নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত এক দিনে আরও ১৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা গত দেড় মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। দেশে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের দাপট শুরুর পর সর্বশেষ গত ৪ জুলাই এক দিনে এর চেয়ে কম মৃত্যুর খবর এসেছিল। সেদিন ১৫৩ জন কোভিড রোগীর মৃত্যুর খবর দিয়েছিল সরকার।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৩৭ হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা করে আরও ৬ হাজার ৫৬৬ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
এ নিয়ে দেশে মোট ১৪ লাখ ৪৭ হাজার ২১০ জন কোভিড রোগী শনাক্ত হল; আর আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যু হল মোট ২৪ হাজার ৮৭৮ জনের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বৃহস্পতিবার নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার আগের দিনের মতই সাড়ে ১৭ শতাংশের সামান্য বেশি। জুলাই মাসের বেশিরভাগ সময় এই হার ৩০ শতাংশের আশেপাশে ছিল।
আগের দিন বুধবার সারা দেশে ৭ হাজার ২৪৮ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়, মৃত্যু হয় ১৭২ জনের। সে হিসেবে এক দিনে শনাক্ত রোগী আর মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে।
গত এক দিনে শুধু ঢাকা বিভাগেই ৩ হাজার ৪১৩ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে যা দিনের মোট আক্রান্তের অর্ধেকের বেশি। আগের দিন এ বিভাগে ৪ হাজার ১৫২ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল।
যে ১৫৯ জন গত এক দিনে মারা গেছেন, তাদের ৫০ জনই ছিলেন ঢাকা বিভাগের। চট্টগ্রাম বিভাগে ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সরকারি হিসেবে এক দিনে সেরে উঠেছেন ১০ হাজার ১৫৩ জন। তাদের নিয়ে এ পর্যন্ত সুস্থ হলেন ১৩ লাখ ৩৭ হাজার ১৮১ জন।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গত বছরের ৮ মার্চ। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিস্তারে গত জুন থেকে রোগীর সংখ্যা হু হু করে বেড়ে ১৪ লাখ পেরিয়ে যায় গত ১৩ অগাস্ট। তার আগে ২৮ জুলাই দেশে রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়।
প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ১৫ অগাস্ট তা ২৪ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে ৫ অগাস্ট ও ১০ অগাস্ট ২৬৪ জন করে মৃত্যুর খবর আসে, যা মহামারীর মধ্যে এক দিনের সর্বোচ্চ সংখ্যা।
বিশ্বে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৪৩ লাখ ৯১ হাজার ছাড়িয়েছে। আর শনাক্ত হয়েছে ২০ কোটি ৯১ লাখের বেশি রোগী।
দেশে এখন সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৮৫ হাজার ১৫১ জন। অর্থাৎ এই সংখ্যক মানুষ এখন নিশ্চিতভাবে করোনাভাইরাস সংক্রমিত অবস্থায় রয়েছেন। আগের দিন সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ছিল ৮৮ হাজার ৮৯৭ জন। জুলাইয়ে এই সংখ্যা দেড় লাখও ছাড়িয়েছিল।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত এক দিনে সারা দেশে মোট ৩৭ হাজার ২২৬টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৮৫ লাখ ৫৯ হাজার ৫৪টি নমুনা।
নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় দৈনিক শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ১৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ, এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৯১ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৭২ শতাংশ।
গত এক দিনে ঢাকা জেলায় দেশের সর্বোচ্চ ২ হাজার ৩৪৪ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া ঢাকা বিভাগের নরসিংদীতে ২২৯ জন, নারায়ণগঞ্জে ১২৬ জন, গাজীপুরে ১০৫ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ৩৪৮ জন, কক্সবাজারে ১০৪ জন, চাঁদপুরে ১১১ জন এবং কুমিল্লায় ২০৩ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে।
অন্য বিভাগগুলোর বিভিন্ন জেলার মধ্যে ময়মনসিংহে ১৮৭ জন, পাবনায় ১৬২ জন, খুলনায় ১৩১ জন, মৌলভীবাজারে ১৫৯ জন এবং সিলেটে ২০০ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে গত এক দিনে।
ঢাকা বিভাগে গত এক দিনে যে ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের ১৮ জনই ছিলেন ঢাকা জেলার। চট্টগ্রাম বিভাগে মারা যাওয়া ৩৮ জনের মধ্যে ১৪ জন কুমিল্লা জেলার বাসিন্দা ছিলেন।
এছাড়া রাজশাহী বিভাগে ১৩ জন, বরিশাল বিভাগে ১০ জন, খুলনা বিভাগে ১২ জন, রংপুর বিভাগে ৮ জন, সিলেট বিভাগে ২৩ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৫ জনের মৃত্যু ঘটেছে গত এক দিনে।
মৃত ১৫৯ জনের মধ্যে ৮৬ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি, ৩৫ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ২০ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ১২ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, ৩ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে, ২ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে এবং ১ জনের বয়স ১০ বছরের কম ছিল।
মৃতদের মধ্যে ৭৬ জন ছিল পুরুষ, ৮৩ জন নারী। ১২৯ জন সরকারি হাসপাতালে, ২৬ জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং ৪ জন বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।