চলতি বছর বাংলাদেশে আরও ৩০ লাখ মানুষ অতিদরিদ্র
হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। গত বুধবার রাতে বিশ্বব্যাংক
প্রকাশিত বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট প্রতিবেদনে এ আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। এ
সময় অতিদরিদ্রের হার বেড়ে ৯ দশমিক ৩ শতাংশ হবে। পাশাপাশি জাতীয়
দারিদ্র্যের হারও বাড়বে বলে মনে করছে সংস্থাটি। এ ছাড়া সার্বিকভাবে দেশের
অর্থনীতি ব্যাহত হবে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরে
শ্রমবাজারের দুর্বল অবস্থা অব্যাহত থাকবে। এ ছাড়া সাধারণ মানুষের বিশেষ
করে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকা মানুষের প্রকৃত আয় কমতে
পারে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের শ্লথ গতির কারণে ঝুঁকিতে থাকা গরিব মানুষের
ওপর বেশি প্রভাব ফেলছে। এতে বৈষম্য আরও বাড়বে বলে বিশ্বব্যাংক মনে করে।
শুধু অতিদারিদ্র্যের হার নয়, জাতীয় দারিদ্র্যের হারও বাড়বে বলে মনে করে
বিশ্বব্যাংক।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য-উপাত্ত
বিশ্লেষণে দেখা যায়, করোনার সময় ছাড়া গত তিন দশকে দেশে দারিদ্র্যের হার
বাড়েনি। দারিদ্র্য কমানোর সাফল্যের জন্য বাংলাদেশ পুরো বিশ্বে অনুকরণীয়। এর
স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য বিমোচন দিবস ঢাকায় পালন
করেছে বিশ্বব্যাংক।
দেশে মূল্যস্ফীতি যে হারে বাড়ছে, সে অনুপাতে মজুরি
বাড়ছে না। এতে করে সাধারণ মানুষের প্রকৃত আয় কমছে। কিছুদিন ধরে দেশে মজুরির
হার বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম। তথ্যমতে, গত মার্চ মাসে মূল্যস্ফীতির
হার ছিল ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ। মজুরি বৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। ক্রয়ক্ষমতা
সমতা (পিপিপি) অনুসারে দিনে ২ দশমিক ১৫ ডলার আয় করে প্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবা
কেনার সামর্থ্য না থাকলে অতিদরিদ্র হিসেবে গণ্য করা হয়। বাংলাদেশের জাতীয়
দারিদ্র্যসীমার মানদণ্ড হলো খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত পণ্য ও সেবা কেনার জন্য
একজন মানুষের প্রতি মাসে গড়ে ৩ হাজার ৮২২ টাকা দরকার। খরচ করার সামর্থ্য
যদি না থাকে, তাহলে তিনি দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাবেন বা দরিদ্র হয়ে
যাবেন। সম্প্রতি বাংলাদেশে এ রকম দারিদ্র্যের সংখ্যা বহুগুণ বেড়েছে।
মূল্যস্ফীতির এই বিশাল ধাক্কা সামলানো সাধারণ মানুষের জন্য খুবই কঠিন।
বিশ্লেষকদের
মতে, দেশের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাসহ ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা, অর্থনৈতিক
কার্যক্রমে ধীরগতির সৃষ্টি করেছে। এর ফলে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর ওপর বেশি
প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া শ্রমবাজার পরিস্থিতি চলতি বছর দুর্বল
থাকতে পারে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমানোর পেছনে দেশের রাজনীতির
ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তাকে অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করেছে বিশ্বব্যাংক।
রাজস্ব সংস্কার, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং আর্থিক খাতের সংস্কার না হলে
প্রবৃদ্ধির গতি আরও মন্থর হতে পারে। এ সংকট কাটিয়ে উঠতে সাহসী ও
লক্ষ্যভিত্তিক সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
বিশ্বব্যাংকসহ
অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো বিভিন্ন সময় পূর্বাভাস দিয়েছে। সে
অনুসারে, এ বছর ৪ শতাংশের মতো মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির
সম্ভাবনা রয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি রোধ ও দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমাতে দেশের
বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদরাও ইতোমধ্যে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। অর্থনীতির
গতি ফেরাতে এসব পরামর্শ কাজে লাগাতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে
হবে। আশা করি, সরকার বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাসকে আমলে নিয়ে অর্থনীতির সংকট
কাটাতে উদ্যোগ নেবে।