বৃহস্পতিবার ২৪ এপ্রিল ২০২৫
১১ বৈশাখ ১৪৩২
পণ্য সরবরাহ পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখা জরুরি
গোলাম রহমান
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৫, ১:০৪ এএম আপডেট: ২৪.০৪.২০২৫ ২:০১ এএম |

পণ্য সরবরাহ পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখা জরুরি
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী নানারকম অস্থিরতা বিদ্যমান। এর প্রভাবে দেশের মানুষও খুব একটা ভালো আছে বলা যাবে না। করোনা-পরবর্তী সংকট কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। এর ফলে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়াসহ অর্থনীতিতে বড় ধরনের একটা বিরূপ প্রভাব পড়েছিল। দেশের মানুষ এখনো তা পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়নি। অধিকাংশই বিশেষ করে উচ্চবিত্ত বা  উচ্চমধ্যবিত্ত ছাড়া প্রায় সবাই কষ্টে রয়েছে। যারা নির্দিষ্ট আয়ে সংসার চালান অথবা যারা অবসর জীবন যাপন করছেন তারা খুবই সংকটে রয়েছেন। সংসারের ব্যয় কাটছাঁট করতে করতে অবস্থা অনেকটা এমন দাঁড়িয়েছে যে, সঞ্চয় বলতে অবশিষ্ট কিছু নেই। সরকার কিছু গরিব বা নিম্নবিত্ত মানুষকে সহায়তা দানের চেষ্টা করছে। প্রান্তিক জনগণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে যেটুকু সহায়তা দেওয়া হচ্ছে তা পর্যাপ্ত নয়। নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আরও অধিক পরিমাণে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে নিয়ে আসতে হবে। বলাবাহুল্য, বিশ্বজুড়ে করোনা-পরবর্তী সময় থেকেই সাধারণ মানুষের আয় কমে গেছে। সে সময় অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছিল।
সেগুলো আজও চালু করা সম্ভব হয়নি। সে ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়িয়ে নতুন নতুন কর্মপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সে ক্ষেত্রে আমরা তেমন কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করিনি। বর্তমানে যদিও আশা করা যায় সার্বিকভাবে অর্থনীতির চাকা ঘুরছে। এর ফলে কিছুটা গতি সঞ্চার হয়েছে। তার পরও মানুষের আয় এখনো আগের পর্যায়ে পৌঁছায়নি। মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যাপক ঘাটতি এখনো আছে। ঘাটতি দূরীকরণে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি জরুরি। সেটা করতে হলে বিনিয়োগের দিকে মনোযোগ বাড়াতে হবে। বেকারত্ব দূরীকরণের লক্ষ্যে সরকারকে অবশ্যম্ভাবীভাবেই বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
প্রতি বছর সরকার জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির দাম বাড়ায়। এবং এর থেকে সরকার একচেটিয়া ব্যবসা করে। এসব পণ্যকে কৌশলগত পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সরকার এসব পণ্যের মাধ্যমে ব্যবসা করে থাকে। কারণ, অর্থনীতির চাকা সচল রাখার জন্য পণ্যগুলোর সরবরাহ পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখা দরকার। একই সঙ্গে নিত্যপণ্যের দাম সাশ্রয়ী রাখা দরকার। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, সরকার অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা বা মানুষকে স্বস্তির মধ্যে জীবনযাপনের সুযোগ দেওয়ার জন্য ব্যবসা করছে না। অতীতে সরকারকে জ্বালানি তেল ভর্তুকি দিয়ে বিক্রি করতে আমরা দেখেছি। বিগত সময়গুলোতেও আমরা দেখেছি যে, যখন তেলের দাম অনেক বেশি ছিল, তখন সরকার ভর্তুকি দিয়েছে। আমরা একটা কথা বারবারই বলেছি যে, জ্বালানির দাম বাড়ানো কমানো নিয়ে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু এর দামে যে টাকা মুনাফা হচ্ছে, সেটা দিয়ে মূল্য স্থিতিশীল রাখার তহবিল গঠন করা হোক। সেই তহবিলে যে অর্থ জমা হবে, তা দিয়ে যখন দাম বাড়বে, তখন যেন ভর্তুকি দেওয়া হয়। সরকারকে অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখার পাশাপাশি মানুষকে স্বস্তিতে রাখতে হলে নিত্যপণ্যের দাম সহনশীল রাখতে হবে।
দেশের উৎপাদনব্যবস্থায় এখনো শৃঙ্খলা ফিরে আসেনি। দেশজুড়ে চাঁদাবাজিসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কাঙ্ক্ষিত উন্নতি হয়নি। এ কথা সত্য যে, ব্যবসায়ীরা লাভ করার জন্যই ব্যবসা করে থাকে। সে ক্ষেত্রে সরকারের উচিত ব্যবসার পরিবেশ তৈরি করা। যাতে কেউ ইচ্ছা করলেও দাম বৃদ্ধি করতে না পারে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক না হলে উৎপাদন ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি অপেক্ষাকৃত কঠিন হয়ে পড়বে। একই সঙ্গে উৎপাদনের মন্থরগতির কারণে সমাজব্যবস্থাপনায় তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ নেতিবাচক প্রভাব আমরা ইতোমধ্যেই দেখেছি। এ কারণেও বাজারে নিত্যদ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে নিম্নপর্যায়ে দাম বৃদ্ধিতে একটা ইন্ধন জোগানোর চেষ্টা থাকে সবসময়। এর ফলে যে বিক্রি করে হয়তো তারও খরচ বেড়ে যায়। কিন্তু সুবিধা ভোগ করে কয়েকজন মাত্র অসাধু ব্যবসায়ী। যা কারও জন্যই কাম্য নয়। 
