গত ২২ এপ্রিল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও পালিত হয়েছে বিশ্ব ধরিত্রী দিবস। দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল ‘আমাদের শক্তি, আমাদের পৃথিবী’। নানা কারণে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের তাপমাত্রা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। অনুমোদনহীন ভবন নির্মাণ এবং বন ধ্বংস করায় পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, ফলে বাতাস প্রবাহিত হওয়ার করিডরও সংকুচিত হয়ে আসছে। ফলে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা এখন হিট আইল্যান্ড বা তপ্ত দ্বীপে পরিণত হচ্ছে। নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, ঢাকার অনেক স্থান এখন হিট আইল্যান্ডে পরিণত হয়েছে। কারণ আমাদের কংক্রিটাইজেশন বেড়েই চলেছে। ফলে আমাদের ঝুঁকিও বাড়ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভবনের নকশায় পরিবেশ ও জলবায়ুর ধারণা অনুপস্থিত দেখা যাচ্ছে। অপরিকল্পিতভাবে স্থাপনা নির্মাণ নগরীর একটি চলমান প্রক্রিয়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। জলাশয় ভরাট করে যত্রতত্র স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। সবুজ গাছপালা কেটে পরিবেশকে হুমকির মধ্যে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে নগরীর অপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনায়। যানবাহন ও শিল্পকারখানার ধোঁয়া থেকে সৃষ্ট বায়ুদূষণে নগরের তাপমাত্রা ব্যাপকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নগরীর বাসিন্দাদের।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বার্ষিক ২ দশমিক ৬ শতাংশ হারে বন উজাড় হচ্ছে। যা বৈশ্বিক গড় হারের প্রায় দ্বিগুণ। অথচ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় দেশে ভূখণ্ডের মোট আয়তনের ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা আবশ্যক। ইউএসএইড-এর ২০২২ সালের জরিপ অনুযায়ী, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে গাছ রয়েছে ১৪ শতাংশ এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ১০ শতাংশেরও কম। অথচ নগরে ৩০ থেকে ৪০ ভাগ সবুজ এলাকা থাকা জরুরি। এ ছাড়া রাজধানীতে অনুমোদনহীন ভবন নির্মাণও তাপমাত্রা বাড়ার পেছনে দায়ী বলে বিশ্লেষকরা মন্তব্য করেন। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ২০২১ সালের এক গবেষণায় ঢাকার অন্তত ২৫টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানকে হিট আইল্যান্ড হিসেবে চিহ্নিত করে। গবেষকদের ধারণা, বর্তমানে রাজধানীতে হিট আইল্যান্ড আরও বেড়েছে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা যেখানে ১ দশমিক ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়ছে, সেখানে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় তাপমাত্রা বাড়ছে ৫ থেকে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত।
তাপমাত্রা কমাতে করণীয় সম্পর্কে পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, জলবায়ু অভিযোজন পরিকল্পনা অনুযায়ী নগরে বৃক্ষ রোপণ করতে হবে। জলাশয়গুলো পুনরুদ্ধার, কংক্রিট ও সবুজের ভারসাম্য আনা, সরু রাস্তার পাশে সুউচ্চ ভবন নির্মাণ করার প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। একইভাবে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
আমরা দেখেছি, তাপমাত্রা কমাতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন পানি ছিটানো ও বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম শুরু করেছিল। কিন্তু সে কার্যক্রম সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়নি। যতটুকু সম্পন্ন হয়েছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় যৎসামান্য ছিল। কোথাও কোথাও বৃক্ষগুলো নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। অনেক স্থানে অপরিকল্পিতভাবে বৃক্ষ রোপণের পর প্রয়োজনীয় যত্নের অভাবে তা নষ্ট হতে চলেছে। নগরীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির পেছনে অপরিকল্পিত নগরায়ণকে দায়ী করা যায়। সামনে বর্ষা মৌসুম আসছে, এ সময়টা সামনে রেখে নগরে বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম বাড়াতে জোর দিতে হবে। আশা করি, সরকার জলবায়ুজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।