বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে কুমিল্লার পুলিশ লাইন্সে শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ আওয়ামী পন্থী ৬ আইনজীবীকে কারাগারে প্রেরনের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
সোমবার (২১ এপ্রিল) বিকেল পৌনে তিনটার দিকে কুমিল্লার সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমানের আলত এ ৬ আসামির জামিন নাম মঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
জামিন নামঞ্জুর হওয়া ছয় আইনজীবী হচ্ছেন- কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান লিটন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া, সাবেক এপিপি এএনএম মহিন, অ্যাডভোকেট জিয়াউল হাসান চৌধুরী সোহাগ, এডভোকেট সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া এবং অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন। এর মধ্যে জিয়াউল হাসান চৌধুরী সোহাগ এবং মইন পলাতক রয়েছেন। বাকি চারজন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পরে তাদেরকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুমিল্লা জেলা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট কাইমুল হক রিংকু।
ছাত্র জনতার আন্দোলন চলাকালে ৩ আগস্ট কুমিল্লার পুলিশ লাইন্স এলাকায় আন্দোলনকারীদের উপর হামলার ঘটনায় গত ১১ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা সদর উপজেলার ডুমুরিয়া চান্দপুর গ্রামের মো. আমির হোসেনের ছেলে মো. ইনজামুল হক রানা বাদি হয়ে কুমিল্লা কোতোয়ালী মডেল থানায় মামলা করেন। মামলায় সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারকে প্রধান আসামি করা হয়। একই মামলায় কুমিল্লার আদালতের ২৬ আইনজীবীকে অভিযুক্ত করেন বাদী। মামলার পড়ে ২৬ আইনজীবী উচ্চ আদালত থেকে জামিন আনেন। জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সোমবার ২৪ আইনজীবী আদালতে হাজির হয়ে পুনরায় জামিন আবেদন করেন। তবে আদালত ছয় জনের জামিন নাম মঞ্জুর করেন। এ ছয় আইনজীবীর মধ্যে চারজন আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন বাকি দুজন পলাতক রয়েছেন। পলতাক দুই আইনজীবীর বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
কুমিল্লার আদালতের পিপি কাইমুল হক রিঙ্কু বলেন, মামলাটিতে ২৬১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও দুইশ জনকে আসামি করা হয়। সোমবার চব্বিশ জন আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন। আদালত ছয়জনের জামিন নামঞ্জুর করেছেন।
এদিকে মামলার শুনানি চলাকালে আদালত প্রাঙ্গনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেশ কয়েকজন নেতা ও সাধারণ ছাত্র জনতা আসামিদের বিচার দাবিতে স্লোগান দিতে শুরু করেন। এ সময় তারা বলেন, ৩ আগস্ট কুমিল্লায় যে নারকীয় তাণ্ডব চালানো হয়েছে- আদালতের মাধ্যমে তাদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ৩ আগস্টের তাণ্ডবের সাথে অনেক আইনজীবী জড়িত রয়েছেন। তাদেরকে বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। এই মামলায় আসামিদের বিচার নিশ্চিত করতে কোন আইনজীবী যদি অসহযোগিতা করে; তাদের বিরুদ্ধেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানান তারা।
এদিকে শুনানি শেষে আসামিদেরকে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার সময় বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা তাদের উপর ডিম ছুড়ে মারেন। এবং ভুয়া ভুয়া বলে স্লোগান দিতে থাকেন। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কড়া নিরাপত্তায় প্রিজন ভ্যানে করে আসামিদেরকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।