মাসুদ পারভেজ।।
স্থাপত্যশৈলীর
অন্যতম নিদর্শন দশ গম্বুজ বিশিষ্ট নওয়াব বাড়ি জামে মসজিদ। উপমহাদেশের
প্রথম নারী নবাব নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী কুমিল্লার লাকসামে তাঁর জমিদার
বাড়ির পাশে দৃষ্টিনন্দন এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদটি দেখতে খুবই
নান্দনিক। তৎকালীন ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী এই মসজিদটিতে পুরুষদের সাথে-সাথে
নারীদেরও নামাজ পড়ার ব্যবস্থা রাখেন।
মহিয়সী নারী নওয়াব ফয়জুন্নেছা
চৌধুরাণী শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণের পাশাপাশি নারীদের
অধিকার প্রতিষ্ঠায় অনবদ্য অবদান রেখে গেছেন তিনি। তার নির্মিত
স্থাপনাসমূহের মধ্যে এই ১০ গম্বুজ বিশিষ্ট অনিন্দ্য স্থাপত্যশৈলীর মসজিদটি
অন্যতম, যা নওয়াব বাড়ি মসজিদ হিসেবে বেশ পরিচিত।
মসজিদটির ভেতরের দেয়াল,
মিম্বর আর মুয়াজ্জিনের আজান দেয়ার জায়গায় আছে দুই ধরনের টাইলসের কারুকাজ।
তৎকালীন টাইলসগুলো ছিল খুব দৃষ্টিনন্দন। দেয়ালের উপরের অংশের টাইলসগুলোতে
রয়েছে গোলাপি, সাদা আর নীল রঙের কারুকাজ। আর নিচের দিকের টাইলসে হালকা
শ্যাওলা সবুজ রঙের ডিজাইন। মসজিদের ছাদে রয়েছে ১০টি গম্বুজ। মাঝখান বরাবর
রয়েছে বড় একটা গম্বুজ। এই গম্বুজের চার ধারে মাইকগুলো লাগানো। বড় গম্বুজের
চারপাশে আছে মোট ৯টি গম্বুজ।
ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী মুসল্লিদের সুবিধার্থে একটি পুকুর খনন করেছিলেন। পাশেই রয়েছে অজু করার জন্য খননকৃত পুকুরটি।
মসজিদের
সামনেই শায়িত আছেন নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী ও তার পরিবারের উত্তরসূরিরা।
মসজিদের দক্ষিণে পারিবারিক কবরস্থান ফয়জুন্নেছা পরিবারের। নওয়াব ফয়জুন্নেছা
চৌধুরাণীর ছোট কন্যা বদরুন্নেছা চৌধুরাণীকে নিজ গ্রাম পশ্চিমগাঁওয়ে বিয়ে
দেওয়ায় তার কবর মায়ের পাশেই হয়েছে।
লাকসাম নওয়াব বাড়ি পরিদর্শনে আসা
ভ্রমণপিপাসুদের অনেকে অনিন্দ্য সুন্দর এ মসজিদে নামাজ আদায় করেন। অনেককে
মসজিদটির ছবি ক্যামেরাবন্দি করতেও দেখা যায়।
নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী ছোট কন্যা বদরুন্নেছা চৌধুরাণীকে নিজ গ্রাম পশ্চিমগাঁওয়ে বিয়ে দেওয়ায় তাঁর কবর মায়ের পাশেই হয়েছে।
অপর
মেয়ে সৈয়দা আসাদুন্নেসা চৌধুরাণীকে বৃহত্তর সিলেটের হবিগঞ্জ জেলার জমিদার
বাড়িতে বিয়ে দিয়েছিলেন বলে এখানে তাঁর কবর নেই। সৈয়দ শাহ আজহারুল হক, আলহাজ
খান বাহাদুর সৈয়দ মুহাম্মদ গাজিউল হক, মোতওয়াল্লী আলহাজ্ব মৌলভী সৈয়দ
সিরাজুল হক, সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল হক, সৈয়দা খাইরুন্নেসা বেগম সহ আরো
কয়েকজনের কবর রয়েছে এখানে। প্রত্যেক কবর ফলকে নাম আর জন্ম-মৃত্যু সাল লেখা
আছে।
স্থানীয় বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম জানান, নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী
লাকসামের অহংকার। এ লাকসামে জন্মগ্রহণ করে তিনি লাকসামকে দেশ-বিদেশে পরিচিত
করে তুলেছেন। তার নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত বিভিন্ন স্থাপনার মধ্যে লাকসাম
নওয়াব বাড়ি মসজিদ অন্যতম। এমন দৃষ্টিননন্দন মসজিদ লাকসামের আর কোথায়ও চোখে
পড়ে না।
নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণীর বংশধর, লাকসামের বিশিষ্ট নাগরিক
ফজলে রহমান চৌধুরী আয়াজ জানান, নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণীর বংশধর হিসেবে
আমরা আজ গর্বিত। ইতিহাসে তার নাম অমর হয়ে আছে। নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী
জীবদ্দশায় জনকল্যাণমুলক বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। তার নির্মিত
বিভিন্ন স্থাপনার মধ্যে ১০ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটি খুবই দৃষ্টিনন্দিত।
নওয়াব বাড়ির পাশে মসজিদটির অবস্থান হওয়ায় পুরো এলাকার সৌন্দর্য বৃদ্ধি
পেয়েছে। সরকারি প্রয়োজনীয় তদারকি না থাকায় মসজিদটি উন্নয়নের ছোঁয়া বঞ্চিত।
তিনি
আরও জানান, দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটকরা লাকসাম নওয়াব বাড়ির পাশাপাশি মসজিদটিও
পরিদর্শনে আসেন। আগতদের মধ্যে মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা
মসজিদটিতে নামাজ পড়েন। মসজিদটির প্রয়োজনীয় সংস্কার ও সৌন্দর্য বৃদ্ধির
লক্ষ্যে তিনি সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের সুদৃস্টি চেয়েছেন।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক ড. মোছাঃ নাহিদ সুলতানা
বলেন,
মহিয়সী নারী নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী কর্তৃক নির্মিত ১০ গম্বুজ মসজিদটি
খুবই সুন্দর। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর তার বাড়িকে আকর্ষণীয় প্রত্ন পর্যটন
কেন্দ্রে রূপান্তরের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এজন্য ৩০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প
অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বাড়িটির পাশাপাশি
মসজিদটিও আরো দৃষ্টিনন্দিত হবে।
ক্যাপশন: নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী নির্মিত অনিন্দ্য সুন্দর লাকসাম নওয়াব বাড়ি মসজিদ।