ঢাকার
ওয়ারীতে হেয়ার স্ট্রিটের জমজম টাওয়ারের পঞ্চম তলার একটি বাসা থেকে
স্বামী-স্ত্রীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই ঘর থেকে চিরকুট পেয়েছে পুলিশ;
যেখানে তাদেরকে পাশাপাশি কবর দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।
বাড়ির মালিকের দেওয়া খবরে শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে লাশ দুইটি উদ্ধারের কথা জানিয়েছেন ওয়ারী থানার ওসি ফয়সাল আহমেদ।
পুলিশের ধারণা এই দম্পতির মৃত্যু হয়েছে কয়েকদিন আগে পরে।
ওসি
আহমেদ বলেছেন, শোয়ার ঘরে খাটে পাশাপাশি শোয়া অবস্থায় ৩২ বছর বয়সী মো.
মুহিদ ও তার ৩৫ বছর বয়সী স্ত্রী আইরিন আক্তারের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
মুহিদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার তিতাসে ও আইরিনের বাড়ি কুমিল্লার
চৌদ্দগ্রাম এলাকায়।
পেশায় প্লাস্টিকের খেলনা ব্যবসায়ী মুহিদ দীর্ঘদিন
ধরে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ ছিলেন। প্রয়োজন ছাড়া তারা বাসার বাইরে
যেতেন না বলে জেনেছে পুলিশ।
ওসি আহমেদ বলেন, “মুহিদের লাশে পঁচন ধরে
গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, কিছুদিন আগেই তিনি মারা গেছে, আর স্ত্রী মারা গেছেন
কয়েকদিন আগে। ঘটনাস্থল থেকে আত্মহত্যার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি, আবার
তাদের শরীরে আঘাতেরও কোনো চিহ্ন নেই।”
মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হতে দুই লাশের ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলেও জানিয়েছেন ওসি আহমেদ।
পুলিশ
তদন্তে নেমে জেনেছে, মুহিদ ও আইরিন পরিবারের অমতে বিয়ে করেন ২০১০ সালের
দিকে। এরপর থেকে তারা যে যার পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থেকেছেন। আর ওই বাসায়
এই দম্পতি বাস করছেন ২০২২ সাল থেকে।
পুলিশ ওই বাসা থেকে একটি খাতায় লেখা চিঠি উদ্ধার করেছে।
ওসি
আহমেদ বলেন, “ধারণা করছি চিঠিটি নিহত আইরিন আক্তারের লেখা। সম্ভবত সেখানে
তার স্বামীর ভাইকে উদ্দেশ্য করে তাদের দুইজনকে পাশাপাশি কবর দেওয়ার অনুরোধ
করা হয়েছে এবং তার (আইরিন) বাড়ির কাউকে না জানাতে বলা হয়েছে।”
লাশ
উদ্ধারের ঘটনা বর্ণনা করে ওসি আহমেদ বলেন, “প্রতিমাসে বাড়িভাড়ার টাকা তারা
বাড়িওয়ালাকে বিকাশে দিতেন। গত মঙ্গলবার এই মাসের ভাড়ার জন্য বাড়ির মালিক
ফোন করলে পরদিন বুধবার দিবেন বলেন জানান তারা। বুধবারে ভাড়া না দেওয়ায়
বৃহস্পতিবার বাড়ির মালিক আবার ফোন করলে আর তারা ধরেননি। বাড়িওয়ালা ভেবেছেন
হয়ত টাকা জোগাড় করতে পারেননি বলে ফোন ধরেননি।“
ওসি আহমেদের কথায়, শনিবার বাড়িওয়ালা ওই বাড়ির দরজায় ‘নক করলেও কোনো সাড়া মেলেনি’, কোনো সাড়াশব্দও পাননি বাড়িওয়ালা।
“এরপর বাড়ির অন্যান্য ভাড়াটিয়াদের পরামর্শে তিনি পুলিশে খবর দিলে রাতে পুলিশ গিয়ে দরজা ভেঙে দুইজনের লাশ উদ্ধার করে।”
ওসি
আহমেদ বলেন, “আমরা ধারণা করছি দীর্ঘদিন ক্যান্সারে আক্রান্ত মুহিদ
স্বাভাবিকভাবেই মারা যেতে পারেন। এতে তার স্ত্রী নিরুপায় হয়ে ঘুমের ওষুধ
খেয়ে আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন।“
তবে ঘটনাস্থল থেকে ঘুমের ওষুধের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি বলে জানিয়ে ওয়ারী থানার এসআই কাউসার আহমেদ।
তিনি বলেছেন, ময়নাতদন্তের ফরেনসিক পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে পেলে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।