বিভিন্ন
ফলমূল, খাদ্যে ও সবজিকে পচন ও গ্রহণযোগ্যতা থেকে রক্ষার নামে বিভিন্ন
জাতের রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত করে জনজীবন বিপন্ন করে একজন ব্যবসায়ী
ব্যবসাকে লাভজনক করছে। এই রাসায়নিক পদার্থসমূহই হচ্ছে বিষ বা ভেজাল বস্তু। ঐ
একদল ব্যবসায়ী অনেক দিন খাদ্য দ্রব্যসমূহকে সতেজ রাখার নিমিত্তে অতিরিক্ত
মুনাফার আশায় মানুষের জীবনকে বিভিন্ন রোগে ফেলে জীবনের অবসান ঘটাচ্ছে।
শিশুখাদ্য দুধে ফরমালিন, ডিটারজেন্ট ও হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড মিশিয়ে দুধকে
বিষাক্ত করছে। অপরিপক্ক ফল পাকাতে ক্যালসিয়াম কার্বাইড ও ইথোফেন ব্যবহার
করছে। বিভিন্ন রাসায়নিক ব্যবহার করে মাছ ও মাংস সংরক্ষণ করছে। হলুদ, মরিচ ও
ধনে গুড়ায় সিসা ও কাপড়ের রং মেশানো হচ্ছে। মিষ্টি, কেক ও বিস্কুটে কাপড়ের
রং এবং অতিরিক্ত সোডিয়াম বেনজয়েট ব্যবহার করা হচ্ছে। আটায় মেশানো হচ্ছে চক
পাউডার। হরমোন প্রয়োগ করে দ্রুত বড় করা হচ্ছে আনার, কলাসহ বিভিন্ন ফল।
সন্ধ্যায়
নদীর পাড়ে বা পার্কে দাঁড়িয়ে চটপটি খান। রাতে বাসায় ফিরতেই প্রচন্ড জ¦র ও
শরীর ব্যথা শুরু হয়। গভীর রাত থেকে টানা পাতলা পায়খানা ও বমি। চিকিৎসকের
কাছে গেলে জানান খাদ্যে বিষক্রিয়া হয়েছে। চিকিৎসায় সুস্থ হলেও দুইদিন
শয্যাশায়ী থাকতে হয়। জীবন বাঁচাতে যে খাদ্য, ভেজাল দূষণের কারণে সেই খাদ্যই
বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বাড়াচ্ছে রোগব্যাধি, তরান্বিত করছে মৃত্যু।
খাদ্যে বিশুদ্ধতা রক্ষার বিভিন্ন সংস্থা জোরালো অভিযান শুরুর ঘোষণা দিলেও
বাজারে নেই তার প্রভাব। রাস্তার পাশের স্যান্ডউইচ, ছোলা-মুড়ি, চটপটি,
আলোভেরা, সরবত, আখের রস ও রেস্তোরার সালাদের নমুনা পরীক্ষা করে
প্রত্যেকটিতে প্রাণঘাতি রোগ সৃষ্টিকারী বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের
বিপদজনক মাত্রায় উপস্থিতি পাওয়া যায়।
প্যাকেটজাত বা প্যাকেটহীন কোন
খাবারই নিরাপদ নয়। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্য তৈরি ও সংরক্ষণ ছাড়াও মেশানো
হচ্ছে ক্ষতিকর রাসায়নিক ও রং। বাজারে বিক্রি হওয়া প্যাকটেজাত খাদ্যপণ্যের
বড় অংশেরই নাই বিএসটিআই এর অনুমোদন। আবার যাদের অনুমোদন আছে, তারা
পরবর্তীতে খাবারের মান ঠিক রাখছে কিনা তা যাচাই হচ্ছে না। রাস্তার পাশে
উন্মুক্ত অবস্থায় বিক্রি হচ্ছে অনেক মুখরোচক খাবার। খাবারের উপর ভনভন করে
উড়ছে মাছি, পরছে রাস্তার ধুলোবালি। প্যাকেটজাত বিভিন্ন কেকের মেয়াদ দেয়া
হয়েছে ৪-৫ মাস। পাউরুটির মেয়াদ দেয়া হয়েছে ৫-৬ দিন। এতে ক্ষতিকর ছত্রাকের
বসতবাড়ি তৈরি হচ্ছে। পুরনো পাউরুটি ফেরত নিয়ে সেগুলো ময়দার সঙ্গে মিশিয়ে
ফের তৈরি হচ্ছে নতুন পাউরুটি। দিনের পর দিন অনেকটা প্রকাশ্যে এসব অপকর্ম
চললেও দেখার কেউ নেই।
সম্প্রতি বাজারে আসা বিভিন্ন ব্রান্ডের
ইলেক্ট্রলাইট ড্রিংসের অধিকাংশেই নাই বিএসটিআই এর লগো। ছোট বড় সবার পছন্দে
থাকা ইলেক্ট্রলাইট ড্রিংসের নাম নেই বিএসটিআই’এর লাইসেন্স নেয়া বাধ্যতামূলক
২৯৯ টি পণ্যের তালিকায়। বিএসটিআই সূত্রে জানা যায়, নতুন করে ১৬ টি পণ্য
বাধ্যতামূলক তালিকায় যুক্ত করতে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই এ ব্যাপারে
এসআরও জারি হবে। তারপর তারা অভিযানে নামবে বলে জানা যায়।
বিশেষজ্ঞদের
মতে, খাদ্যে ভেজালের কারণে বাংলাদেশে ক্যান্সার, কিডনীরোগ, লিভারের সমস্যা,
পেটের অসুখ, এ্যালার্জি, ডায়বেটিস এবং শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির হার অধিক
হারে বাড়ছে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের গবেষণা অনুযায়ী, দেশে ক্যান্সার রোগীর
সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। যার অন্যতম কারণ খাদ্যে বিষক্রিয়া। বিশ^স্বাস্থ্য
সংস্থার তথ্যমতে, প্রতি বছর বিশে^র প্রায় ৬০ কোটি মানুষ ভেজাল ও দূষিত
খাদ্য গ্রহণের কারণে অসুস্থ হয়। মারা যায় ৪ লাখ ৪২ হাজার মানুষ। পরিবেশ
বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু ভেজালে খাদ্য
গ্রহণের কারণে প্রতিবছর দেশে ৩ লাখ লোক ক্যান্সার, ২ লাখ লোক কিডনী রোগে,
দেড় লাখ লোক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে। ১৫ লাখ বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম হচ্ছে,
জনতার এ সমস্যার যেন কোন সমাধান নাই। (সংগৃহিত)
লেখক: সাবেক অধ্যক্ষ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