মঙ্গলবার ২২ এপ্রিল ২০২৫
৯ বৈশাখ ১৪৩২
নাটক ছিলো তাঁর সর্বাঙ্গে
উত্তম গুহ
প্রকাশ: সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫, ১:৫৫ এএম আপডেট: ২১.০৪.২০২৫ ২:১৪ এএম |


  নাটক ছিলো তাঁর সর্বাঙ্গে

কুমিল্লার মঞ্চ নাটকের পরিচালকনিজামউদ্দীন দুলাল ইহলোক ত্যাগ করলেন। কুমিল্লার মোগলটুলীতে এক সময়ের “দুলালীয়া রেষ্টুডেন্টের”মালিক জয়নাল আবেদীনের দ্বিতীয় পুত্র ছিলেন।তখনকার সময়ে ঐ পরিবারে দুলাল ভাই-ই ছিলেন একমাত্র গ্রেজুয়েট এবং ঐ পরিবারের একমাত্র শিল্প-সংস্কৃতির ধারক বাহক। বিশেষ করে নাটক পাগল একজন মানুষ। কুমিল্লার আরেক কৃতি সন্তান মোগলটুলির নাট্য-নির্দেশক সুজিত গুহ’র হাত ধরেই দুলাল ভাইয়ের মঞ্চ নাটকে হাতে খাড়ি।প্রথম দিকে সুজিত গুহ পরিচালিত প্রায় সব নাটকেই দুলাল ভাই প্রধান সহকারী নির্দেশক হিসেবে কাজ করতে দেখেছি।
একটা সময় কুমিল্লা মোগলটুলী ছিলো সাংস্কৃতির প্রত্যেকটা শাখার কেন্দ্রবিন্দু । তখনকার সময় কি হিন্দু কি মুসলিম প্রতিটা ঘরেই কম-বেশী নাচ, গান, আবৃত্তি, যন্ত্র-সংগীতের চর্চা ছিলো । ছিলো সবার সাথে সবার এক আত্মিক সম্পর্ক। শুধু সাংস্কৃতি চর্চাই না খেলাধুলাও চলতো সমান তালে। কুমিল্লা স্টেডিয়ামে সেই সময় দাপিয়ে খেলেছেন মোগলটুলির অনেক ফুটবল প্লেয়াররা। দুলাল ভাই ও খেলা-ধুলা করতেন তবে নাটকটা ছিলো তাঁর সর্বাঙ্গে । জীবনে কত যে নাটক দুলাল ভাই পরিচালনা করেছেন কা গুনে বলা যাবেনা। একসময় দুলালভাই যেমন সুজিত গুহের প্রত্যেকটা নাটকের সাথে জড়িয়ে থাকতেন ঠিক তেমনি করে পরবর্তি সময়ে আমিও দুলাল ভাই , মুকসুদ আলী মজুমদার ভাইয়ের সাথে নানা সাংস্কৃতি কর্মকান্ডে জড়িয়ে থাকতাম। একটা সময়তো মুকসুদ ভাই, দুলাল ভাই, আর আমি একে অপরের হরিহর আত্মা হয়ে উঠে ছিলাম। ব্যাংকের নাটক, বোর্ড অফিসের নাটক, প্রসাশনের যে কোন সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান, কি করিনি আমরা একসাথে তিনজনে?
আজ জনতা ব্যাংয়ের একটা নাটক মঞ্চায়নের কথা খুব মনে পরছে, নাটকটির নাম ছিলো “ক্লিওপেট্রা” শুধু মহিলা শিল্পী ছাড়া পুরুষ শিল্পী সবই ছিলেন জনতা ব্যাংয়ের কর্মকতা, কর্মচারী বৃন্দ। নাটকটির তত্বাবধানে ছিলেন আমাদের সবার প্রিয়জন উধ্বর্তন ব্যাংকার ইসহাক ভাই।
আর মহিলা শিল্পী ছিলেন তখনকার চলচ্চিত্র নায়িকা শুভ্রা দে, জুলিয়া, টিনা খান সহ আরো অনেকে । পরিচালনায় মুকসুদ আলী মজুমদার আর দুলাল ভাই ও আমি ছিলাম মুকসুদ ভাইয়ের ডান এবং বাম হাত। প্রায় তিন মাস রেহার্সাল হয়েছিলো নাটকটির। বিশাল বাজেটের নাটক,।এর আগে সেট, কস্টিউম, মেকাপ, শতাধীক শিল্পী মিলে এতো বড় ক্যানভাসে এতো বিশাল আয়োজনে কুমিল্লায় কখনো মঞ্চনাটক হয়েছে বলে আমার জানা নেই। 
নাটকটি শেষ হওয়ার, দিন সাতেক পর ইসহাক ভাই একদিন আমাদের তিনজনকে ছাতিপট্টির জনতা ব্যাংক শাখায় যেতে বললেন। আমরা গেলাম। ইসহাক ভাই তখন ব্রাঞ্চের ম্যানেজার, কাঁচের ঘেরা রুমে গিয়ে আমরা তিনজন বসলাম, এরই মধ্য চা আর কত কি নাস্তা চলে এলো ।
ইসহাক ভাই চা’য়ে চুমুক দিয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে বললো “ আপনি এবং দুলাল আর উত্তম নাটকটি মঞ্চায়নের জন্য দির্ঘদিন অনেক কস্ট করেছেন।
