রোববার ২০ এপ্রিল ২০২৫
৭ বৈশাখ ১৪৩২
অন্তর্দীপ্ত আলী হোসেন চৌধুরী
জুলফিকার নিউটন
প্রকাশ: রোববার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫, ১:০৭ এএম আপডেট: ২০.০৪.২০২৫ ১:৪৭ এএম |


 অন্তর্দীপ্ত আলী হোসেন চৌধুরী যিনি শ্রদ্ধার যোগ্য তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে আমরা আমাদের বিচার বিবেচনার পরিচয় দিই। ভক্তি বিচারবিমুখ, প্রকৃতে অপ্রাকৃতের লক্ষণ আরোপ করে, লৌকিকের ভিতরে অলৌকিকের উপস্থিত কল্পনা করে, মানুষকে অবতার, গুরু অথবা পীর বানিয়ে ভক্তি ভক্তকে মোহগ্রস্ত করে এবং প্রায় ক্ষেত্রেই ভক্তিভাজনকে স্বকামী ও প্রমত্ত করে তোলে। অপরপক্ষে শ্রদ্ধার নির্ভর যুক্তিবিচারের উপরে। গুণের নির্ণয়, উৎকর্ষের নিরুপন, যোগ্যতার নির্ধারণ এ সবই বিচার সাপেক্ষ। আমরা তাঁকে শ্রদ্ধা করি যাঁর জীবনে এবং ক্রিয়াকলাপে মানবীয় বৃত্তিসমূহের উৎকর্ষ দেখতে পাই। তিনি উত্তমবলে ক্রটিহীন নন। তাঁর ভাল গুণকে ভাল এবং ত্রুটিকে ত্রুটি বলবার দায়িত্ব ও অধিকার শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের দ্বারা বিসর্জিত হয় না। শ্রদ্ধার ভিতর দিয়ে তাঁর কাছে আমরা আমাদের ঋণ স্বীকার করি এবং তাঁর উৎকর্ষের মানদন্ডে আত্মসমীক্ষায় উদ্বুদ্ধ হই।

শিল্পী হিসেবে, ভাবুক হিসেবে আলী হোসেন চৌধুরী আমাদের বিশেষ শ্রদ্ধাভাজন। এদেশের শিক্ষিত স্ত্রী পুরুষ যদি নিজেদের নাগরিক  দায়িত্ব সমন্ধে যথেষ্ঠ হতেন তাহলে অনেক পূবেই অনেক ব্যাপক ভাবে এদেশে শিক্ষিত সমাজ তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের ব্যবস্থা করতেন। অন্যান্য কারণ ছাড়াও বাঙালি জীবনে সততা মননশীলতা ও উদারতার প্রতিষ্ঠা যাদের কাম্য, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের পুষ্টি যাদের অভিষ্ঠ কবি শিক্ষাবিদ, সাহিত্য ও সংস্কৃতির সুকৃতির স্মারক হিসেবেই আলী হোসেন চৌধুরীর জয়ন্তী আমাদের কৃত্য।
 অন্তর্দীপ্ত আলী হোসেন চৌধুরী
আলী হোসেন চৌধুরী তাঁর সাহিত্যিক জীবনের প্রথমেই শব্দের প্রেমে পড়েছেন। তাঁর কাছে শব্দ সুন্দর, উজ্জ্বল ও লাবণ্যময়, তিনি শব্দের আলো ছড়াতে চেয়েছেন দূরে, আর শব্দের বিভায় কাছে আনতে চেয়েছেন সোপন ; সেজন্য শব্দের বিবর্ধমান বিবরণ, ধ্বনি আর আবেগ তাঁকে উৎপন্ন করেছে শস্যের মতন। তিনি বারবার নিজেকে ফলিয়েছেন, শব্দের মধ্যে দিয়ে তিনি আবিষ্কার করতে চেয়েছেন নিজেকে ও অন্যকে, এবং এই অন্যটি তিনি নিজেই : অন্যের আয়নায় তিনি নিজেকে দেখেছেন, নিজেরই কথা বলা শুনেছেন, দেখেছেন শব্দে তৈরি হচ্ছে জগৎ সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। কিংবা নিশীথের ভীষণ থেকে বদান্য দিন পর্যন্ত, শব্দে জেগে ওঠে