মাসুদ
আলম।। করোনা সংক্রামণ রোধে সরকার আরও সাতদিনের সর্বাত্মক লকডাউনের ঘোষণা
দিলেও কুমিল্লায় মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। মাস্ক ব্যবহারে
এখনও মানুষের মধ্যে যথেষ্ট উদাসীনতা রয়েছে। সড়কে যান চলাচলে স্বাভাবিক
অবস্থা ফিরে এসেছে। মার্কেট ও শপিং মল ছাড়া পাড়া, মহল্লাসহ শহরে কিছু কিছু
দোকানে একটি শাটারের অর্ধেক খুলে বেচাকেনা করেছেন ব্যবসায়ীরা। গত বুধবার
(১৪ এপ্রিল) থেকে শুরু হওয়া সর্বাত্মক লকডাউনের পাঁচদিন অতিবাহিত না হতেই
কুমিল্লায় পুরোপুরি ঢিলেঢালা হয়ে পড়েছে লকডাউন।
সোমবার দুপুরে কুমিল্লার
রাজগঞ্জ ও রাণীর বাজার ঘরে দেখা যায়, সারাদেশে সর্বাত্মক লকডাউনের ঘোষণায়
রাজগঞ্জ ও রাণীর বাজার কাঁচা ও মাছ-মাংসের বাজার সামাজিক দূরত্ব সৃষ্টি
লক্ষ্যে সড়কের দুইপাশে এসে পড়ে। এদিকে লকডাউন ঢিলেঢালা হয়ে পড়ায় সড়কের যান
চলাচল ও বাজারে মানুষের সমাগম বাড়ায় এখন উল্টো ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছেন
নগরবাসী। লকডাউনেও তৈরি হচ্ছে যানজট। হাট বাজারে মানুষের মধ্যে সামাজিক
দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। মাস্ক ব্যবহারেও উদাসীনতা বেড়েছে।
রাজগঞ্জ
ও রাণীর বাজার ঘুরে পরিসংখ্যান করে দেখা যায়, প্রায় ৩৫ শতাংশ
ক্রেতা-বিক্রেতা এখনও মাস্ক পড়ছেন না। এছাড়া অন্যদের মধ্যে মাস্ক থাকলেও
নাক এবং থুতনির নিচে।
এছাড়া লকডাউনে অবাধে চলেছে মানুষজন। প্রথম ও
দ্বিতীয় দিনের লকডাউনে সরকারের বিধিনিষেধে কিছুটা কঠোরতা থাকলেও তৃতীয় দিন
থেকে কুমিল্লার শহর এবং উপজেলা সদরের হাটবাজার পর্যন্ত জনসমাগমকৃত সব
জায়গায় সর্বাত্মক লকডাউন ঢিলেঢালা হয়ে পড়ে। অবশ্য লকডাউন কার্যকর করতে
প্রশাসনের প্রচেষ্টা ও নজরদারি ছিল যথেষ্ট। তবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের
চিত্র কুমিল্লায় ছিল একেবারেই নাজুক।
এছাড়া সোমবার কুমিল্লা মহানগরীতে
লডাউনের পরিস্থিতি ঘুরে দেখা যায়, সর্বাত্মক লকডাউনের প্রথম, দ্বিতীয় ও
তৃতীয় দিনে তুলনায় কুমিল্ল শহরের অধিকাংশ দোকানপাট স্বাভাবিকভাবে খোলা ছিল।
কিছু কিছু দোকানে একটি শাটার অর্ধেক খুলে বেচাকেনা করেছেন ব্যবসায়ীরা।
মাছ, মাংস, কাঁচাবাজারের বেচাকেনায় ক্রেতার ভিড় ছিল অন্যান্য দিনের মতো।
বাজারে গণপরিবহন চলাচল ও মানুষজনের চলাচলও ছিল স্বাভাবিক। সব মিলিয়ে
ঢিলেঢালাভাবেই চলেছে সর্বাত্মক লকডাউন। বাজারে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাদের
অধিকাংশ মাস্ক পরতে দেখা যায়নি। অনেকে মাস্ক পরে তা নামিয়ে রেখেছেন
থুতনিতে। বেশির ভাগ মানুষদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। এ অবস্থায়
প্রশাসনের নজরদারি যে ছিল না, তা নয়। বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাসহ সাধারণ
মানুষ ও দোকানিরা প্রশাসনের উপস্থিতি টের পেয়ে আগেভাগেই নিজেকে সরিয়ে
নিচ্ছে লকডাউনে। আবার প্রশাসনের মহড়া চলে গেলেই আবারও স্বাভাবিক নিয়মে এসে
করছেন বেচাকেনা ও কাজকর্ম। তবে এখানে সর্বাত্মক লকডাউন ঢিলেঢালা হলেও পুলিশ
প্রশাসনের প্রচেষ্টা ও নজরদারির কমতি ছিল না বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এখানকার গণমানুষ স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে অচেতন ও লকডাউন সম্পর্কে উদাসীন
হওয়ার কারণেই এমনটি ঘটছে।
ঘুরে আরও দেখা যায়, লকডাউন কুমিল্লা সর্ববৃহৎ
কাঁচা ও মাছ বাজার এবং রাণীর বাজারের কাঁচা বাজার সড়কের উপর চলে আসায়
কৃক্রিম যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। সেই সাথে বাজারে সামাজিক দূরত্ব নেই বললেই
চলে। সচেতন নাগরিক সমাজ লকডাউনে রাজগঞ্জ ও রাণীর বাজারে মানুষের জনসমাগম ও
যানজট ছবি-ভিডিও ধারণ করে সমালোচনা করছেন।
লকডাউনে প্রশাসনের ভূমিকা
নিয়ে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আজিম-উল আহসান জানান, সর্বাত্মক
লকডাউন কার্যকর করতে পুলিশ প্রশাসনের প থেকে চেষ্টার কোনো ক্রটি নেই।
মানুষজন পুলিশ প্রশাসনের উপস্থিতি টের পেয়ে লকডাউনে তাল মেলায় আবার পুলিশ
প্রশাসন চলে গেলেই আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়। এর কারণ মানুষের মধ্যে
সচেতনতাবোধ নেই।
তিনি আরও জানান, কুমিল্লা সর্বাত্মক লকডাউন কার্যকর
করতে পুলিশসহ জেলা প্রশাসনের গত কয়েক দিনে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে অভিযান চলে
যাচ্ছে। মানুষের মাঝে গণসচেতনতার সৃষ্টি করতে পুলিশ সব ধরণের প্রদক্ষেপ
চালিয়ে যাচ্ছেন। সর্বাত্মক লকডাউন নিশ্চিতে সড়কে সড়কে বাঁশ দিয়ে টানা দেওয়া
হয়েছে। ২১টি সেন্টারে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।