দ্রব্যমূল্যের বাজারে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় ভোক্তাদের কেবল বাজার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে স্বস্তি দেওয়া সম্ভব নয়। কয়েকজন ব্যবসায়ী মিলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করলে সাধারণ ব্যবসায়ীরা জিম্মি হয়ে পড়ে। বাজারব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে অসাধু ব্যবসায়ী কর্তৃক সৃষ্ট সিন্ডিকেট থেকে মানুষকে রক্ষা করতে হবে। সে জন্য যেকোনো মূল্যে সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে। বাজারে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করতে হবে। বিগত সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলারের সংকটে পণ্য আমদানি নিয়ন্ত্রণসহ নানা কারণে বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছিল। বর্তমানে চাহিদা ও জোগানে ব্যাপক তারতম্যের কারণে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নিয়ন্ত্রণে থাকছে না বাজার পরিস্থিতি। অন্যদিকে জনগণের ওপর ভ্যাটের চাপ না বাড়িয়ে রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ানো যেত। এভাবে ভ্যাট বাড়ালে মানুষের জীবনযাত্রা আরও কষ্টকর হয়ে ওঠে। ‘মানুষ যে পরিমাণ ভ্যাট সরকারকে দিচ্ছে সেটা সংগ্রহ ঠিকমতো হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে। তাছাড়া দেশে ভ্যাট আদায়যোগ্য অধিকাংশ ব্যবসায়ী ভ্যাট ফাঁকি দেয়।
দেশে নতুন সরকার এসেছে। তারা এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়ে  সমাধান করতে পারে। এর ফলে রাজস্ব ও ভর্তুকির সমস্যা সমাধান সম্ভব হতে পারে। সাধারণ মানুষও কিছুটা  স্বস্তি পাবে। বিগত সময়ে ভ্যাট মেশিন বাধ্যতামূলক করা হলেও তা পুরোপুরি কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। তার আগে এনবিআর (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) একেক সময় একেক ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা কার্যত ফলপ্রসূ হয়নি। আর যারা ভ্যাট ফাঁকি দেয় তাদের অনাগ্রহের কারণে ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্ট্রার (ইসিআর) কিংবা ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) বসানোর কর্মসূচি ফলত কোনো কাজে আসেনি। এসবে আরও বেশি জোর দেওয়া উচিত ছিল।
বাজারে অধিকাংশ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল নয়। সরবরাহ সামান্য কমলেই ব্যাপক দামবৃদ্ধি ঘটে। অনিয়ন্ত্রিত মুক্তবাজার অর্থনীতি অনুসরণের ফলে দেশের গুটিকয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান প্রায় প্রতিটি নিত্যপণ্যের সরবরাহ নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা নিয়েছে। এরা সিন্ডিকেট করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে বহুদিন থেকেই বাজারে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে চলেছে।  প্রতিযোগিতামূলক বাজারব্যবস্থাপনা না থাকায় কতিপয় প্রতিষ্ঠান পণ্যের সরবরাহ ও দাম নির্ধারণে কারসাজির মাধ্যমে অস্বাভাবিক মুনাফা অর্জন করছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উৎপাদক থেকে শুরু করে ভোক্তাশ্রেণিসহ সবাই। মাঝেমধ্যেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে বাজার অস্থিতিশীল করে কতিপয় মুনাফালোভী ব্যবসায়ী সাধারণ মানুষের পকেট কাটে। বাজারে আইনের সঠিক প্রয়োগ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ব্যতিত এ কঠিন সমস্যা দূরীকরণ ও সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমানো সম্ভব নয়। কাজেই বাজারব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সুষ্ঠু কর্মপরিকল্পনা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকারকে গঠনমূলক কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
লেখক: সাবেক সচিব এবং সাবেক চেয়ারম্যান, দুর্নীতি দমন কমিশন














সর্বশেষ সংবাদ
কুমিল্লায় রেল লাইনের উপর ৩ যুবকের খণ্ডিত লাশ
ঘুম, নেশা নাকি ভাগ্য- কোনটি কেড়ে নিয়েছে এই তিন যুবকের প্রাণ?
সিলিন্ডারবাহী পিকআপ উল্টে পুকুরে গোসলরত এক কিশোরের মৃত্যু
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জামায়াতের সাবেক আমীর খন্দকার দেলোয়ারের পাশে ইনসাফ হাউজিং এন্ড ডেভেলাপার্স
কুমিল্লা শহরের পূর্বাংশে শুক্রবার ও পশ্চিমাংশে সোমবার দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশনা
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কুমিল্লায় রেল লাইনের উপর ৩ যুবকের খণ্ডিত লাশ
ঘুম, নেশা নাকি ভাগ্য- কোনটি কেড়ে নিয়েছে এই তিন যুবকের প্রাণ?
কুমিল্লা শহরের পূর্বাংশে শুক্রবার ও পশ্চিমাংশে সোমবার দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশনা
মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি গ্রেপ্তার
সিলিন্ডারবাহী পিকআপ উল্টে পুকুরে গোসলরত এক কিশোরের মৃত্যু
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২