উষ্ণতা, শব্দে চঞ্চল হয় সর্বজীব, শব্দে লিপ্ত হয় মানুষেরা। সেজন্য আলী হোসেন চৌধুরীর প্রাথমিক নায়কেরা নিঃসঙ্গ, ভাবনায় তারা সচেষ্ট, অনুসন্ধানে সুখি, তাদের খোঁজের লক্ষ্য : নিজেদের মানস, শব্দ দিয়ে সেই মানসে যাওয়া যায়, সেই লক্ষ্যের টানে তারা আবেগে উত্তাল, বারবার ভেঙে যায় সাংসারিক বাস্তব, শব্দ ছড়িয়ে ছিটিয়ে তারা যায়, সেজন্য তথ্য অকিঞ্চিত্বর, তারা মেলাতে চায় বিভিন্ন প্রতিষঙ্গ, সেজন্য শব্দ দিয়ে তারা ঘুরে-ঘুরে তাকায় নিজেদেরই দিকে। এভাবে আলী হোসেন চৌধুরী সাহিত্যে এক ধরনের চরিত্র তৈরি করেছেন, চেয়েছেন : শব্দ দিয়ে নড়ানো যায় কি দেহের কিংবা সমাজের ভিত? শেষ পর্যন্ত, আলী হোসেন চৌধুরীর  অন্তিম চরিত্ররা হয়ে ওঠে বাকপ্রেমিক, শব্দেরই কারিগর; কারণ। একটাই : আলী হোসেন চৌধুরী নায়কদের মধ্যে দিয়ে তার গন্তব্যে পৌঁছেছেন। শব্দ প্রেম আসলে ভাষারই প্রেম, আর ভাষা চর্চা তাঁকে ভাষার মূলে নিয়ে যায়। তিনি শুরু করেছেন নিঃসঙ্গ আবেগ নিয়ে, সেজন্য প্রাথমিকভাবে তাঁর শব্দ উত্তাল কিংবা অস্থির, উজ্জ্বল ও বিচ্ছুরিত, কিন্তু অন্তিমে, গন্তব্যে পৌঁছে তিনি ঘন আর সংহত, তিনি নিজের মধ্যে সংহার করেছেন তার আবেগের উত্তালতা, সংবরণ করেছেন উচ্ছ্বাসের অমিতাচার, বদলে লাভ করেছেন ভাষার সংহতি আর বেগ, দূরস্পর্শী ইঙ্গিত আর রীতির ঘনত্ব, সেজন্য শেষ পর্যায়ে তাঁর নায়কেরা কিংবা তিনি শব্দকে ভাষার মধ্যে শৃঙ্খলায় প্রতিষ্ঠিত করতে তৎপর, ঐতিহ্যের খোঁজে বর্ধিত বেগ, এভাবেই আলী হোসেন চৌধুরী শব্দের গন্তব্যে পৌঁছে ভাষার উৎসে নিজেকে নিয়ে গেছেন।
আলী হোসেন চৌধুরী নিশ্চিতভাবেই ব্যক্তি স্বাতন্ত্রবাদে বিশ্বাসী। তাঁর অভিজ্ঞতা সংগ্রহের ধরণ একান্তভাবে ব্যক্তিক, জগৎ-সংসার সম্পর্কে তাঁর জ্ঞান ও তাঁর কবি কল্পনার মধ্যে একটা ফারাক আছে, কোনো সাঁকো নেই দুইয়ের মধ্যে, সেজন্য আলী হোসেন চৌধুরীর পারাপার নেই বিষয় বিশ্বের সঙ্গে ব্যক্তিক বিষয়ীর, তাই তাঁর বিচ্ছিন্নতাবোধে তাঁর অভিজ্ঞতার শুদ্ধি ঘটায় না, তিনি নিজেকে কখনো ছাড়তে পারেন না। তাঁর নিজের প্রতি ভালবাসা তীব্র, জ্বলন্ত, প্রখর, সেজন্য তাঁর রচনায় বিস্ময়কর নাটকীয়তা ও নৈপুণ্য জ্বলজ্বল করে, কিন্তু তাঁর আত্মপ্রেম, লোভ, আসক্তি তার শিল্প জিজ্ঞাসার চৈতন্যের শুদ্ধতা তৈরি করে না, তিনি থেকে যান অতুলনীয় কুশলী হিসাবে, তার শিল্পের নন্দনতত্ত্ব চমকের খোঁজে ঘুরে বেড়ায়, সমগ্র জীবনের বদলে মুহূর্তের সন্ধানে তিনি পশ্চিমী সাহিত্যের বিভিন্ন ঝোকে তাল মেলাতে থাকেন, এভাবেই তাঁর কাজে এসে যায় ব্যক্তিগত ঝোঁকের প্রবলতা, সেজন্য তাঁর মনোভঙ্গি থেকে থেকে আমাদের চমকিত করে, আমরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যাই, তাঁর