স্টাফ রিপোর্টার।। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক দুলালের ২১ তম শাহাদাৎ বার্ষিকীতে কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও কুমিল্লা মহানগর আওয়ামীলীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক কবিরুল ইসলাম শিকদার বলেছেন, দুঃখজনক সত্য ঘটনা ওবায়দুল হক দুলালের খুনিরাই আজ কুমিল্লাতে সদর্পে রাজনীতি করছে। এখন পর্যন্ত প্রশাসন ও আল্লাহর কাছে এই হত্যার বিচার পাই নাই।
কবিরুল ইসলাম শিকদার তার ব্যক্তিগত ফেসবুক স্ট্যাটাসে এ মন্তব্য করেন। তার এই ফেসবুক পোস্ট ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়েছে। সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ওবায়দুল হক দুলাল আওয়ামীলীগ নেতা কবিরুল ইসলাম শিকদারের বড় বোনের ছোট ছেলে ছিলেন।
উল্লেখ্য, ২০০১ সালের ১৮ জুলাই কুমিল্লা শহরের টমসনব্রিজ এলাকায় নৃশংসভাবে খুনের শিকার হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক দুলাল।
কবিরুল ইসলাম শিকদার তার ব্যক্তিগত ফেসবুক স্ট্যাটাসে আরো বলেন, কুমিল্লার চিহ্নিত আততায়ীরা আজকের এই দিনে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে না পেরে তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। কিন্তু দুঃখজনক সত্য ঘটনা এ-ই খুনিরাই আজ কুমিল্লাতে সদর্পে রাজনীতি করছে, একালে এখন পর্যন্ত প্রশাসন ও আল্লাহর নিকট বিচার পাই নাই। পরকালে তার বিচারের আশায় রইলাম। আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করুক।
এ ছাড়া নিহত ওবায়দুল হক দুলালের বড় ভাই এনামুল হক বেলাল সোমবার রাতে আবেগঘন একটি পোস্ট দিয়েছেন তার ছোটভাই ওবায়দুল হক দুলালের মৃত্যুর দিনের ঘটনা বর্ণনা করে।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে এনামুল হক বেলাল লিখেছেন, আমার বিয়ের অনুষ্ঠানের এক দিন পর রাতে আত্মীয় স্বজনরা সবাই বাসায়, কিন্তু ছোট ভাইটির তখনও কোন দেখা নেই। ১৭ তারিখ গেল, পরের দিন সকালে পত্রিকা য় দেখলাম বরুড়ায় আওয়ামীলীগের এক কর্মীকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমি সেদিন শ্বশুরবাড়ি গাংচরে আড়াই দিনের (আড়াইয়া) অনুষ্ঠানে। বিকেলে আবার যথারীতি নিজ কর্মস্হল দোকানে।
কিন্তু মনটা কেন জানি খুব খারাপ খারাপ লাগছে। দোকানে মন বসছে না, সাথে খুলনার এক বন্ধু আজাদ ভাই আমার সাথে। যিনি কর্মসূত্রে অনেক দিন কুমিল্লায় হাউজিং এস্টেটে বসবাস করতেন, সে সময় তিনি কুমিল্লা প্রথম আলো বন্ধু সভার সভাপতি ছিলেন। যাক সে কথা, ঠিক সন্ধ্যার আগে এক অপরিচিত লোক দৌড়ে এসে বললো,আপনার ভাইকে টমছমব্রীজে কারা যেন মারছে। তা শুনে সাথে সাথেই আমি আজাদ ভাই এর মোবাইল নিয়ে ছোট ভাইটির নান্বারে ফোন দিলাম।
(সে সময় আমি মোবাইল ফোন ব্যবহার করতাম না) কিন্তু, দেখলাম মোবাইল রিসিভ করেও ওপ্রান্ত থেকে কেউ কিছু বলছে না, আমি তখন আমার পরিচয় দিয়ে বললাম - আমি বেলাল, শফিক শিকদার (আওয়ামী লীগ নেতা) - কবির শিকদার (ছাত্রলীগ নেতা) এর ভাগিনা, হেলালের বড় ভাই, তোদের দেখে নেব ! আমি আসছি.......!
সাথে সাথেই একসঙ্গীসহ টমছমব্রীজে গিয়ে দেখি সুন-সান নীরবতা, জন মানব শূন্য ব্যস্ত এলাকা , সব দোকান পাট বন্ধ ! এদিক - সেদিক অল্প কিছু মানুষ যে যেদিকে পারছে রূদ্ধশ্বাসে ছুটছে! কাউকে কিছু বললে, কোনো উত্তর পাচ্ছি না ! একজন মুরুব্বি শুধু সাহস করে বললো, মসজিদের সামনে তোমার ভাইয়ের মোটর- সাইকেলটা পড়ে আছে। সেখানে গিয়ে দেখি ৪/৫ জন পুলিশ কি যেন বলাবলি করছে, আমার পরিচয় জানতে পেরে বললো আপনি তাড়াতাড়ি কুচাইতলি আধুনিক হাসপাতালে যান। তাদের কথামতো ছোট ভাইটির মোটরসাইকেলটি নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে দেখি মানুষ গিজগিজ করছে, মানুষের জন্য হাসপাতালের ভেতরে ঢোকাই যাচ্ছে না। অনেকে আবার আমাকে ঢুকতেও দিচ্ছে না, তখনও জানি না আমার জন্য কি অপেক্ষা করছে ! অবশেষে অনেক চেষ্টা করে ইমার্জেন্সি রুমে গিয়ে দেখি সব-ই শেষ ! তার একটি পা-ও দেখি নাই, (খুনিরা কেটে নিয়ে গেছে )! ছোট ভাইয়ের নিথর দেহটি পড়ে আছে সেখানে, কর্মীরা এদিক ওদিক শুধু বিলাপ করছে।
আমার জানামতে কুমিল্লার ইতিহাসে এটিই নির্মম, বর্বর হত্যাকাণ্ড, যা কুমিল্লাবাসী সহজেই ভুলতে পারবে না।
দলীয় পথভ্রস্ট কিছু গুটিকয়েক সন্ত্রাসীই এ জঘন্য কাজটি করেছে। বরুরা থেকে আওয়ামীলীগের এক কর্মীর জানাযা শেষে শহরে ফিরতে আসলে এ ঘটনা ঘটানো হয়। আমি আমার এ কষ্টের লেখনীতে তার নাম একবারও উল্লেখ করি নি, মৃত্যুকালে সে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিল, নাম মোঃ ওবায়দুল হক দুলাল, জন্ম ১৯৭৫ ।
সে-ই ২০০১ থেকে ২০২৩ কিভাবে যে ২১ টি বছর জীবন থেকে চলে গেল, বুকের ভেতর কতো যে কষ্ট লুকিয়ে আছে..., আছে কতো অভিশাপ..., মাত্র ২৬ বছরের আয়ু..., তার এ শোকে আমার মাও আজ নেই, তার বিধবা বউটির দিকে তাঁকালে...
১৮ ই জুলাই তার ২১ তম মৃত্যু বার্ষিকী।
মহান আল্লাহ তায়ালা যেন তার সকল গুনাহ মাফ করে দেন এবং বেহেশত নসীব করেন, আমিন।