করোনার কারণে
বাংলাদেশ থেকে বিদেশে কর্মী যাওয়ার হার কমলেও এখন প্রতিদিনই বাড়ছে
বিদেশগামী কর্মীর সংখ্যা। তারই ধারাবাহিকতায় চলতি বছর বাংলাদেশি অভিবাসীর
সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু অভিবাসীর সংখ্যা বাড়লেও
কমছে রেমিট্যান্সের হার।
বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস
ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট
রিসার্চ ইউনিট (রামরু) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয়।
সংবাদ
সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার অধ্যাপক ড.
তাসনিম সিদ্দিকী। এ সময় তিনি বলেন, 'বিএমইটি তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে
বাংলাদেশ থেকে মোট ছয় লাখ ১৭ হাজার ২০৯ জন কাজের উদ্দেশে বিশ্বের বিভিন্ন
দেশে গেছেন। ২০২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ১০ লাখ ২৯ হাজার ৫৪ জন বাংলাদেশি
অভিবাসন করেন। ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ধারা অব্যাহত থাকলে এ বছর অভিবাসন
প্রবাহ ৮১.৮৮ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।
তিনি আরও বলেন, ২০২২ সালে সবচেয়ে বেশি
সংখ্যক অভিবাসী গিয়েছেন সৌদি আরবে। চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ
থেকে সৌদি আরবে পাঁচ লাখ ৭৫ হাজার ৫০৭ জন কাজে যোগদান করেন। যা মোট
অভিবাসনের ৫৬ শতাংশ।'
ড. তাসনিম সিদ্দিকী জানান, অভিবাসন বাড়লেও সে হারে রেমিট্যান্স বাড়ছে না।
তিনি
বলেন, ২০২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত মোট ১০ লাখ ২৯ হাজার ৫৪ জন কর্মী
আন্তর্জাতিক অভিবাসন করেন। অথচ এই বছর রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধি
নেতিবাচক। এ বছরের নভেম্বর পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসেছে ১৯.৫৮ বিলিয়ন মার্কিন
ডলার। এই ধারা অব্যাহত থাকলে গত বছরের তুলনায় রেমিট্যান্স কমবে তিন দশমিক
১৭ শতাংশ।
রেমিট্যান্স প্রবাহের হ্রাস বৃদ্ধি বিভিন্ন কারণের ওপর
নির্ভরশীল। যেমন, আন্তর্জাতিক অভিবাসীদের মোট স্টকের বর্তমান অবস্থা। বিগত
১৪ বছরে প্রায় ৮৫ লাখ কর্মী বিদেশে গেছেন। আন্তর্জাতিক অভিবাসনের প্রথম
বছরেই অভিবাসন কর্মী রেমিট্যান্স পাঠাতে পারে না। অভিবাসনের দ্বিতীয় বছরে
রেমিট্যান্স প্রবাহে বৃদ্ধি দেখা দেয়।
রামরু জানায়, ২০২২ সালের নভেম্বর
পর্যন্ত মোট ৯৯ হাজার ৬৮৪ জন নারী কর্মী কাজের জন্য বিদেশে গেছেন। ডিসেম্বর
পর্যন্ত এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২১ সালের তুলনায় নারী অভিবাসন প্রবাহ ৩৫
দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। তবে এ বছর আন্তর্জাতিক অভিবাসন প্রবাহের
বৃদ্ধির ক্ষেত্রে পুরুষ অভিবাসনের প্রবাহ যে মাত্রায় বেড়েছে সে মাত্রায়
নারী অভিবাসন বাড়েনি। এ বছরে মোট আন্তর্জাতিক অভিবাসনের ১০ শতাংশ হলো নারী
অভিবাসন।
নানা সংকট মোকাবিলায় ছয়টি সুপারিশ জানিয়েছে সংগঠনটি। এগুলো
হলো- অভিবাসীদের ব্যাংকের ওপর আস্থা ফিরিয়ে আনতে পদক্ষেপ গ্রহণ, কারিগরি
প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোর (টিটিসি) পরিচালনায় সরকার ও এনজিওগুলোর একযোগে কাজ
করা, নিরাপদ অভিবাসন সুনিশ্চিত করতে অভিবাসন সম্পর্কিত মোবাইল অ্যাপগুলোর
প্রয়োগে তরুণ শিক্ষার্থীদের সংযুক্ত করা, অভিবাসীদের সন্দেহজনক অস্বাভাবিক
মৃত্যুর কিছু কিছু কেস পুনরায় ময়নাতদন্তের পদক্ষেপ গ্রহণ করা, বায়রাতে যে
অভিযোগ সেল গঠন করা হয়েছে তা অতি দ্রুত সক্রিয় করে অভিবাসীদের আইনি সহায়তা
নিশ্চিত করা এবং মানবপাচার সংক্রান্ত মামলাগুলোর প্রসিকিউশনের হার বৃদ্ধি
করা।