ভাষা আমাদের দখল করে, কিন্তু তার অভিজ্ঞতার বয়স বাড়ে না কারণ হয়তো তাঁর ব্যক্তিক বিচ্ছিন্নতাবোধ, তার অভিজ্ঞতার ব্যক্তিক প্রাধান্য, তাঁর নন্দনতত্ত্বের আত্মসর্বস্বতা। অথচ আলী হোসেন চৌধুরীর ভাষা, শব্দ ক্ষেত্রে নির্লোভ হতে পেরেছেন শেষ পর্যন্ত, ভাষা জিজ্ঞাসায় উপলব্ধি করেছেন ভাষায় চিত্তশুদ্ধতা দরকার, তাই আবেগ উচ্ছাস ছেড়ে-ছেড়ে শব্দকে ঘন, গভীর, শানিত করে তুলেছেন; কিন্তু অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে তিনি নির্লোভ হতে পারেন নি, সেজন্য বিষয়বিশ্বের কাছে ব্যক্তিবিষয়ীর আত্মবিসর্জন তার ক্ষেত্রে ঘটে না, তার অভিজ্ঞতার আধ্যাত্মপ্রকাশ শেষ পর্যন্ত থেকে যায় একান্ত ব্যক্তিক, তার জ্ঞান ও কল্পনার মধ্যে, তাঁর আবেগ ও শিল্প জিজ্ঞাসার মধ্যে থেকে যায় বরাবর এক পাঁচিল : উল্লমফনের চেষ্টা আলী হোসেন চৌধুরীর নেই। আশ্চর্য প্রাণশক্তি ও অসাধারণ রূপদক্ষতা তাঁর প্রতিভাকে চিহ্নিত করে, তিনি খুঁজে ফিরেছেন মৌল ভিন্নতা : জড় ও চৈতন্যের, নরনারী সম্বন্ধের ; ঐ মৌল ভিন্নতাকে তিনি কল্পনার আবেগে, তীব্র বোধশক্তিতে, প্রখর উপলব্ধিতে তাঁর সাহিত্যকর্মে মেলে ধরেছেন, আলী হোসেন চৌধুরীর জীবনে এভাবেই সাহিত্য আশ্রয় পেয়েছে ॥

সারাজীবন আলী হোসেন চৌধুরী কবিতার মধ্যে জীবনযাপন করেছেন এবং কবিতার বাইরের জীবন কবিতার মধ্যে উদ্বোধন করেছেন। আমাদের শিখিয়েছেন সৃষ্টিশীলভাবে শেষ পর্যন্ত বেঁচে থাকার অর্থ।
স্বাধীন বাংলাদেশ, স্বৈরশাসকের অধীন বাংলাদেশ, অধঃপতিত গণতন্ত্রের অধীন বাংলাদেশ : এখানে মানুষ শোষিত হয়েছে, নির্যাতিত হয়েছে, ধর্মের নামে মানুষকে দারিদ্রের শেষ সীমায় পৌঁছে দিয়েছে, এই অবস্থান আলী হোসেন চৌধুরীকে পীড়িত করে তুলেছিল। সভ্যতা থেকে প্রত্যহ পরিত্যক্ত হওয়া, অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়া মানুষগুলোর পক্ষে তিনি কবিতা লিখেছেন, তাঁর সে-কবিতা মানুষের অহংকারকে স্পর্শ করেছে। আমরা তো দেখেছি তাঁর কবিতায় এভাবেই নিত্যদিন সূর্যোদয় ঘটেছে। তিনি নীরবতা থেকে শব্দ আহরণ করেছেন এবং শব্দের ভেতর ভরে দিয়েছেন কখনো ক্রোধ, কখনো হতাশা, কখনো রক্তের নিয়তি। রাষ্ট্র-পরিচালকরা কবিতার দ্রোহ সহ্য করতে পারে না এবং কখনো পারেনি। তারা আলী হোসেন চৌধুরীকে সহ্য করেছে মাত্র কারণ তাঁর নির্মিত শব্দ মানুষের চৈতন্যে গচ্ছিত। আলী হোসেন চৌধুরীর কবিতার মধ্যে আমরা বেঁচে থেকেছি। তিনি সরাসরি আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, অন্তরঙ্গভাবে কবিতার শব্দকে আমাদের কাছে এনে দিয়েছেন। তিনি আমাদের মধ্যে প্রবেশ করেছেন আমাদের কালের সকল আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। তিনি