ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য সমীকরণ যে এত কঠিন ছিল তাদের ব্যাটিংয়ে সেভাবে তা বোঝাই যায়নি। একেবারে সাবলীল ব্যাটিংয়ে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যান ক্যারিবীয় ব্যাটাররা। অধিনায়ক হেইলি ম্যাথিউস কিংবা শ্যানেল হেনরি সবার ব্যাটেই ছিল আত্ববিশ্বাসের ছোঁয়া।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত হিসাবে একটু গোলমালই হয়ে গেল। সমীকরণ বলছিল, ১১তম ওভারের ৫ম বলে চার এবং ৬ষ্ঠ বলে ছক্কা হলেই কেবল বিশ্বকাপে যেত ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু ৫ম বলেই সরাসরি ছয় হাঁকানোর ফলে ম্যাচ জিতলেও মুহূর্তটা আর উইন্ডিজ নারীদের পক্ষে থাকেনি।
নেট রানরেটে এগিয়ে থেকে বাংলাদেশ চলে গেল নারী বিশ্বকাপের মূলপর্বে। এই ম্যাচের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ নারীদের নেট রানরেট হয়েছে ০.৬৩। আর বাংলাদেশের নেট রানরেট ০.৬৪।
থাইল্যান্ডের দেওয়া ১৬৭ রানের টার্গেট ১০ দশমিক ৫ ওভারে শেষ করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে দুর্দান্ত মারকুটে এই ব্যাটিংটাও এদিন কাজে লাগল না তাদের।
নিজেদের ম্যাচে বাংলাদেশ দিনের শুরুতে হেরে গিয়েছিল পাকিস্তানের কাছে। ৭ উইকেটে হার দেখতে হয়েছিল টাইগ্রেসদের। তারপরও আশার প্রদীপটা একেবারেই নিভে যায়নি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের নারীদের হার কিংবা নেট রানরেটে পিছিয়ে থাকা-এর যেকোনো একটি ঘটলেই জ্যোতির দল পৌঁছে যাবে বিশ্বকাপে-এটাই ছিল সমীকরণ।
সেই সমীকরণ বাংলাদেশ নিজেদের পক্ষে দেখতে শুরু করে থাইল্যান্ডের ব্যাটার নাত্তাখাম চাংথামের কল্যাণে। তার অসাধারণ এক ফিফটিতে ভর করে উইন্ডিজ নারীদের বিপক্ষে থাইল্যান্ডের স্কোর হয় ১৬৬। নেট রানরেট এগিয়ে নিতে হলে ক্যারিবীয়দের যা পেরোতে হবে ১০.১ ওভারেই! যা ছিল বেশ কঠিন। বাংলাদেশ আশা দেখে সেখান থেকেই।
থাইল্যান্ডের ইনিংস অবশ্য শেষ হতে পারত আরও অনেক আগেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের নারীদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে একসময় ৮৫ রানেই ৭ উইকেট হারায় থাইল্যান্ড। চারে নামা চাংথাম একাই ছিলেন প্রাচীর হয়ে। খেলেন ৬৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংস।
শেষদিকে থাই নারীদের আর কেউ দুই অঙ্কের ঘরে যেতে না পারলেও বলের পর বল খেলে গিয়েছেন চাংথাম, আর সেটাই বাংলাদেশের স্বপ্নটা উজ্জ্বল করে।
বহু জটিলতার পর জানা যায়, ১০.১ ওভারে ১৬৭ রান করতে হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। সেটা ১১ ওভার পর্যন্ত যেতে পারে, তবে স্কোর হতে হবে ১৭২। অর্থাৎ ওয়েস্ট ইন্ডিজ জয়টা এমনভাবে তুলতে হবে যাতে ১১ ওভার শেষে স্কোর ১৭২ হয়। এটা সম্ভব ছিল এভাবে- স্কোর ১৬৬তে লেভেল হওয়ার পর জয়সূচক রানটা নিতে হবে ৬ মেরে! সেটা আর হয়নি। ১১তম ওভারের ৫ম বলে এসে স্কোর লেভেল (১৬৬) করার জন্য ক্যারিবীয়দের দরকার ছিল ৪ রান। কিন্তু তারা হাঁকায় ছক্কা! এতে জয় চলে আসে, কিন্তু ১৭২ আর করার সুযোগ থাকে না। ফলে নেট রানরেটে তারা পিছিয়েই থাকে বাংলাদেশের চেয়ে।
এর আগে ১৬৬ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে দারুণ ব্যাটিং উপহার দেন ক্যারিবিয়ান দুই ওপেনার হেইলি ম্যাথিউস আর কিয়ানা জোসেফ। তার ছিলেন দুর্দান্ত আগ্রাসী। ১২ বলে ২৬ করে কিয়ানা থামলেও অধিনায়ক হেইলি ছুটছিলেন দুর্বার গতিতে। ৭ম ওভারের শেষ বলে থামে তার ২৮ বলে ৭০ রানের ইনিংস। বাংলাদেশের স্বপ্নটাও উজ্জ্বল হয় তখন।
কিন্তু তিনে নামা শ্যানেল হাল ছাড়ার নন। ১৭ বলে ৪৮ রান করেন তিনি। উইন্ডিজ নারীদের চার-ছয়ের কাছে তখন বাংলাদেশের দর্শকরা অসহায়। প্রতিটা ডট বল যেন টাইগ্রেসদের জন্য আশীর্বাদ।
১০.১ ওভারে উইন্ডিজের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৫৭। পরের বলেই বাউন্ডারি লাইনে ধরা পড়েন শ্যানেল হেনরি। আলিয়াহ অ্যালেইন এসে প্রথম বলে চার মেরে জমিয়ে দেন সমীকরণ। পরের বলে সিঙ্গেলস হয়ে স্ট্রাইকে আসেন স্টেফেন টেইলর। উইন্ডিজের রান ছিল ১৬২। এখান থেকে ১ চারে ১৬৬ এবং ১ ছক্কায় ১৭২ রান হলেই কেল্লা ফতেহ।
কিন্তু চারের উদ্দেশ্যে হাঁকানো স্টিফেন টেইলরের শটটি সরাসরি মিড অফের ওপর দিয়ে চলে যায় বাউন্ডারি লাইনের বাইরে। ছক্কা হাঁকিয়ে জয় নিশ্চিত করলেও উইন্ডিজ নারীরা বিশ্বকাপটা মিস করে যায় ০.০১ রানরেটের জন্য। ১ বলের সমীকরণে বাংলাদেশের ঠাঁই হয় আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপে।