বছর
ঘুরে আবারো ফিরে এসেছে বাংলা নববর্ষ। তবে এবারের বর্ষবরণ বাংলাদেশের সকল
নাগরিক, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের কাছে অন্যরকম এক উৎসবের আবহ তৈরি
করেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এই প্রথমবারের মত দেশের
সকল নাগরিক, সকল সম্প্রদায় ও নৃগোষ্ঠী ঐক্যবদ্ধভাবে আজ সোমবার সর্বজনীন
লোকউৎসব ‘পহেলা বৈশাখ’ উদযাপনকরবে।
এ উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ
সেজে উঠেছে নতুন সাজে, নেয়া হয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচি। জাতির শাশ্বত ঐতিহ্যের
প্রতীক এ দিনটি উপলক্ষে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
ঋতুর ওপর
নির্ভরশীল কৃষিকাজ, আর কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল খাজনা আদায়। কৃষিনির্ভর
বাংলার মানুষের সুবিধার্থে মোঘল সম্রাট আকবর বাংলা সন প্রবর্তন করেন। হিজরি
চান্দ্র সন ও বাংলা সৌর সনের ওপর ভিত্তি করে প্রবর্তিত নতুন সনটিই একসময়
‘বঙ্গাব্দ’ নামে পরিচিত হয়।
বহু আগে থেকেই বাংলার কৃষক ও গৃহস্থরা চৈত্র
মাসের শেষদিন ‘চৈত্রসংক্রান্তি’ পালন করতেন। কৃষকেরা এদিন ভূস্বামীদের
হাতে বাকি থাকা সকল খাজনা তুলে দিতেন, আর ব্যবসায়ীরা পুরোনো বছরের সকল
লেন-দেনের হিসাব চুকিয়ে নতুন বছর উপলক্ষে খুলতেন লালসালু মোড়ানো নতুন
হালখাতা, যা এখনো ধরে রেখেছেন বাংলার অনেক ব্যবসায়ী।
বছরের প্রথম
দিনটিকে আরো উৎসবমুখর করে তোলে শোভাযাত্রা ও বৈশাখী মেলা। এগুলো মূলত
সর্বজনীন লোকজ উৎসব। বাঙালির আনন্দঘন লোকায়ত সংস্কৃতির ধারক গ্রামীণ বৈশাখী
মেলাগুলোতে মেলে স্থানীয় কৃষিজাত দ্রব্য, কারুপণ্য, লোকশিল্পজাত পণ্য,
কুটির শিল্পজাত সামগ্রী, সব প্রকার হস্তশিল্পজাত ও মৃৎশিল্পজাত সামগ্রী,
খেলনা এবং বিভিন্ন লোকজ খাদ্যদ্রব্য যেমন: চিড়া, মুড়ি, খৈ, বাতাসা, বিভিন্ন
প্রকার মিষ্টি প্রভৃতির বৈচিত্র্যময় সমারোহ। আরো থাকে নাগরদোলা, পুতুলনাচ,
যাত্রা, লোকজ গানের আসরসহ নানান বিচিত্র বিনোদন।
যুগ যুগ ধরে চলে আসা এ
আনন্দ উৎসবটি একসময় আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে
মিশে যায় এবং বাংলার চিরাচরিত এ অনুষ্ঠানটি এখনও পালিত হচ্ছে। এরই
ধারাবাহিকতায় অন্যান্য বছরের মতন এবারো দেশে নানান আয়োজনে পালিত হবে দিনটি।
সরকারের
নেয়া কর্মসূচি অনুযায়ী, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,
জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, মহানগর ও পৌরসভা এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন
কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে।
আজকের এই বিশেষ দিনে সবার একটাই চাওয়া, ‘মুছে
যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা/অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।’ নববর্ষে আমাদের অগণিত
পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ীদের জানাই নতুন বছরের আন্তরিক শুভেচ্ছা।
শুভ নববর্ষ ১৪৩২।