র‌্যাডিক্যাল এবং মডারেট, নিয়মবদ্ধ এবং অনুকরণের অতীত, তাঁর প্রতিটি কবিতা, যেমন: করপুটে শুন্যতা, নীলাভ্রে নীল শুন্যতা , পরাজয়কে নিষেধ করেছি, অবুজে সবুজে ঋদ্ধমান, একটা মানুষ আকাশ সমান, দূঃখগুলো সরীসৃপের মতো, এই হেমন্ত উড়ে যায়, আলো গুলো আর জ্বলছে না, ভূলে যাওয়া বড় কঠিন, তুমি মেঘ হও, শরৎমেঘের দোলাচলে, জলের উপর জলের নাচন, বিষন্নতায় ঝুলে থাকে, একজন অনন্ত কালের বেচে থাকার আকুলতা, মানুষের নতুন ইতিহাস, অতঃপর হে দেবদূত,  এ রক্তেই মিশে আছে,এভাবেই জীবন এভাবেই বেচে থাকা প্রভৃতি তে সকল পরাজয়ের মধ্যে আমাদের সাহস যুগিয়েছে। তাঁর চোখ দগ্ধ করেছে আততায়ীকে, বর্বরকে, সভ্যতা-বিনাশী উন্মাদকে। তিনি আমাদের জন্য বারবার আবিষ্কার করেছেন নতুন আশা, তিনি আমাদের সকল হত্যার মধ্যে, বর্বরতার মধ্যে বাঁচবার প্রেরণা দিয়েছেন। 
প্রতিটি দশকের ক্রুদ্ধ তরুণদের পক্ষে তিনি লিখেছেন। তিনি তাদের ক্রোধকে আলোকদীপ্ত করেছেন। আলী হোসেন চৌধুরী সবসময় তরুণদের কবি। বছরের পর বছর তিনি তরুণ হয়েছেন। গতকাল তিনি ছিলেন আমাদের সমসাময়িক, আজকে তিনি তাদের। 
রাষ্ট্রপরিচালকরা সবসময় চেয়েছে অ-মানুষিকতাকে মানুষী ব্যবস্থার অংশ করতে। আর আমরা, লেখকরা, আলী হোসেন চৌধুরীরা, সবসময় চেয়েছি মানুষী ব্যবস্থার মধ্যে মানুষকে ফিরিয়ে আনতে। এই দ্বন্দ্বের অবসান হয়নি। ক্ষমতার অর্থ কি রাষ্ট্রক্ষমতা? সংস্কৃতি কি ক্ষমতা নয়? সংস্কৃতি বিহনে রাষ্ট্রক্ষমতা দুর্জনদের ক্ষমতা, দু®কৃতকারীদের ক্ষমতা, সভ্যতা-বিনাশকারীদের ক্ষমতা। এ-ক্ষমতার দাপট সর্বত্র, এ-ক্ষমতার কদর্যতা সর্বত্র। ক্ষমতাধররা তার কবিতাকে গ্রেফতার করতে পারেনি। ক্ষমতাধররা ইনহেরিট করেছে পৃথিবীর সব কদর্যতা, আর আলী হোসেন চৌধুরীরা ইনহেরিট করেছেন পৃথিবীর সকল শোভনতা, সভ্যতা, সংস্কৃতি।
বাঙালি সংস্কৃতির মধ্য থেকেই আলী হোসেন চৌধুরীর কবিতা বেড়ে উঠেছে। সংস্কৃতিকে তিনি দেখেছেন ইতিহাসের দিক থেকে এবং ইতিহাসের মধ্যে খুঁজেছেন জাতির প্রতি, (কখনো কখনো) লোকসমষ্টির প্রতি বার্তা ঘোষনা। এ হচ্ছে এক ধরনের মুখোস উন্মোচন, এক ধরনের মোহমুক্তি। এই পরিস্থিতি থেকে তার কবিতার ভাষা উত্থিত, যেখানে আছে এই ডাবল সম্ভাবনা, এই ডাবল অঙ্গীকার। একদিকে তিনি শব্দকে শুদ্ধ করেছেন, অন্যদিকে শব্দের মাতালামো হ্রস্ব করেছেন। এই দুই ধরনের যাত্রার অর্থ হচ্ছে, একসঙ্গে সবকিছু বলে ফেলা, কোনো কিছু গোপন না-করা, রহস্যের মধ্যে না-যাওয়া, সেজন্য তার ব্যবহৃত শব্দপুঞ্জ থেকে অর্থ প্রতিবারই নতুনভাবে দেখা দেয়। তাঁর কবিতা কখনো-কখনো উচ্চারণ, কখনো-কখনো নিভৃত সংলাপ, কখনো কখনো শোনার, কখনো-কখনো না শুনে শব্দের দিকে তাকিয়ে থাকা। শব্দগুলো জানালার বাইরে, আকাশে, বাতাসের কোলাহল মিশে প্রতীক তৈরি করতে থাকে।
