নির্বাচন
রুখতে বিএনপি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায় জানিয়ে দলটির
নাশকতামূলক কর্মকা-ের বিরুদ্ধে জনগণকে সতর্ক থেকে অতীতের মতো প্রতিরোধ গড়ে
তোলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
সোমবার (১৩ নভেম্বর) বিকেলে খুলনা সার্কিট হাউস মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত
বিভাগীয় মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
বিএনপিকে
নেতৃত্বহীন দল আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের সময়ে একটা বিষয়
নজরে রাখতে হবে। বিএনপি-জামায়াত জানে, ২০০৮ সালেই ৩০টি সিট পেয়েছে। তারা
জানে যে, তাদের নেতা নেই। মু-ুহীন একটা দল। একটা পলাতক আসামি, আরেকটা
কারাগারে। সেই দল এই দেশের নির্বাচন হতে দিতে চায় না। একটা অস্বাভাবিক
পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়।
‘আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে, কেউ যদি
ওই গাড়ি আর মানুষকে আগুনে পোড়াতে চেষ্টা করে, ওই হাত ওই আগুনে পুড়িয়ে
দেবেন। উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে দেবেন। যেন আর কেউ সাহস না পায় মানুষকে এভাবে
ক্ষতি করতে। তাদের প্রতিহত করতে ইতিমধ্যেই অগ্নিসংযোগকারীকে ধরিয়ে দিতে
পারলে ২০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। এদের কোনও ক্ষমা করা হবে
না।’
বাংলার মানুষ আমার পরিবার:
মা-বাবা হারিয়ে বাংলার মানুষকে নিজের
পরিবার মনে করে তাদের ভাগ্যেন্নয়নে কাজ করছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা বলেন, বারবার আপনাদের সেবা করার সুযোগ পেয়েছি। আমার চাওয়ার কিছু
নাই। মা-বাবা সব হারিয়েছি। তবুও আমি ফিরে এসেছি।
তিনি বলেন, যে
মানুষগুলোর জন্য মানুষের ভাগ্য গড়ার জন্য আমার বাবা সারাজীবন কষ্ট করেছেন।
আমি তাদের মানুষকে ভাগ্য গড়তে চাই। ক্ষুধা দারিদ্র্য দূর করে উন্নত জীবন
দিতে চাই। দেশের মানুষ ভালো থাকলে, এটাই আমার পাওয়া।
‘বাংলার মানুষকে
আপন করে নিয়েছি। বাংলার মানুষের কাছে আমি পেয়েছি বাবা-মা-ভাইয়ের হারানো
স্নেহ। বাংলাদেশের মানুষকে আমি পরিবার হিসেবে আপন করে নিয়েছি। তাই তাদের
কল্যাণের জন্যই আমি কাজ করে যাচ্ছি।’
এ সময় বারবার ভোট দিয়ে আওয়ামী
লীগকে নির্বাচিত করায় জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, এজন্যই বদলে
যাওয়া বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। মাথা উঁচু করে চলতে পারে। আজকের
বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাওয়ার বাংলাদেশ।
স্বাস্থ্যসেবা
জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে ৯৬ সালে কমিউনিটি ক্লিনিক করে দেওয়ার কথা উল্লেখ
করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতে মা ও শিশুরাই বেশি লাভবান হচ্ছে। ২০০১ সালে
এসে খালেদা জিয়া তা বন্ধ করেছিল। সে বলেছিল, যারা কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা
নেবে তারা নৌকায় ভোট দেবে। আমার প্রশ্ন, যারা সেবা নিতে যায় তারা কি আওয়ামী
লীগ-বিএনপি চিন্তা করে? তাহলে বোঝেন তারা কতটা হীনমন্যতায় ভোগে।
নৌকা স্মার্ট বাংলাদেশ দেবে:
২০৪১
সালে আওয়ামী লীগ সরকারের হাত ধরেই দেশ ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’র রূপ পাবে
জানিয়ে আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট চান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।
‘নৌকা
স্বাধীনতা দিয়েছে, নৌকা উন্নয়ন দিয়েছে। নৌকায় ভোট দিয়েছেন বলেই উন্নয়নশীল
দেশের মর্যাদা পেয়েছে। এই নৌকাই দেবে ৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ। স্মার্ট
জনগোষ্ঠী হবে, স্মার্ট সরকার হবে, স্মার্ট অর্থনীতি হবে, স্মার্ট সমাজ হবে।
বাংলাদেশ আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন, উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ
জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করে আমরা তৈরি করবো। নৌকায় ভোট দিয়ে আবারও সেবা
করার সুযোগ দেবেন।’
এ সময় উপস্থিত জনতার কাছে ভোট চাইলে তারা দু’হাত তুলে নৌকায় তাদের পূর্ণ সমর্থনের কথা জানান দেন।
জনগণের
উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা বারবার আমাদের ভোট দিয়েছেন। ভোট দিয়ে
আপনাদের সেবার করার সুযোগ দিয়েছেন। আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আর
সেই সুযোগটা দিয়েছেন বলেই আজ বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। বদলে যাওয়া
বাংলাদেশ।
খুলনার জন্য উপহার:
খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়নে
অবকাঠামোসহ বিভিন্ন খাতের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুলনার
উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করেছি। আজ যা উদ্বোধন করলাম, তা আপনাদের জন্য উপহার।
তিনি
বলেন, পদ্মা সেতু ও মধুমতি সেতু নির্মাণের ফলে আঞ্চলিক সুবিধা খুলনাবাসী
পাচ্ছেন। দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। এতে
যোগাযোগব্যবস্থা আরও সহজ হয়েছে। খুলনা-মোংলা রেলপথ কাজ শুরু হয়েছে। খুলনা
থেকে মোংলা পোর্ট পর্যন্ত রেললাইন ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সাথে উদ্বোধন করে
দিয়েছি। আমরা একটা এক্সপ্রেসওয়ে ‘সুন্দরবন এক্সপ্রেস’ নামে করছি, যাতে
যাতায়াত সহজ হয়। নদী ভাঙনে খুলনা বিভাগের জেলাগুলো যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়,
সেজন্য সময়মত ড্রেজার ও নদী ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
এর
আগে, বিকেল ৩টা ১৬ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী সাকিট হাউস মাঠে আয়োজিত আওয়ামী
লীগের বিভাগীয় সমাবেশে উপস্থিত হন। এরপর সেখানে তিনি ২৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের
উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে
হেলিকপ্টারে খুলনা জেলা স্টেডিয়ামে অবতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর দুপুর
১টা থেকে ২টা পর্যন্ত সার্কিট হাউসে বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে
মতবিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর হাউস মাঠে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের
উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
বিভাগীয় এই মহাসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক।