রাততো
অনেক আছে। কিন্তু শবে ক্বদরের মত রাততো আর একটিও নাই। তাইতো মুমিন
বান্দাগণ এই পবিত্র রজনীর অধির আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় থাকে আর প্রহর গণতে
থাকে কবে আসবে সেই বহুল প্রতিক্ষিত শবে কদর। প্রাণ উজাড় করে নিজকে বিলিয়ে
দিবে বান্দা তার প্রভুর সান্নিদ্ধ পেতে। মন খুলে বলবে আকুমি মিনতি করে তার
সব সুখ দুখের কথা। তিনিই তো সব কিছুর সমাধানকারী ও সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।
যদিও রামাদ্বানের শেষ দশকের বেজোড় রাত্রিতে শবে কদর তালাশ করতে নূর নবিজী
দঃ এরশাদ করেছেন তারপরও বিভিন্ন তাফসীর ও হাদিস শরিফের ব্যাক্ষা বিশ্লেষনে
২৬ রামাদ্বান দিবাগত রাতকেই শবে কুদর হিসাবে হক্কানী ওলামায়ে কেরাম মত
প্রকাশ করেছেন। যেমন সুরা কুন্দরের (৩০পারা) আয়াতে কারিমায় লাইলাতুল কুদর
শব্দটি এসেছে তিন বার আর এই লাইলাতুল কুদর শব্দে আরবী অক্ষর হলো ৯টি। এবার
৯কে ৩দিয়ে গুণ করলে হয় ২৭। অর্থাৎ ২৭রাম্বাদানের রাত হলো শবে ক্বদর। যেহেতু
আরবী তারিখ গণনা শুরু হয় রাত দিয়ে। সেই হিসাবে ২৬ রামাদ্বান দিবাগত রাত
শবে ক্বদর। আবার এই রাত কতক্ষণ স্থায়ী হয় তাও কুরআনুল করিমে ঘোষনা করা
হয়েছে। সালামুন "হিয়া" মাতুলায়িল ফাজর। এখানে "হিয়া" শব্দ দ্বারা লাইলাতুল
কুদরকে বুঝানো হয়েছে। আর এই "হিয়া শব্দটি এই সুরার শব্দ হিসাব করলে ২৭তম
শব্দ। এই হিসাবেও ২৬ রামাদ্বান দিবাগত রাতকেই বুঝানো হয়েছে। আবার বেজোড় রাত
হিসাবেও ঠিক আছে। যাইহোক, শেষ দশকের বেজোড় রাত্রিতে আমরা শবে ক্বদরের আশায়
যতটুকু সম্ভব ইবাদত করে তা পালন করব তা আপন জায়গায় ঠিক আছে। তবে ওলামায়ে
হক্কানীদের মতামতকে যথাযত গুরুত্ব দিয়েই আমরা ২৬রামাদ্বান দিবাগত রাতকে শবে
ক্বদর হিসাবে পালন করে আসছি। এরই ধারাবাহিকতায় আজ অর্থাৎ ২৭/০৩/২০২৫ইং
২৬রামাদ্বান বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত এই বৎসরের লাইলাতুল কদর বা শবে কদর।
আবার অপরদিকে জুমাতুল বিদার রাতও বটে। আলহামদু লিল্লাহ দু' দু'টি নিয়ামত
একসাথে পাওয়া গেল। শবে কুদর ও জুমা'তুল বিদার রাত্রি।
এই রাতগুলো
ইবাদতের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দান করেছেন। উদ্দেশ্য একটাই- এই
পাপ পঙ্কিলময় জীবন থেকে ফিরে এসে মহান রবের দিকে ধাবিত হওয়া। কোন বান্দা
যদি অবহেলার কারণে রামাদ্বান মাসকে নিজকে পরিবর্তন করার ও গুনাহমুক্ত করার
জন্য এই সুযোগ কাজে লাগাতে না পারে। কমপক্ষে এই রাতে হলেও যেন সে নিজকে
পরিশুদ্ধ করার সুযোগটি কাজে লাগায়। অন্যথায় তার জীবন সম্পূর্ণরুপে ব্যার্থ ও
অকার্যকর। কেননা ফেরেশতা তিন ধরণের ব্যাক্তির জন্য বদ দোয়া করেছেণ আর নূর
নবিজী দঃ তিন ব্যাক্তির জন্য আমিন বলেছেন। ঘটনাটি নিম্নরুপ। একদা রাসুল
করিম দঃ মসজিদের মেহরাবে উঠতেছেন আর আগে পরে কারও সাথে কোন প্রকার
কথাবার্তা ছাড়াই আমিন আমিন আমিন তিন বার বললেন। সাহাবায়ে কেরাম রাঃ
আশ্চার্য হয়ে গেলেন এবং এক পর্যায়ে দয়াল নবিজীর দঃ নিকট এর কারণ জানতে
চাইলে নূর নবিজী দঃ এরশাদ করলেন "আমার নিকট এইমাত্র জিবরাইল আঃ আসলেন এবং
তিন ধরণের ব্যাক্তির জন্য এই বলে বদ দোয়া করলেন যে, ০১. যে ব্যাক্তি
মা-বাবাকে পেলো কিন্তু তাঁদের খেদমত করে জান্নাত অর্জন করতে পারলোনা তাদের
উপর আল্লাহ তায়ালার অভিশম্পাত, আমি বললাম আমিন। ০২. যে ব্যাক্তি রামাদ্বান
মাস ও শবে ক্বদর পেল কিন্তু অহরহ এত সুযোগ পেয়েও নিজকে পরিবর্তন ও মহান
আল্লাহ
তায়ালাকে রাজি খুশি করতে পারলোনা তার উপর আল্লাহ তায়ালার অভিশম্পাত, আমি
বললাম আমিন। ০৩. যে ব্যাক্তি আপনি নূর নবিজীর দঃ নাম মুবারক পড়লো বা শ্রবণ
করলো অথচ আপনার উপর দরুদ ও সালাম পড়লোনা তার উপর আল্লাহ তায়ালার অভিশম্পাত,
আমি বললাম আমিন। দোয়া হোক আর বদ দোয়া হোক যা জিবরাইল আঃ করেন আর নূর নবিজী
দঃ আমিন বলেন আর যাই হোক সে দোয়া বা বদদোয়া কোনটাই বিফলে যাবেনা নিশ্চিত।
তাই
আসুন সবাই মিলে এই মহিমান্বিত রজনীকে ইবাদতের মাধ্যমে অতিবাহিত করি। খেয়াল
রাখতে হবে অহেতুক আলাপচারিতায়, আড্ডায়, এখানে সেখানে ঘুরাফেরা করে ও
মোবাইলে যেন এ রাত নষ্ট হয়ে না যায়। সারা রাত কান্নাকাটি করে মহান রবের
দিকে ছুটে আষি। তিনিইতো আমাদের একমাত্র আপন ও ভরসার সর্বোচ্চ উপায়।
প্রধান ইমাম ও খতীব, কান্দিরপাড় কেন্দ্রিয় জামে মসজিদ ও কেন্দ্রিয় ঈদগাহ, কুমিল্লা।