আলী হোসেন চৌধুরীর কবিতায় আছে আশা ও ইউটোপিয়ান প্রবণতা, তেমনি স্মৃতিগাথা আখ্যান, যে-আখ্যানে তিনি বাঙালি সংস্কৃতি ও শহুরে সংস্কৃতি নিপুণ হাতে গেঁথে দিয়েছেন, আর আছে বৈপ্লবিক উদ্বোধন, এসব মিলিয়ে তাঁর নান্দনিক টেক্সট। শহুরে সংস্কৃতিতে যে-বিচ্ছেদ আছে প্রবল শ্রেণী ও সাব-অলটার্ন শ্রেণীর মধ্যে, সেই বিচ্ছেদ বাঙালি সংস্কৃতি কিংবা পুরানো বাঙালির সংস্কৃতির মধ্যে নেই। আলী হোসেন চৌধুরী এসব ক্ষেত্রে সংস্কৃতির বিভিন্ন কাজ, দ্যোতনা, স্মারককে সহঅবস্থানের মধ্যে মিলিয়েছেন। তিনি কিছুতেই দূরে সরে যাননি কিংবা তাকে দূরে সরানো যায়নি। 
এখান থেকে একটি প্রস্তাব করা যেতে পারে। প্রস্তাবটি হচ্ছে : সকল শ্রেণীচেতনা কিংবা সকল মতাদর্শ, সে শাসক শ্রেণীর চেতনা হোক কিংবা নির্যাতিত শ্রেণীর চেতনা হোক, সবই স্বরূপের দিক থেকে ইউটোপিয়ান। আলী হোসেন চৌধুরীর চেতনার ক্ষেত্রে এই দিকটি ক্রিয়াশীল। এই চেতনা রাজনৈতিক, একই সঙ্গে নান্দনিক, এই চেতনার মধ্যে উন্মোচিত ক্রোধ, অসহায়ত্ব, শত্রু কর্তৃক নির্যাতন; আলী হোসেন চৌধুরীর কবিতার মালমশলা হিসেবে এসব বোধ বারবার এসেছে। যে-প্রস্তাব আগে আমি করেছি তার জের টেনে বলা যায়, শহুরে কিংবা শিক্ষিত শ্রেণীর চেতনার সত্যতার খোঁজ মেলে নির্যাতিত শ্রেণীর চেতনার মধ্যে? সকল শ্রেণীর চেতনার মধ্যে নির্যাতন : এই বোধ আলী হোসেন চৌধুরীর কবিতার ধরা দিয়েছে কলোনিকালের অপমানিত হওয়ার বোধের মধ্যে কিংবা স্বাধীনতা-উত্তরকালে স্বৈরতন্ত্রের মধ্যে জীবনযাপনের অপমানিত হওয়ার মধ্যে। মনুষ্যত্বের বিরুদ্ধে এই অপমানকে আলী হোসেন চৌধুরী মেনে নিতে পারেননি। এভাবে তাঁর মধ্যে তৈরি হয়েছে সকল শ্রেণীর কবি। আলী হোসেন চৌধুরী বড়ো  দাগে সংস্কৃতির মধ্যে আইডেনটিফাই করেছেন কলোনিকালের বর্বরতা এবং স্বাধীনতা-উত্তরকালের স্বৈরতান্ত্রিক বর্বরতা। আলী হোসেন চৌধুরীর কবিতার নান্দনিকতা এখান থেকেই উদ্ভুত হয়েছে। 

বাংলাদেশের কবিতায় এক পরস্পরাগত ধারার জন্ম হয়েছে, যার প্রধান ও অন্যতম প্রত্যক্ষ উৎস আলী হোসেন চৌধুরীর কবিতা। তাঁর নিজের কবিতার প্রবহমানতায় কখনো ছেদ পড়েনি। তাঁর পুর্ণ প্রৌঢ়ত্বেও তিনি বলেছেন প্রেমিকের কন্ঠস্বরে, যৌবনের অহমিকায়, প্রতিবাদীর তীক্ষèতায়, সবুজ প্রাণের মুগ্ধতায়। তাঁর কবিতার অবিরল ও ফসলপ্রদ বৃষ্টিধারা বাংলা কবিতার জমিন সরস ও সিক্ত রেখেছে। সেই মাটিকে নতুন শস্যের অনুকূল উর্বরতা দান করেছে।
