নিজস্ব প্রতিবেদক : ঈদের ছুটি শেষে নমুনা পরীক্ষা বেড়ে আগের অবস্থায় পৌঁছে যাওয়ায় দেশে এক দিনে শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা ফের ১১ হাজার ছাড়িয়েছে মৃত্যু হয়েছে আরও সোয়া দুইশ মানুষের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, রোববার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে সাড়ে ৩৭ হাজার নমুনা পরীক্ষা করে ১১ হাজার ২৯১ জনের দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, এক দিনে ২২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
নতুন আক্রান্তদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৬৪ হাজার ৬৩৫ জনে। আর আক্রান্তদের মধ্যে মোট ১৯ হাজার ২৭৪ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে করোনাভাইরাস। সরকারি হিসেবে এক দিনে সেরে উঠেছেন ১০ হাজার ৫৮৪ জন। তাদের নিয়ে এই পর্যন্ত সুস্থ হলেন ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৯২৩ জন।
ঈদের ছুটির আগে সর্বশেষ কর্মদিবসের পরিস্থিতি নিয়ে গত ২০ জুলাই যে পরিসংখ্যান স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দিয়েছিল, তাতে সাড়ে ৩৯ হাজার নমুনা পরীক্ষা করে ১১ হাজার ৫৭৯ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার কথা জানানো হয়েছিল, মৃত্যু হয়েছিল ২০০ জনের।
২০ জুলাই ছিল ঈদের ছুটির প্রথম দিন। নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা সেদিন থেকেই কম থেকে করে, সেই সঙ্গে কমতে থাকে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা। ঈদের দিন প্রায় সাড়ে ১১ হাজার নমুনা পরীক্ষা করে পরদিন ৩ হাজার ৬৯৭ জন নতুন রোগী শনাক্তের খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেদিনও ১৮৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
২১ জুলাই থেকে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা আট হাজারের নিচেই ছিল। তবে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ১৬৬ জনের নিচে নামেনি।
ঈদের ছুটির পর নমুনা পরীক্ষা আবার ৩৫ হাজার ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শনাক্ত রোগীর সংখ্যাও ঈদের আগের পর্যায়ে পৌঁছে গেল, সেই সঙ্গে বেড়ে গেল দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যাও।
গত এক দিনে কেবল ঢাকা বিভাগেই ৪ হাজার ৭৫৫ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা দিনের মোট শনাক্তের ৪২ শতাংশ। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে দেড় হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে।
আর যে ২২৮ জন গত এক দিনে মারা গেছেন, তাদের ৬৯ জনই ছিলেন ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা। খুলনা বিভাগে ৫০ জন এবং চট্টগ্রাম বিভাগে ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গতবছর ৮ মার্চ; তা ১১ লাখ পেরিয়ে যায় এ বছর ১৮ জুলাই। তার আগে ১২ জুলাই দেশে রেকর্ড ১৩ হাজার ৭৬৮ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পরে।
প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত ২৪ জুলাই তা ১৯ হাজার ছাড়ায়। তার আগে ১৯ জুলাই এক দিনে রেকর্ড ২৩১ জনের মৃত্যুর খবর জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বিশ্বে শনাক্ত রোগী ইতোমধ্যে ১৯ কোটি ৩৮ লাখ ছাড়িয়ে গেছে, করোনাভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে ৪১ লাখ ৫৪ হাজারের বেশি মানুষের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৩৯টি ল্যাবে ৩৭ হাজার ৫৮৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৭৪ লাখ ৫৫ হাজার ২৮১টি নমুনা।
২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ৩০ দশমিক ০৪ শতাংশ, যা আগেরদিন ৩২ দশমিক ৫৫ শতাংশ ছিল।
দেশে এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৬২ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
গত এক দিনে ঢাকা জেলায় ৩ হাজার ৪৫৫ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা সারা দেশে সবচেয়ে বেশি। ঢাকা বিভাগের মধ্যে গাজীপুরে ১৯৮ জন, মানিকগঞ্জে ১০৮ জন, নারায়ণগঞ্জে ১৯৬ জন, নরসিংদীতে ১২০ জন, রাজবাড়ীতে ১১৮ জন, শরীয়তপুরে ১০৬ জন এবং টাঙ্গাইল জেলায় ১৯৩ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ৮০১ জন, নোয়াখালীতে ১৩০ জন, চাঁদপুরে ১০৫ জন এবং কুমিল্লায় ২৬৩ জন আক্রান্ত হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়।
রাজশাহী বিভাগের মধ্যে রাজশাহী জেলায় ২৬৮ জন, নাটোরে ১৫৪ জন, পাবনায় ১০৩ জন এবং বগুড়ায় ২৪২ জন নতুন রোগী পাওয়া গেছে।
রংপুর বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২০০ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে রংপুর জেলায়। এছাড়া নীলফামারীতে ১১২ জন, কুড়িগ্রামে ১২৮ জন, ঠাকুরগাঁওয়ে ১০২ জন এবং দিনাজপুরে ১৮২ জনের মধ্যে ধরা পড়েছে করোনাভাইরাস সংক্রমণ।
খুলনা বিভাগের মধ্যে ঝিনাইদহ জেলায় সবচেয়ে বেশি ২৭৯ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এছাড়া বাগেরহাটে ১১৫ জন, যশোরে ১৩৬ জন, খুলনায় ১৯৭ জন এবং কুষ্টিয়ায় ২৬০ জন কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছেন গত ২৪ ঘণ্টায়।
অন্য বিভাগগুলোর মধ্যে ময়মনসিংহে ১৮৪ জন, শেরপুরে ১৪৬ জন, বরিশালে ২৭৩ জন, পটুয়াখালীতে ১০৬ জন, ভোলায় ১০২ জন, বরগুনায় ১১৯ জন, ঝালকাঠিতে ১০৭ জন এবং সিলেটে ২৬৬ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়।
গত এক দিনে ঢাকা বিভাগে যে ৬৯ জন কোভিড রোগীর মৃত্যু হয়েছে, তাদের ৪১ জন ছিলেন ঢাকা জেলার। চট্টগ্রাম বিভাগে মারা যাওয়া ৪০ জনের মধ্যে ১৪ জন কুমিল্লা জেলার এবং খুলনা বিভাগে মারা যাওয়া ৫০ জনের মধ্যে ১৪ জন কুষ্টিয়ার বাসিন্দা ছিলেন।
এছাড়া রাজশাহী বিভাগে ২১ জন, রংপুর বিভাগে ১৬ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১৫ জন, বরিশাল বিভাগে ৬ জন ও সিলেট বিভাগে ১১ জনের মৃত্যু ঘটেছে গত এক দিনে।
মৃত ২২৮ জনের মধ্যে ১১৩ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। এছাড়া ৫০ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ৩৪ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ২২ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, ৮ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে, ২ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ছিল। ১ জনের বয়স ছিল ১০ বছরের কম।
মৃতদের মধ্যে ১২৫ জন ছিলেন পুরুষ, ১০৩ জন ছিলেন নারী। ১৭৪ জন সরকারি হাসপাতালে, ৪০ জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং ১১৪ জন বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।