ঘাটতি বাণিজ্য থাকা দেশগুলো থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন মাত্রায় শুল্কারোপের কারণে বিশ্বব্যাপী এক শুল্কঝড় তৈরি হয়েছিল। বাংলাদেশি পণ্য আমদানির ওপরও মার্কিন প্রশাসন ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল। তা নিয়ে আমাদের রপ্তানি খাতে উদ্বেগ বেড়ে গিয়েছিল। চীন ছাড়া অন্য দেশগুলোর পণ্যের ওপর আরোপিত অতিরিক্ত শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করায় অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও স্বস্তি ফিরে এসেছে।
তবে এ সময়ও ১০ শতাংশ শুল্ক বহাল থাকবে এবং তারও কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে আমাদের রপ্তানিতে। অবশ্য চীনের পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপিত হওয়ায় অন্তত আগামী ৯০ দিন বাংলাদেশ কিছুটা হলেও বাড়তি সুবিধা পেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা বাড়াতে হবে। বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বৃদ্ধির যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা বাস্তবায়ন করতে হবে।
অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুল্কঝড়ে যেভাবে পুরনো ক্রয়াদেশ বাতিলের হিড়িক পড়েছিল, তিন মাসের স্থগিতাদেশের কারণে তা কিছুটা হলেও কমবে। বাড়তি শুল্ক স্থায়ীভাবে প্রত্যাহারে প্রস্তুতি নেওয়ার সময় পেল বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রকে দেওয়া প্রধান উপদেষ্টা ও বাণিজ্য উপদেষ্টার দুটি চিঠির প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে হবে, দ্রুত আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক আলোচনার উদ্যোগ নিতে হবে। বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘আমাদের পাইপলাইনে যে রপ্তানি আদেশগুলো ছিল, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় তৈরি হয়েছিল।
বার্ধিত শুল্ক তিন মাস স্থগিত করায় ক্রয়াদেশ স্থগিতের পরিমাণ অনেকটাই কমবে। এই বিরতি বাংলাদেশকে প্রস্তুতির জন্য যথেষ্ট সময় ও সুযোগ করে দিয়েছে।’
বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো হঠাৎ করেই বাংলাদেশি পণ্যে অতিরিক্ত শুল্কারোপের ঘোষণা আসে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২ এপ্রিল এক নির্বাহী আদেশে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। এই ঘোষণার পরপরই বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা রীতিমতো শঙ্কা প্রকাশ করতে শুরু করেন।
এমন পরিস্থিতিতে গত ৭ এপ্রিল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠিয়েছিলেন বাংলাদেশের পণ্যের ওপর আরোপিত ৩৭ শতাংশ শুল্ক অন্তত তিন মাসের বিরতির জন্য। ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর প্রধান উপদেষ্টা এক্সে বলেছেন, ‘ধন্যবাদ, মিস্টার প্রেসিডেন্ট, আমাদের শুল্কসংক্রান্ত ৯০ দিনের বিরতির অনুরোধে ইতিবাচক সাড়া দেওয়ার জন্য। আমরা আপনার বাণিজ্যিক এজেন্ডাকে সমর্থন জানাতে আপনার প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
যুক্তরাষ্ট্রের এই স্থগিতাদেশের ফলে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা নিজেদের বাণিজ্যের ধারাবাহিকতা এবং পরবর্তী কৌশল প্রয়োগের জন্য কিছুটা বাড়তি সময় পাবেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অতিরিক্ত শুল্কারোপের বিষয়টি নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে এবং একটি স্থায়ী সমাধানে আসতে হবে। তাঁরা মনে করেন, সরকারের উচিত একটি উচ্চ পর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠন করা, যেখানে সরকারি সংস্থা, রপ্তানিকারক, শিল্প সংগঠন, নীতি-গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং কূটনৈতিক প্রতিনিধিরা একত্রে কাজ করতে পারবেন। এই টাস্কফোর্সের কাজ হবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আসন্ন বাণিজ্য আলোচনা ও নীতিনির্ধারণের জন্য একটি বাস্তবসম্মত ও সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা তৈরি ও বাস্তবায়ন করা। আমরা মনে করি, সরকারের উদ্যোগে এই সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান অবশ্যই আসবে।