আলী হোসেন চৌধুরী কবিতা লেখেন প্রতিদিনের ডায়েরি লেখার মতো। বিগত বছরগুলোতে তাঁর কবিতায় স্পষ্টভাবেই এই প্রত্যাহিকতার ছাপ পড়েছে। কোনো এক সকালের আলোয় দেখা দৃশ্য, কোনো এক সন্ধ্যায় টেলিফোনে কারো প্রিয় কণ্ঠস্বর, কোনো এক অলস অপরাহ্নে মনে পড়ে যাওয়া অতীতের এক সুন্দর মুহূর্তের স্মৃতি, এমনি আরো অনেক কিছু যা প্রত্যহের দান, সবই কবিতার স্তরে তিনি তুলে নেন অবলীলাক্রমে। সাধারণকে দান করেন অসাধারণত্ব। কবিতার জন্য বিরল মুহূর্তের দুর্লভ প্রেরণার অপেক্ষায় তিনি থাকেন না। তাঁর অনুভূতির মায়াবী বৃত্তে যা কিছু প্রবেশ করে, মুহূর্তে রূপান্তরিত হয়ে যায়। এর পিছনে কাজ করে এক দিক তাঁর দৃষ্টির ও অনুভূতি স্বাতন্ত্র্য, ও সেই সঙ্গে তাঁর নির্মাণের কৌশল। পঞ্চাশ বছরের নিরলস চর্চায় কবিতা হয়েছে তাঁর একান্ত বশীভূত। তাঁর ডাকে সাড়া দিতে সদাপ্রস্তুত। অধিকাংশের বেলায় কবিতা চলে অনেকটা নিজের খেয়ালে, ব্যতিক্রমিদের মধ্যে নিঃসন্দেহে পড়েন আলী হোসেন চৌধুরী।
সমকালীন মূল্যায়নের আলী হোসেন চৌধুরী শুধু আমাদের মহত্তম কবি নন, সম্ভবত নান্দনিক কবিও। সমকাল পরিব্যাপ্ত হয়ে আছে তাঁর কবিতার অঙ্গে অঙ্গে। আমরা জানি তাঁর জনপ্রিয়তার কারণ হিসেবে এটা মুখ্য নয়, তবে প্রাসঙ্গিক অবশ্যই। প্রকৃত ব্যাখ্যা আছে অন্যত্র। সমকালের সবচেয়ে সংবেদনশীল মনে তিনি অভিঘাত সৃষ্টি করেছেন, কেবলমাত্র জনতার তরল চিত্তে নয়। কবিতা যখন কেবলই কবিতা, প্রচার নয়, বিলাপ নয়, উত্তেজনা নয়, শুদ্ধ কবিতা, তখন তার কাজ চিত্তের সংবেদনশীলতাকে জাগিয়ে দেওয়া। শুদ্ধ সংগীতেও বোধহয় এই কাজই করে, আরো মায়াবী উপায়ে। কবিতার বাহন ভাষা ও ছন্দ। কবিতার ভাষা ও ছন্দকে অনাবি®কৃত পথে ধাবিত করা শ্রেষ্ঠ কবির কাজ। আলী হোসেন চৌধুরী সেই কাজ করেছেন। পাঠকের উপলব্ধিতে তাঁর এই কৃতিত্ব ধরা পড়েছে বলেই তিনি জননন্দিত।
আলী হোসেন চৌধুরীর মৌলিকতা, তাঁর গ্রাহিকাশক্তি, তাঁর পরিবেশচেতনা, তাঁর কল্পনার অজস্রতা ও আগ্রহের ব্যাপ্তি, তাঁর আবেগের ব্যক্তিকতা ও দর্শনের অনিশ্চয়তা-সব কিছুর সমন্বয়েই তাঁর কবি-ব্যক্তিত্ব। কবি হিসেবে তিনি যে-ঐতিহ্যকে চিনে নিয়েছেন, যা তাঁকে পুষ্ট করেছে, সেই ঐতিহ্য ও তাঁর কবিতার আবহ পরস্পরের পরিপোষক। এই আবহে তাঁর দেশ ও কাল যেমন উপস্থিত, তেমনি ততোধিক উপস্থিত তাঁর নিজের মনের ভূদৃশ্যাবলি। যে-চিত্রময়তার কথা বলছিলাম, তা-ও এই ভিতর ও বাহিরের অগণিত চিত্রের সমাহার। তাঁর কবিতায় বাংলাদেশের নিসর্গ কেউ খুঁজলে পাবেন, তবে অতি শীঘ্র তিনি আবিষ্কার করবেন, তিনি নিজেই এক বিপর্যস্ত বাংলাদেশ।
একদিকে তিনি এক মিশ্র পাঠক-সমাজের নান্দনিক চাহিদা পূরণ করেছেন অকৃপণভাবে, অন্যদিকে এই চাহিদাসৃষ্টির মুখ্য ভূমিকাও তাঁরই। তিনিই মহৎ কবি যিনি তাঁর কালের কবিতা-পাঠকের কাব্যরুচি তৈরি করেন। নিজের নিঃসঙ্গতার গৃহকোণ থেকে তিনি ধীরে ধীরে বেরিয়ে এসেছেন গণমানুষের মধ্যে। একাত্ম হয়েছেন তাদের দুঃখ-বেদনা-আকাক্সক্ষার সঙ্গে। একটি নতুন জাতির উন্মেষপর্বে তিনি সে-জাতির হৃৎপিন্ডের ধুকধুকানিকে ভাষা দিয়েছেন। যেখানেই মানবতার অপমান, বীরের আত্মোৎসর্গ, স্বৈরশাসকের উদ্বত অনাচার-দেশে হোক পরদেশে হোক-সেখানেই তাঁর কন্ঠস্বর বেজে উঠেছে কবিতার উজ্জ্বল চরণে। একজন নিভৃতচারী কবির এই প্রকাশ্য ভূমিকায় উত্তরণ তাঁর জন্য সৃষ্টি করেছে এক অনন্য সম্মানের আসন, এক ভিন্ন ধরনের নেতৃত্বের ‘ভুমিকা। তাঁর কবিতার পাঠক নিজের আনন্দে, ক্ষোভে, ধিক্কারে, ঘৃণায়, ভালোবাসায় তাঁকে পেয়েছে বিশ্বস্ত সুহৃদের মতো। অথচ প্রচলিত অর্থে তিনি রাজনীতি করেননি, রাজনীতির ক্ষুদ্রতা কলুষতা ও কলহ থেকে দূরেই থেকেছেন। 
কবিতার সঙ্গে জীবনের গূঢ় ও প্রত্যক্ষ সম্পর্ক কতদূর যেতে পারে তারই এক বিস্ময়কর দলিল আলী হোসেন চৌধুরীর সারাজীবনের কবিতা। তাঁর কবিতায় তিনি উন্মোচিত করেছেন নিজেকে, সম্পূর্ণভাবে, এক অসাধারণ অকপট স্বচ্ছতায়। আর স্বদেশ ও সমকালকে দিয়েছেন এক গাঢ় উচ্চারণ, যার কাব্যবিভূতি আমাদের কালে এক বিস্ময়।

জ্ঞানের চর্চা, সৌন্দর্যের প্রতি আনুগত্য, শুভের স্বতসিদ্ধতায় আস্থা মনুষত্ব্য বিকাশের এই শর্ত গুলি আলী হোসেন চৌধুরীর জীবন চর্যায় পালিত হয়েছিল। জীবমাত্রই জরা, ব্যাধি, মৃত্যুর অধীন, কিন্তু একমাত্র মানুষই সংস্কৃতির স্রষ্ঠা ও ধারক। আলী হোসেন চৌধুরীর তুল্য সুসংস্কৃত পুরুষ জীবনে ক্বচিত দেখেছি। সংস্কৃতিক সামর্থে তিনি দ্বেষ, লোভ, ক্রোধ এবং সংকীর্ণতাকে জয় করেছেন। বহুমাত্রিক এই মনীষা আজীবন মুঢ়তা, সংকীর্ণতা এবং শক্তির প্রমত্ততার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন বটে, কিন্তু এই সংগ্রাম তার চরিত্রগত শালীনতাকে কখনোও ক্ষুন্ন করতে পারে নি।
যতটা কাজ তিনি করেছেন তার মূল্য স্বীকৃত ভাবে প্রচুর ও সুস্থায়ী। ব্যাপ্তিতে বৈশদ্যে পুংখানুপুঙ্খ বিচার বিশ্লেষনে প্রতিপাদ্যের মৌলিকতায়, বিন্যাসের সংযুক্তি ও মননের সুবেদি ক্ষিপ্রতায়‘‘নজরুলের সৃষ্টিতে বাংলাদেশের মানুষ ও প্রকৃতি’’ বাংলা গবেষনা সাহিত্যে  প্রায় তুলনাহীন। আলী হোসেন চৌধুরীর  মত সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে একান্ত ভাবে সমর্পিত আরেকটি মানুষ কখনোও দেখিনি, এবং এই আত্মসমর্পন তার অস্তিতে এমন দুর্লভ সঞ্চার ঘটেছে যা শরৎপ্রতুষের শিউর্লির মতোন।
