সার কারখানায় আপাতত গ্যাস
সরবরাহ বন্ধ করে দিতে চাইছে জ্বালানি বিভাগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার
নির্দেশনার দুই মাস পার হলেও গ্যাসের বকেয়া বিলের টাকা পরিশোধ করছে না
শিল্প মন্ত্রণালয়। অনেকটা বাধ্য হয়েই সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখার
মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে জ্বালানি বিভাগ।
জ্বালানি বিভাগের এক
বৈঠকে জানানো হয়, শিল্প মন্ত্রণালয় আগের দামেই গ্যাসের বিল পরিশোধ করতে
চায়। এ বিষয়ে সম্প্রতি পেট্রোবাংলার সঙ্গে শিল্প মন্ত্রণালয়ের একটি বৈঠক
হয়েছে। বৈঠকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে নতুন দামে গ্যাসের বিল দেওয়ার
ব্যাপারে অসম্মতি জানানো হয়েছে।
সূত্র বলছে, যুগ্ম সচিব (অপারেশন-২)
মোহা. নায়েব আলী বৈঠকে বলেছেন, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের
(বিসিআইসি) পক্ষ থেকে পুনর্র্নিধারিত মূল্য প্রতি ঘনমিটার ১৬ টাকা হারে
গ্যাস বিল পরিশোধের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতির পর শিল্প মন্ত্রণালয়কে
চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে আশানুরূপ কোনও সাড়া পাওয়া
যাচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার
রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে শিল্প
মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি বৈঠক হয়েছে। ওই সভায় শিল্প মন্ত্রণালয় আগের দামেই
গ্যাস বিল পরিশোধের বিষয়ে মতামত ব্যক্ত করেছে। পুনর্র্নিধারিত মূল্য প্রতি
ঘনমিটার ১৬ টাকা হারে গ্যাস বিল পরিশোধে প্রধানমন্ত্রী দুই মাস আগে সম্মতি
জ্ঞাপন করেছেন, যা শিল্প মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের অবহিত করা হয়েছে। দুই
মাস পর এখন এ বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অনীহা দাফতরিক শোভনীয়তার পরিপন্থি।
পুনর্র্নিধারিত মূল্যে বিল পরিশোধ না করলে অচিরেই সার কারখানায় গ্যাস
সরবরাহ বন্ধ করা হতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।’ পেট্রোবাংলার
চেয়ারম্যান আরও উল্লেখ করেন, ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানি
প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন। তাই এ কোম্পানিতে গ্যাস সরবরাহ চালু রাখা
হবে। কিন্তু অন্য সার কারখানাগুলোর জন্য কঠোর অবস্থানে যাওয়া লাগতে পারে।
দেশে
সারের চাহিদা নিরূপণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জ্বালানি বিভাগ থেকে বলা
হচ্ছে—কী পরিমাণ চাহিদা রয়েছে এবং কী পরিমাণ সার উৎপাদন হয়েছে, সে বিষয়ে
একটি প্রতিবেদন তৈরি করতে বলা হয়েছে।
জ্বালানি বিভাগের একটি সূত্র
জানিয়েছে, সার কারখানায় সরবরাহ করা গ্যাসের দাম ২০২২ সালে অস্বাভাবিক হারে
বাড়ানো হয়। ওই বছরের ৫ জুন প্রতি ঘনমিটার গ্যাস ৪ টাকা ৪৫ পয়সার বদলে ১৬
টাকা দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এতে সার কারখানার গ্যাসের দাম ২৬০ শতাংশ
বেড়ে যায়।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) তরফ থেকে
জানানো হয়, দাম বৃদ্ধির একটি অংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে দেবে। তবে সার
কারখানা নতুন দাম বাড়ানোর পরও পুরোনো দামেই গ্যাসের বিল পরিশোধ করছে।
বিষয়টি নিয়ে নানা সময়ে জ্বালানি বিভাগ শিল্প মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসলেও
সুরাহা হয়নি। এরপর বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার জন্যও পাঠানো হয়।
প্রধানমন্ত্রী প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের বিল ১৬ টাকা দামে পরিশোধের নির্দেশ
দিলেও তা মানছে না শিল্প মন্ত্রণালয়।
উল্লেখ্য, দেশের সাতটি সার কারখানায় দৈনিক ৩১৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হচ্ছে ১৩৯ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস।