রাজনৈতিক দলগুলোর মতদ্বৈধতা সত্ত্বেও সংস্কার ও
নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়কে কেন্দ্র করে দেশের রাজনীতিতে মেরুকরণ দ্রুত
স্পষ্ট হচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছে ভেতরে ভেতরে নির্বাচনী প্রস্তুতি চলছে, কিন্তু
রাষ্ট্রীয় সংস্কারের বিষয়ে তেমন অগ্রগতি নেই। এ ক্ষেত্রে জাতীয় ঐকমত্য
কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসছে। অন্যদিকে রাজনৈতিক দলগুলোও
বৈঠক, চা-চক্র বিভিন্ন শিরোনামে নানা আয়োজনে নিজেদের মধ্যে আলোচনা
চালাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক
মুহাম্মদ ইউনূসকে সভাপতি করে সাত সদস্যের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা
হয়েছে। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ,
জনপ্রশাসন, সংবিধান ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে সংস্কারের জন্য গঠিত কমিশনগুলোর
সুপারিশ বিবেচনা ও গ্রহণের লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের জন্য রাজনৈতিক দল ও
শক্তিগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে এবং এই মর্মে পদক্ষেপ সুপারিশ করবে এই কমিশন।
পত্রিকান্তরে
প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী পদে টানা দুই মেয়াদের বেশি কেউ থাকতে
পারবেন না, তবে একবার বিরতি দিয়ে আবারও দায়িত্ব পালন করতে পারবেন-জাতীয়
ঐকমত্য কমিশনের কাছে এমন প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল
(বিএনপি)। এই পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন বলেছে, এক ব্যক্তি মাঝখানে বিরতি দিয়ে
সর্বোচ্চ তিনবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন।
তবে এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হলেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
বিএনপি
জানিয়েছে, রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তনের কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। এ ছাড়া অর্থ
বিল, সংবিধান সংশোধনী বিল, আস্থা ভোট, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত
বিল-এই চারটি ছাড়া অন্য যেকোনো বিষয়ে সংসদ সদস্যরা নিজ দলের বিরুদ্ধে ভোট
দেওয়ার পূর্ণ ক্ষমতা পাবেন এ রকম প্রস্তাব করেছে দলটি। এই বিষয়ে নজরুল
ইসলাম খান বলেন, ‘আলোচনা অব্যাহত আছে।
মোটামুটি ভালো এগোচ্ছে। বেশ কিছু বিষয়ে আমরা কাছাকাছি এসেছি। কিছু বিষয়ে দ্বিমতের কথা বলেছি।’
এর
আগে শনিবার কমিশনের সঙ্গে সংলাপে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক
নাহিদ ইসলাম বলেন, তাঁরা সংস্কার বলতে মৌলিক সংস্কার বোঝেন। তিনি বলেন, ‘যে
সংস্কার করলে রাষ্ট্রকাঠামোর গুণগত আমূল পরিবর্তন সম্ভব হবে, সেই জায়গায়
রাষ্ট্রের সংস্কার, সংবিধান, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা, বিচারব্যবস্থা,
নির্বাচনব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয়ে আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি।’
প্রধান
উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দেওয়া সময়সীমার মধ্যে চলতি বছরের ডিসেম্বরেই
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আদায়ে সর্বদলীয় ঐকমত্য গঠন করতে চায় বিএনপি। এ
লক্ষ্যে এরই মধ্যে শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত
দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি ডান, বাম ও ইসলামী দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনা
করতে চায় দলটি। এর অংশ হিসেবে রবিবার সিপিবি, বাসদসহ বাম ধারার দলগুলো ও গণ
অধিকার পরিষদের সঙ্গে চা-চক্রে মিলিত হন বিএনপির সিনিয়র কয়েকজন নেতা।
এদিকে
জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীদের নতুন দল এনসিপি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে
বৈঠক শুরু করেছে। রবিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে খেলাফত মজলিসের সঙ্গে
এনসিপি নেতাদের বৈঠক হয়। গত ১৩ এপ্রিল উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে
অবস্থানরত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর আমির
শফিকুর রহমানের দেখা করার ঘটনাটিও ব্যাপক আলোচিত।
আমরা মনে করি, সংস্কার
ও নির্বাচন করতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোকে ন্যূনতম ঐকমত্যে আসতে হবে। জাতীয়
ঐকমত্য কমিশন সব দলের সঙ্গে কথা না বললেও তাদের মতামত পেয়েছে; এর ভিত্তিতে
তারা কোনো উপসংহার টানতে পারে। তবে উত্তম হলো সব দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে
সিদ্ধান্ত গ্রহণ। এ ক্ষেত্রে খুব বেশি বিলম্ব কাম্য নয়।