আলী হোসেন চৌধুরীর বিপুল এবং বিচিত্র সাহিত্য ও সংস্কৃতি কৃতি নিয়ে আলোচনার উপযোগি অবসর আমার কর্মভারাক্রান্ত জীবনে আর জুটবে কি না জানিনে, কিন্তু জীবনভর সাহিত্য চর্চার সামর্থ্যে একথা নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি প্রত্যয়ই সাধকদের মধ্যে তিনি অন্যতম। তার প্রথম যুগের কবিতায় বহমান নদী, উজ্জল আকাশ, গতিশীল আবেগের যেমন স্পর্শ পাই তার প্রৌঢ় বয়সের কবিতায় তেমনি ধৃত হয়েছে সুগভির বেদনা, মধ্যরজনীর নিগূঢ় সংগীত, অন্বেষী মনীষার ধ্রুপদী দার্ঢ্য। তার গদ্য রীতিতে প্রবন্ধ নিবন্ধ সাহিত্য সমালোচনায় তত্ত্ব বিচারে কোথাও তার বিকাশ থেমে যায় নি-বয়স শিথীলতার বদলে স্বকীতায়কে সম্পন্ন করেছে। যে গুন  লেখাকে সুস্থায়ী করে তাদের ভিতরে অনেক গুলি তিনি অর্জন করেছেন।
বিবেকিতা তার জীবনে চরিত্রের, গদ্যরীতি কেন্দ্রে। বিবেকিতা, যুক্তিশিলতা, সরসতা, সুবেদিতা, চিত্তের উন্মুক্ততা। যে কৌতুক বোধ তার শ্রেষ্ঠ রচনাবলিতে বিশ্লেষন শক্তি ও নৈতিকতার সঙ্গে সংযুক্ত, তা হয়তো কিছু রচনায় কিছুটা কৃশিত। যে সমকালীন বাংলা সংস্কৃতি ও সাহিত্যে ক্ষেত্রে তার সমতুল্য বিবেকি ও বাকসিদ্ধ মনীষা আর একটি চোখে পড়ে না। যে অন্ধকার এ দেশে ঘনিয়ে এসেছে তা শুধু লোডশেডিয়ে আবদ্ধ নেই। যতমত তত পথ থেকে, দলবাজী, ব্যাপক অপপ্রচার, উৎত্রাসন, অশিক্ষা, মগজধলাই, ঘুষ আর খুনাখুনি- যৌবন কালে কে কল্পনা করেছিল দেশের এই দশা হতে পারে।‘‘লক্ষন দেখে মনটা দমে যায়। কিন্তু যৌবনের ধর্ম হচ্ছে অদমনীয়তা । যুবকের মন কিছুতেই দমে না। যার মন দমে যায় সে যুবক নয়। সে জরাগ্রস্ত। যে দেশে যৌবন সর্বদা কাজ করছে সে দেশ বার বার পড়ে গেলেও বার বার উঠে দাড়ায়। সেদেশে আবার আদর্শবাদী জন্মায় আবার তপস্যা শুরু হয়, আবার জোয়ার আসে, আমরা যেন আমাদের নিত্য বহমান যৌবন স্রোতে বিশ^াস না হারাই- (অগ্নিযুগের বিপ্লবী কন্যা শান্তি ও সুনীতি)’’ এই প্রত্যয় তার আছে বলেই অন্ধকারে আজো তিনি আলোকস্তম্ভ। জোয়ার যদি আসে এই মহৎ শিল্পী ও ভাবুকের জীবন রচনাবলী আগামীর প্রজন্মকেও প্রেরণা যোগাবে।












সর্বশেষ সংবাদ
কুমিল্লায় কৃষি কর্মকর্তাদের নিয়ে দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালা।
বাংলাদেশ ভ্রমণে যুক্তরাষ্ট্রের সতর্কতা জারি
যেসব পদক্ষেপে ঘুরে দাঁড়ালো রিজার্ভ
প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই পক্ষের সংঘর্ষে শিক্ষার্থী নিহত
আ.লীগের ঝটিকা মিছিল, বিপাকে পুলিশ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
পুঁটি মাছ কাটা নিয়ে ঝগড়া, স্ত্রীকে খুন করে থানায় আত্মসমর্পণ স্বামীর
কুমিল্লায় বাসচাপায় অন্তঃসত্ত্বা নারী নিহত
নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও আ.লীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের ৬ সদস্য গ্রেপ্তার
এনসিপির জেলা-উপজেলা কমিটির আহ্বায়কের ন্যূনতম বয়স হতে হবে ৪০
এলডিপিতে যোগ দিলেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২