ব্যাংক থেকে আপনাদের জন্য কিছু একটা করতে চাই। আমাদেরকে যে কিছু একটা দিবে,..হতে পারে ..অর্থ, হতে পারে কোন দামি গিফ্ট। সেটা আমরা আগেই আন্দাজ করছিলাম।যেদিন ইসহাক ভাই আমাদেরকে ব্যাংকে আসার জন্য খবর পাঠিয়ে ছিলেন, সেইদিনই সন্ধ্যায় মুকসুদ ভাইয়ের স্নেহনীড় বাসায় ঠিক করে রেখেছিলাম আমরা দুজন কিছুই নিবনা । তার পরিবর্তে কি চাইবো তাও মনে মনে ঠিক করে রেখেছিলাম।
ইসহাক ভাইয়ের কথার উত্তর দেয়ার আগে মুকসুদ ভাই আমার দিক একবার তাকালেন, তারপর বললেন দুলাল কে জনতা ব্যাংকে একটা চাকুরীর ব্যবস্থা করে দেন।আমাদের কিছু দিতে হবেনা। ইসহাক ভাই সম্ভবত ভাবলেন মুকসুদ ভাই এর অর্থের সংকট নেই, কিন্তু উত্তমতো স্টুডেন্ট । তিনি তখন আমার দিকে তাকিয়ে বললেন “উত্তম তোমার কি অভিমত”
আমিও একবাক্যে বললামৃ “আমিও চাই দুলাল ভাইয়ের জন্য ব্যাংকে কিছু একটা করেন”। 
আমরা জানতাম ইসহাক ভাই ব্যাংকে বেশ ক্ষমতাবান একজন অফিসার। ইচ্ছে করলেই চাকুরী হয়ে যাবে।
মাস খানেকের মধ্যেই দুলাল ভাইয়ের জনতা ব্যাংকে চাকুরী হয়ে গেল। জীবন চলার পথে একটা নিশ্চয়তা এলো। এখন যেন দুলাল ভাই নতুন উদ্যেমে মঞ্চনাটকে আর বেশী সময় দিত থাকলোৃ।
আমার জন্ম ভুমী, পাহাড়ী ফুল , জীবন তৃষ্ণা, বাবা বদল, আর কত নাটক পরিচালনা করেছেন। 
একসময় বাংলা চলচ্চিত্রে যখন শুধু গানগুলো রঙ্গীন হয়ে দর্শকের কাছে এলো।
ঠিক তখনই দুলাল ভাইও মঞ্চনাটকে কিছু কিছু দৃশ্য রঙ্গীন আলোতে করার চেস্টা করলেন। 
দুলাল ভাইকে অনেকই তখন আংশীক রঙ্গীন নাটকের পরিচালক বলতেন।
কুমিল্লায় আজ যারা সাংকৃতি চর্চা করেন, নাটক করেন বর্তমান প্রজন্ম কতজন আছেন ..নিজামুদ্দীন দুলাল কে চিনেন। আর যারা চিনেন ওনারাও কি কখনো দুলাল ভাইয়ে খবরা খবর রাখেছেন ? 
দুলাল ভাইয়ের সবচাইতে বড়গুন ছিলো ৃ সবার সাথে হাসি মুখে কথা বলা, পাড়ায় কখনো এমনটি কেহ বলতে পারবেনা দুলাল ভাইয়ের ব্যবহারে কেহ কস্ট পেয়েছেন। অত্যন্ত সামাজিক অসাম্প্রদায়ি বিবেকবান একজন মানুষ ছিলেন ।
আপনি যেখানেই থাকুন ভাল থাকবেনৃ আমি বিশ্বাস করি ।















সর্বশেষ সংবাদ
কুমিল্লায় ৪ আইনজীবী কারাগারে
কুমিল্লায় মধ্যরাতে আ’লীগের ঝটিকা মিছিলের পর গ্রেপ্তার ৮
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হবে ২২ এপ্রিল
দোহার উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন প্রধান উপদেষ্টা
সাবেক এমপি কাজী মনিরুল ইসলাম গ্রেপ্তার
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কুমিল্লায় মধ্যরাতে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, গ্রেপ্তার ৮
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ২২ এপ্রিল
সুদের টাকার জন্য পিটুনিতে ভবেশ চন্দ্রের মৃত্যু, তিন দিন পর জানালো পরিবার
পারভেজ হত্যাকাণ্ডে নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে ছাত্রদল: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
কুমিল্লায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় ৬ আইনজীবীকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২