নিজস্ব
প্রতিবেদক: দেশে করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের দাপটের মধ্যে আরও ২৬৪
জন কোভিড রোগীর মৃত্যু হয়েছে গত এক দিনে, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। এর
আগে ২৭ জুলাই এক দিনে ২৫৮ জনের মৃত্যুর খবর এসেছিল, সেই রেকর্ড ১০ দিনও
টিকল না। গত এক দিনে মারা যাওয়া ২৬৪ জনকে নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর
মোট সংখ্যা ২১ হাজার ৯০২ জনে পৌঁছাল।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে,
বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে প্রায় ৪৭ হাজার নমুনা
পরীক্ষা করে আরও ১২ হাজার ৭৪৪ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
তাতে দেশে শনাক্ত রোগীর মোট সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৩ লাখ ২২ হাজার ৬৫৪ জন।
আগের
দিন বুধবার সারা দেশে প্রায় ৫০ হাজারের মত নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল, তাতে ১৩
হাজার ৮১৭ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ে। আর এক দিনে মৃত্যু হয় ২৪১ জনের। সেই
হিসেবে এক দিনে শনাক্ত রোগীর সখ্যা কিছুটা কমে এলেও মৃত্যুর সংখ্যা
বেড়েছে।
গত এক দিনে শুধু ঢাকা বিভাগেই ৫ হাজার ৩০৮ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে যা দিনের মোট আক্রান্তের ৪১ শতাংশের বেশি।
আর এই সময়ে যে ২৬৪ জন মারা গেছেন, তাদের ৮৭ জনই ছিলেন ঢাকা বিভাগের। চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৬ জন এবং খুলনা বিভাগে ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সরকারি হিসেবে এক দিনে সেরে উঠেছেন ১৫ হাজার ৭৮৬ জন। তাদের নিয়ে এ পর্যন্ত সুস্থ হলেন ১১ লাখ ৫৬ হাজার ৯৪৩ জন।
বিশ্বে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৪২ লাখ ৫৪ হাজার ছাড়িয়েছে। আর শনাক্ত হয়েছে ২০ কোটির বেশি রোগী।
বাংলাদেশে
করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গতবছর ৮ মার্চ; তা ১৩ লাখ পেরিয়ে
যায় এ বছর ৪ অগাস্ট। তার আগে ২৮ জুলাই দেশে রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০ জন নতুন
রোগী শনাক্ত হয়।
প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে
প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত ২ অগাস্ট তা ২১
হাজার ছাড়ায়। এরপর বৃহস্পতিবার এল রেকর্ড ২৬৪ জনের মৃত্যুর খবর।
ভারতে
উদ্ভূত ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিস্তারে গেল জুলাই মাসে মহামারীর সবচেয়ে কঠিন
সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে বাংলাদেশকে। ওই এক মাসেই দেশে মোট ৩ লাখ ৩৬
হাজার ২২৬ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, মৃত্যু হয়েছে ৬ হাজার ১৮২ জনের।
একক মাস হিসেবে এত রোগী শনাক্ত বা মৃত্যু এর আগে দেখতে হয়নি বাংলাদেশকে।
স্বাস্থ্য
অধিদপ্তরের হিসাবে দেখা যাচ্ছে, গত এপ্রিল, মে আর জুন মাস মিলিয়ে দেশে যত
রোগী শনাক্ত হয়েছে, এক জুলাই মাসেই হয়েছে তার চেয়ে বেশি। আর এই এক মাসেই
মারা গেছে আগের ছয় মাসের প্রায় সমান রোগী।
জুলাই মাসে কোভিডে আক্রান্ত
৩০০ জনের নমুনা থেকে পাওয়া করোনাভাইরাসের জিন বিশ্লেষণ করে ৯৮ শতাংশ
ক্ষেত্রে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল
বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) গবেষকরা।
যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি বলছে,
করোনাভাইরাসের এই ধরনটি জলবসন্তের মতই সহজে ছড়াতে পারে। ইতোমধ্যে বিশ্বের
অধিকাংশ দেশে ছড়িয়ে পড়া ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণে অসুস্থতার মাত্রাও
আগের তুলনায় বেশি হচ্ছে, বিশেষ করে যারা টিকা পায়নি, তাদের ক্ষেত্রে।
স্বাস্থ্য
অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত এক দিনে সারা দেশে মোট ৪৬ হাজার ৯৯৫টি নমুনা
পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৭৯ লাখ ৯৫ হাজার ৬৭৮টি নমুনা।
নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় দৈনিক শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ১২ শতাংশ,
যা আগের দিন ২৭ দশমিক ৯১ শতাংশ ছিল।
গত এক দিনে ঢাকা জেলায় দেশের
সর্বোচ্চ ৩ হাজার ২৪৭ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া ঢাকা বিভাগের
ফরিদপুরে ১৭৫ জন, গাজীপুরে ২১০ জন, গোপালগঞ্জে ১১৪ জন, কিশোরগঞ্জে ১৮১ জন,
মানিকগঞ্জে ১২৪ জন, মুন্সিগঞ্জে ১২০ জন, নারায়ণগঞ্জে ২৮২ জন, নরসিংদীতে ১০৬
জন, রাজবাড়ীতে ১৯৬ জন, শরীয়রপুরে ৩৭৪ জন এবং টাঙ্গাইলে ১০২ জনের মধ্যে
সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ১ হাজার
১১৭ জন, কক্সবাজারে ২১৬ জন, নোয়াখালীতে ২৩৬ জন, লক্ষ্মীপুরে ১৯৯ জন,
চাঁদপুরে ৪৪৬ জন, কুমিল্লায় ৭০৭ জন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২৪৯ জন আক্রান্ত
হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়।
রাজশাহী বিভাগের মধ্যে রাজশাহী জেলায় ১২৩ জন, পাবনায় ১০৯ জন, সিরাজগঞ্জে ২১৮ জন এবং বগুড়ায় ১০৫ জন নতুন রোগী পাওয়া গেছে গত একদিনে।
খুলনা বিভাগের মধ্যে যশোরে ১৩৫ জন, খুলনায় ১৪৫ জন এবং কুষ্টিয়ায় ২৩১ জন কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছেন গত ২৪ ঘণ্টায়।
অন্য
বিভাগগুলোর মধ্যে ময়মনসিংহে ৩১৫ জন, রংপুরে ১৩৯ জন, বরিশালে ৩৩৫ জন,
পটুয়াখালীতে ১৮২ জন, ভোলায় ১৭৬ জন, সিলেটে ৪৪৫ জন এবং হবিগঞ্জে ১৩৪ জন রোগী
শনাক্ত হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়।
ঢাকা বিভাগে গত এক দিনে যে ৮৭ জনের মৃত্যু
হয়েছে, তাদের ৪৭ জনই ছিলেন ঢাকা জেলার। চট্টগ্রাম বিভাগে মারা যাওয়া ৫৬ জন
জনের মধ্যে ১৬ জন কুমিল্লার এবং ১১ জন চট্টগ্রাম জেলার বাসিন্দা ছিলেন।
এছাড়া
খুলনা বিভাগে ৩৫ জন, রাজশাহী বিভাগে ১৯ জন, বরিশাল বিভাগে ১৬ জন, সিলেট
বিভাগে ২৩ জন, রংপুর বিভাগে ১৮ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জনের মৃত্যু
ঘটেছে গত এক দিনে।
মৃত ২৬৪ জনের মধ্যে ১৪২ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি,
৫৯ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ৩১ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে,
২৫ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, ৫ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে, ১
জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে এবং ১ জনের বয়স ১০ বছরের কম ছিল।
তাদের মধ্যে ১৪০ জন ছিলেন পুরুষ, ১২৪ জন ছিলেন নারী। ১৯০ জন সরকারি হাসপাতালে, ৫৫ জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং ১৯ জন
বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।