রেকর্ড মৃত্যুর পরদিন শনাক্ত রোগীর সংখ্যায় নতুন রেকর্ডের খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৩৮ হাজার নমুনা পরীক্ষা করে আরও ১১ হাজার ৬৫১ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে; মৃত্যু হয়েছে ১৯৯ জনের।
ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে গত ৩০ জুন থেকে সারা দেশে জারি করা লকডাউনের বিধিনিষেধের মধ্যেই মঙ্গলবার প্রথমবারের মত দশ হাজার ছাড়িয়ে যায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা। সেদিন ১১ হাজার ৫২৫ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ে। বৃহস্পতিবার সেই সংখ্যাও ছাড়িয়ে গেল।
দৈনিক শনাক্তের সঙ্গে মৃত্যুতেও রেকর্ড হয়েছিল সোমবার, সেদিন সারা দেশে ১৬৪ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বুধবার তা এক লাফে বেড়ে ২০১ জন হয়। বৃহস্পতিবার মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে মাত্র দুইজন।
নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা পৌঁছেছে ৯ লাখ ৮৯ হাজার ২১৯ জনে। তাদের মধ্যে ১৫ হাজার ৭৯২ জনের প্রাণ গেছে করোনাভাইরাসে।
গত এক দিনে কেবল ঢাকা বিভাগেই ৪৯৪৯ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা দিনের মোট শনাক্তের প্রায় ৪২ শতাংশের বেশি। চট্টগ্রাম বিভাগে এক দিনে শনাক্ত রোগী প্রায় দুই হাজারের পৌঁছেছে, খুলনায় ছাড়িয়েছে দেড় হাজার।
আর যে ১৯৯ জন গত এক দিনে মারা গেছেন, তাদের ৬৫ জনই ছিলেন ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা। খুলনা বিভাগে মৃত্যু হয়েছে ৫৫ জনের।
সরকারি হিসাবে গত এক দিনে আরও ৫ হাজার ৮৪৪ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৮ লাখ ৫৬ হাজার ৩৪৬ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬০৫টি ল্যাবে ৩৬ হাজার ৮৫০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৬৮ লাখ ৬৬ হাজার ৬৮২টি নমুনা।
২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ৬২ শতাংশ,আগেরদিন যা ৩১ দশমিক ৩২ শতাংশ ছিল।
দেশে এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৪১ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৬০ শতাংশ।
ঢাকা বিভাগের মধ্যে ঢাকা জেলায় ৩ হাজার ৪৫৬ জন, ফরিদপুরে ১৬৪ জন, গাজীপুরে ২০০ জন, গোপালগঞ্জে ১২৬ জন, কিশোরগঞ্জে ১২৭ জন, নারায়ণগঞ্জে ২০৩ জন, রাজবাড়ীতে ১৪৩ এবং টাঙ্গাইল জেলায় ২৫৪ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ৭১৩ জন, কুমিল্লায় ৩৯৩ জন, নোয়াখালীতে ১৬৮ জন, কক্সবাজারে ২১২ জন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১০৩ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
রাজশাহী বিভাগের মধ্যে রাজশাহী জেলায় ২৮০ জন, নাটোরে ১৫২ জন, পাবনায় ১৭৭ জন, সিরাজগঞ্জে ১১৬ জন এবং বগুড়ায় ২৩৮ জন নতুন রোগী মিলেছে।
খুলনা বিভাগের বাগেরহাটে ১৩৫ জন, চুয়াডাঙ্গায় ১৯১ জন, যশোরে ৩৫২ জন, ঝিনাইদহে ১৪৪ জন, খুলনায় ৩৩৮ জন এবং কুষ্টিয়ায় ২৩২ জনের মধ্যে ধরা পড়েছে সংক্রমণ।
রংপুর বিভাগের রংপুরে ১১৬ জন, দিনাজপুরে ১১১ জন এবং ঠাকুরগাঁওয়ে ১৪৮ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এছাড়া অন্য বিভাগগুলোর মধ্যে সিলেট জেলায় ২৫৬ জন, বরিশাল জেলায় ১২৫ জন, এবং ময়মনসিংহ জেলায় ২৩৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে গত এক দিনে।
গত এক দিনে বিভাগে যে ৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে ২৮ জন ঢাকা জেলার। আর খুলনা বিভাগে মারা যাওয়া ৫৫ জনের মধ্যে ১২ জন করে খুলনা ও কুষ্টিয়া বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।
এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ৩৭ জন, রাজশাহী বিভাগে ১৫ জন, বরিশাল বিভাগে ৩ জন, রংপুর বিভাগে ৯ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন এবং সিলেট বিভাগে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়।
মৃত ১৯৯ জনের মধ্যে ১০৭ জনেরই বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। ৪৭ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ২৮ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ৬ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে,৯ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে এবং ২ জনের বয়স ১১ থেকে ২১ বছরের মধ্যে ছিল।
তাদের ১৩৩ জন ছিলেন পুরুষ, ৬৬ জন ছিলেন নারী। ১৪৫ জন সরকারি হাসপাতালে, ৪২ জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং ১২ জন বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গতবছর ৮ মার্চ; তা ৯ লাখ পেরিয়ে যায় গত ২৯ জুন।
প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ বছর ৪ জুলাই তা ১৫ হাজার ছাড়ায়।
বিশ্বে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৮ কোটি ৫১ লাখ ছাড়িয়েছে। আর ৪০ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে এ মহামারীতে।