আজ ৭ এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। এ দিনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে আন্তর্জাতিক ও স্থানীয়ভাবে দিবসটি পালন করা হয়। ১৯৫০ সালের ৭ এপ্রিল থেকে বিশ্বজুড়ে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। ২০২৫ সালের বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের মূল ভাবনা মা ও শিশুর স্বাস্থ্য- “ঐবধষঃযু নবমরহহরহমং, যড়ঢ়বভঁষ ভঁঃঁৎবং” যদি বাংলায় বলি অর্থ দাঁড়ায় “সুস্থ সবল অভিযাত্রা, আশান্বিত ভবিষ্যৎ”। মা ও শিশুর স্বাস্থ্য হলো সুস্থ পরিবার ও সম্প্রদায়ের ভিত্তি, যা আমাদের সকলের জন্য আশাব্যঞ্জক ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।
শিশুর বিকাশে মায়ের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। আমরা জানি, মা ও শিশুর সম্পর্ক পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর ও অমূল্য। মাতৃগর্ভে থাকতেই এ সম্পর্কের পথচলা শুরু। এখানে একজন মাকে নানা রকম শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। শিশু জন্ম দেওয়ার পর থেকে মায়েরা সাধারণত দিনরাত তার সেবা-যত্নে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। মায়ের শারীরিক ও মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও বিষণ্নতা শিশুর প্রাক-জন্মকালীন যত্ন ও পুষ্টিকে প্রভাবিত করে শিশুর বিকাশে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। গর্ভে থাকাকালীন মায়ের শারীরিক সমস্যা যেমন: পুষ্টিহীনতা, রক্ত স্বল্পতা, ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, ইত্যাদি ভ্রূণের বিকাশ ও অগ্রযাত্রাকে প্রভাবিত করতে পারে। বিশেষ করে শিশুর শারীরিক কাঠামো গঠন এবং মানসিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। গবেষণায় দেখা যায়, গর্ভে থাকাকালীন মা যদি মানসিক চাপ, বিষন্নতা, উদ্বেগ ইত্যাদির মধ্য দিয়ে যান, সে ক্ষেত্রে শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। শিশুর মস্তিষ্কের আকার ছোট হওয়ার ফলে যে কোনো কাজ বুঝতে, কথা বলতে, সে অনুযায়ী সাড়া দিতে, লেখাপড়া করতে কিংবা কোনো দক্ষতা অর্জনে দেরি হয়। এই কারণে মায়ের সুস্থতা শিশুর বিকাশে ও অগ্রযাত্রার পূর্বশর্ত।
মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্য সেবার সমগ্র দিক নিয়ে একটি কার্যকর প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০২৫ সালে মাতৃ ও নবজাতকের স্বাস্থ্যের উপর এক বছরব্যাপী প্রচারণার সূচনা করবে, যার মধ্যে প্রসব পূর্ব ও প্রসব পরবর্তী যত্ন, প্রসূতির জরুরি সেবা, প্রসূতির জন্য দক্ষ পেশাদার সেবাকর্মী ও পরিবার পরিকল্পনার মত বিষয় রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস এর লক্ষ্য হল স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী ও নীতি নির্ধারকদের সাথে ঘনিষ্টভাবে কাজ করার মধ্য দিয়ে একটি সবল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলা, যা সুস্থ গর্ভাবস্থা ও নিরাপদ প্রসব নিয়ে বিভিন্ন প্রচারণার মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণের পরিবেশ নিশ্চিত করবে। স্বাস্থ্যকর সূচনা, আশাবাদী ভবিষ্যৎ শীর্ষক এই প্রচারণা সরকার এবং স্বাস্থ্য সম্প্রদায়কে প্রতিরোধযোগ্য মাতৃ ও নবজাতকের মৃত্যু বন্ধ করার প্রচেষ্টা জোরদার করার এবং মহিলাদের দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য ও সুস্থতাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানাবে।
লেখক: সহকারী রেজিস্ট্রার, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা।