে বইছে শোকের মাতম। রবিবার ২৩শে মার্চ দুপুরে কক্সবাজারের
টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ গোলারচর এলাকায় বঙ্গোপসাগর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা
হয়েছে।
নিহত বিজিবি সদস্য মোহাম্মদ বেলাল হাসান মুরাদনগর উপজেলার দারোরা ইউনিয়নের কাজিয়াতল গ্রামের বজলুর রহমানের ছেলে।
বেলালের
স্ত্রীর কোলে তার ১৮ মাসের অবুঝ শিশু আনহা বিন হাসান। বাবার আদর সোহাগ
বুঝার বয়স হয়নি এখনো। তার আগেই বাবাকে হারিয়ে ফেলেছে সে। নিহত বেলালের আনহা
বিন হাসান ছাড়াও আরো একটি ৮ বছরের কন্যা সন্তান রয়েছে।
নিহত বেলালের
বাড়ী কাজিয়াতলে গিয়ে দেখা যায় পরিবারে চলছে শোকার্ত পরিবেশ। তার মা বাবা ও
স্ত্রী রোকসানা চিৎকার করে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। সন্তান হারা মা যেন
বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন।
নিহতের ভাই নাজমুল হাসান বলেন, শনিবার বিকেলে
বিজিবি থেকে আমাদের বাড়ীতে দুজন লোক আসে। এসে বলে যে আমার ভাই বেলাল হাসান
শুক্রবার রাতে কক্সবাজারের টেকনাফে রোহিঙ্গা উদ্ধার কালে নিখোঁজ হয়েছেন।
তাকে এখনো পাওয়া যায় নি। রবিবার দুপুরে আমরা কুমিল্লা বিজিবি ক্যাম্পে
যাওয়ার পরপর সেখানে খবর আসে যে রাখাইন এলাকায় আমার ভাইয়ের লাশ পাওয়া গেছে।
নিহতের
বাবা বজলুর রহমান বলেন, ঈদে বাড়ি আসবে আমার ছেলে। ফোনে আমাকে জানালো। আমি
কত খুশি হয়েছিলাম। আল্লাহ আমার ছেলেকে নিয়ে গেলো। আমার ছেলে কিভাবে মরলো?
আমি জানতে চাই। কথা দিয়েও আমার ছেলের বাড়ি ফেরা হলো না।
নিহতের স্ত্রী
রোকসানা খানম বলেন, কথা ছিলো ২৫ তারিখে ছুটি নিয়ে বাড়ীতে আসবে। বাড়ীতে ঈদ
করবে। এখন আমাকে সাগরে ভাসিয়ে সে চিরকালের জন্য ছুটি নিয়ে চলে গেছে। দুটি
অবুঝ শিশু সন্তান নিয়ে আমি এখন কোথায় দাঁড়াবো।
নিহত বেলালের ভাই নাসির
উদ্দিন জানান, রবিবার রাত আটটার দিকে লাশ নিয়ে কক্সবাজার থেকে কুমিল্লার
দিকে রওয়ানা হয়েছে। সোমবার দুপুরে লাশ দাফন করার কথা রয়েছে।
মুরাদনগর
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আব্দুর রহমান বলেন, টেকনাফে বিজিবি'র সিপাহী
মৃত্যুর খবর আমরা পেয়েছি। আমরা তার বাড়িতে সকল খোঁজখবর রাখছি। সরকারিভাবে
যে নির্দেশনা আসবে আমরা তা বাস্তবায়ন করবো।
বিজিবি জানায়,গত শুক্রবার
গভীর রাতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় কক্সবাজারের
টেকনাফ সমুদ্রে রোহিঙ্গাদের বহনকারী নৌকাডুবির ঘটনায় নারী-শিশুসহ ২৫ জন
রোহিঙ্গা জীবিত উদ্ধার করে। ওই সময় বিজিবির সদস্যসহ আরও বেশ কিছু রোহিঙ্গা
নিখোঁজ হন। রবিবার দুপুরে কক্সবাজারের টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ গোলারচর এলাকা
বঙ্গোপসাগরে নিখোঁজ থাকা বিজিবি সিপাহি মো. বেলাল হাসানের মরদেহ উদ্ধার
করা হয়েছে।