কুমিল্লার
তিতাস উপজেলার বাতাকান্দি - মাছিমপুর সড়কের পাঙ্গাশিয়া হইতে বলরামপুরের
তিন কিলোমিটার রাস্তার সংস্কার কাজ ফেলে দিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছে ঠিকাদার।
প্রায় আট মাস ধরে বন্ধ রয়েছে সংস্কার কাজ,যার ফলে বলরামপুর গ্রামের স্কুল,
কলেজ ও মাদ্রাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ চরম
দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় রাস্তায় বিছানো ইটের খোয়ার ধুলাবালিতে আচ্ছন্ন হয়ে আছে বাড়ি ঘর।
উপজেলা
এলজিইডি অফিস সুত্রে জানা যায় ১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয়ে তিন কিলোমিটার
রাস্তার পাকাকরনের কাজটি পায় ইয়াছিন এক্সপ্রেস ঠিকাদার কোম্পানি। ২৬/২/২১
সালে কাজটি শুরু করে ২২ সালের জানুয়ারী মাসে কাজটি শেষ করার কথা থাকলেও
নিন্মমানের সামগ্রী দিয়ে সংস্কার কাজ শুরু করায় টেন্ডার বাতিল করে দেয়
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে রি-টেন্ডারে একই ঠিকাদার কোম্পানি কাজটি
বাগিয়ে নিয়ে ২০২৩ সালের আগস্ট মাসের ১৩ তারিখে কাজ শুরু করে ২৪ সালের
জুলাই মাসে কাজ সম্পন্ন করার কথা থাকলেও ম্যাকাডম করে লাপাত্তা হয়ে
ঠিকাদার।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায় প্রায় ৩০ হাজার লোকের বসবাস
বলরামপুর গ্রামে,বিগত পঞ্চাশ বছর ধরে এই গ্রামের মানুষ অবহেলিত ও সুবিধা
বঞ্চিত গ্রাম থেকে বের হওয়ার এক মাত্র রাস্তা এটি,সময়ের পালা বদলে
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্তার উন্নয়ন হলেও উন্নয়নের ছোয়া
লাগেনি বলরামপুর গ্রাম, এমন ক্ষোভ প্রাকাশ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম
ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন বলরামপুর গ্রামের বাসিন্দা মারুফ হোসেন, তিনি
তার ফেসবুক একাউন্টে যা লিখেছেন,তা হুবহু তুলে ধরা হলো, এই দুর্ভোগের শেষ
কোথায়?৩নং বলরামপুর ইউনিয়নের দুটি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত বলরামপুর গ্রামটি
উত্তর-দক্ষিণে বেষ্টিত প্রায় ৩০-৪০ হাজার মানুষের বসবাস! এই গ্রামটি বরাবরই
উন্নয়নের দিক থেকে উপেক্ষিত! একসময় ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা করার জন্য দক্ষিণ
বলরামপুর নয়া বাজার ও বড় বাড়ি হতে পায়ে হেঁটে মাছিমপুর হাই স্কুলে যেতে
হতো!
অসুস্থ রোগী বা গর্ভবতী মহিলাদের লাশের খাঁটিয়ায় করে হাসপাতালে
নিয়ে যাওয়া হতো! বাজার করার জন্য মাছিমপুর, আসমানিয়া, গাজীপুর ও বাতাকান্দি
বাজারে পায়ে হেঁটে চলাচল করতে হতো! বর্ষা মৌসুমে আমি নিজেও নৌকায় করে
মাছিমপুর হাই স্কুল ও বাজারে যেতাম! বর্ষা মৌসুমে উত্তর-দক্ষিণ এই গ্রামের
মানুষের একমাত্র ভরসা ছিলো নৌকা!
এমন একটি জনবহুল বসতি গ্রাম রাস্তাঘাট
শূন্য যুগের পর যুগ! বলা যায় স্বাধীনতার পর থেকেই! অথচ তিতাস সহ দেশের
বিভিন্ন উপজেলায় ৪-৫ হাজার মানুষের বসবাস হয়েও এমন অনেক গ্রাম আছে
রাস্তাঘাটে অনেক উন্নত! ঠিক কি কারণে গ্রামটি আজও উন্নয়ন বঞ্চিত এই গ্রামের
নিরীহ বাসিন্দারা অবগত নন! বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে
পাঙ্গাশিয়া টু বলরামপুর রাস্তাটি মেরামত সহ পাকা করনের জন্য তৎকালীন
স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিমা আহমাদ মেরি স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়
মন্ত্রণালয় বা এলজিইডি মন্ত্রণালয়ের অধীনে রাস্তাটি টেন্ডার সম্পূর্ণ করে
কাজ শুরু করেন,নিম্নমানের মালামাল ব্যবহারের অভিযোগে রাস্তার কাজটি তখন
বন্ধ হয়ে যায়, পরবর্তীতে এক থেকে দেড় বছর বিরতি দিয়ে রি-টেন্ডারের মাধ্যমে
আবারও কাজ শুরু হয় এবং ইটের কংক্রিট সম্পূর্ণ হয়ে পিচদোনা বা ঢালাইয়ের কাজ
বাকি থাকে দীর্ঘদিন যাবত রাস্তাটি পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকলেও রাস্তাটির
ঢালাইয়ের কাজ অসম্পূর্ণ থেকে যায়!!পাঙ্গাশিয়া টু বলরামপুরের রাস্তাটি বার
বার কি এমন অদৃশ্য কারণে আটকে যায় তা এখন অত্র এলাকাবাসী সহ আশেপাশের
মানুষের মুখে মুখে! সেই সাথে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত মানুষের মাঝে চাপা
ক্ষোভ কাজ করছে।
আমি অত্র গ্রামের একজন স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে তিতাস
উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার ও এলজিইডি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট
উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি আমাদের অবহেলিত পাঙ্গাশিয়া টু
বলরামপুরের এই রাস্তার কাজটি ঠিক কি কারনে বন্ধ হয়ে আছে? আদৌ রাস্তার কাজটি
সম্পূর্ণ হবে কিনা হলেও কবে নাগাদ হবে এবং রাস্তার কাজটি অতি দ্রুত সময়ের
মধ্যে সম্পূর্ণ করার জোরালো দাবি জানিয়েছেন তিনি।
এবিষয়ে তিতাস উপজেলা
প্রকৌশলী মো.শহিদুল ইসলাম বলেন, রাস্তার কাজ গত বছরের জুলাই মাসে শেষ করার
কথা কিন্তু ম্যাকাডম কাজ সম্পন্ন করেও পাকাকরণ না করে আজ ৮ মাস যাবৎ কাজ
বন্ধ রাখায় আমি উর্ধতন কতৃপক্ষের নিকট প্রস্তাব পাঠিয়েছি কাজটি বাতিল করে
পুনরায় রি-টেন্ডার করে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করার জন্য।