প্রদীপ
মজুমদার : কুমিল্লার লালমাইয়ে নিখোঁজের ৯মাস পর হালিমাতুছ সাদিয়া (৫)
নামের এক শিশুর মাথার খুলি ও ৪টি হাড় উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার (১৪ এপ্রিল)
দুপুরে লালমাই থানার সেকেন্ড অফিসার আবদুল্লাহ আল ফারুক তথ্যটি নিশ্চিত
করেছেন।
পুলিশ ও শিশুটির পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার পেরুল
উত্তর ইউনিয়নের মধ্যম ছিলোনিয়া গ্রামের দিঘির পানি শুকিয়ে যাওয়ায় গত
কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন খন্ডিত অংশে মাছ ধরছে গ্রামবাসী। রবিবার বিকেলে দিঘির
পূর্ব-দক্ষিণের একটি খাদে (গর্তে) মাছ ধরছিলেন ছিলোনিয়া গ্রামের কলিম
উদ্দিন। মাছ ধরতে গিয়ে তিনি কচ্ছব সদৃশ একটি বস্তু দেখতে পেয়ে শুকনো স্থানে
ছুড়ে মারেন। পানি দিয়ে পরিষ্কার করার পর তিনি দেখেন এটি কচ্ছব নয়, কোন
শিশুর মাথার খুলি। তখন তিনি ওই খাদে আবার খুঁজতে নামেন এবং ৪টি হাড় খুঁজে
পান।
খবর পেয়ে রবিবার রাত ১০ টায় লালমাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা
(ওসি) মো. শাহ আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ওই সময় নিখোঁজ শিশু হালিমাতুছ
সাদিয়ার বাবা আকতার হোসেন এবং মা আয়েশা ছিদ্দিকার উপস্থিতিতে লালমাই থানার
সেকেন্ড অফিসার আবদুল্লাহ আল ফারুক মাথার খুলি ও হাড়গুলো উদ্ধার করেন।
নিখোঁজ
শিশুর মা আয়েশা ছিদ্দিকা সাজু বলেন, গত বছরের ১৫ জুলাই বিকেলে আমার মেয়েকে
বাড়ি থেকে অপহরণ করা হয়েছিল। তখন আন্দোলনের কারনে পুলিশি কার্যক্রম প্রায়
স্থগিত ছিল। মেয়েকে উদ্ধারে তখন পুলিশের কোন হেল্প পাইনি। থানায় শুধু একটি
সাধারণ ডায়েরী করেছি। পরবর্তীতে আমি কুমিল্লার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন
আদালতে আমার প্রতিবেশি হারুনুর রশিদ ও নুরুন্নাহারের নাম উল্লেখ করে
অপহরণের একটি মামলা দায়ের করি। সেই মামলা তদন্তাধীন অবস্থায় পিবিআই,
কুমিল্লার আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালতে হাজির হলে গত ১৩ এপ্রিল বিচারক লালমাই
উপজেলার ভুশ্চি গ্রামের ইমাম হোসেনের স্ত্রী খাদিজা জাহান রিয়াকে গ্রেফতার
করে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। গ্রেফতার খাদিজা আমার বড় মেয়ে ফাতেমার
প্রাক্তন স্বামীর বড় বোন।
তিনি আরো বলেন, আমার ভাশুরের পরিবার ও আমার
বড় মেয়ের প্রাক্তন স্বামীর পরিবারের সাথে আমাদের দ্বন্ধ ও মামলা চলমান।
আমার শিশু মেয়ে কারও ক্ষতি করেনি। শুধুমাত্র পারিবারিক দ্বন্ধের কারনে
নিষ্পাপ শিশুটিকে তারা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। অপহরণের কয়েকমাস পরেও
গ্রেফতার হওয়া খাদিজা আক্তারের কুমিল্লা ক্যান্টেন্টমেন্ট এলাকার বাসায়
আমার নিখোঁজ মেয়েকে ওই বাসার মালিক দেখেছিল। খাদিজা তখন আমাদের বলেছিল,
আমার বড় মেয়ে ফাতেমাকে পূর্বের স্বামীর ঘরে ফিরিয়ে দিলে ছোট মেয়ে হালিমাকে
ফিরে পাওয়া যাবে। আমার কাছে সকল কথার অডিও রেকর্ড সংরক্ষিত আছে।
পেরুল
উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান এনায়েত উল্যাহ বলেন, শিশুটি
নিখোঁজের খবর পেয়ে গত বছরের ১৫ জুলাই সন্ধ্যা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত
লাকসামের ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দিঘিসহ গ্রামের তিনটি পুকুরে সন্ধান
করেন। তখন দিঘির পশ্চিম-দক্ষিণ পাড়ে শিশুটির পায়ের জুতা পাওয়া গিয়েছিল।
দিঘিতে কচুরি ফেনা ভরপুর ছিল। আর এখন দিঘির পূর্ব-দক্ষিণ অংশের খাদে
শিশুটির খুলি ও হাড় পাওয়া গিয়েছে। পুলিশ তদন্ত করে সত্যটা বের করুক। প্রকৃত
অপরাধীর ফাঁসি চাই।
লালমাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহ
আলম বলেন, শিশু হালিমা নিখোঁজের ৯মাস পর তার বাড়ির পূর্ব পাশের দিঘি থেকে
একটি মাথার খুলি ও ৪টি হাড় উদ্ধার করা হয়েছে। খুলিটি তার কি-না বিষয়টি
নিশ্চিত হতে শিশুর মা অথবা বাবার ডিএনএ টেস্টের জন্য সেম্পল পাঠানো
প্রক্রিয়াধীন। এছাড়া অপহরণের ঘটনায় যেহেতু আদালতে মামলা চলমান ও তদন্তাধীন
সেহেতু আমরা নতুন করে এখনই কোন মামলা নিবো না।