আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ
জাতীয় সংসদ নির্বাচন। প্রতীক বরাদ্দের পর আনুষ্ঠানিক প্রচারে ব্যস্ত
প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকরা। সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচনের প্রচারেও
বৈচিত্র্য এসেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, নির্বাচনী উৎসব শুরু হয়ে গেছে।
কিন্তু
প্রত্যাশিত উৎসবমুখর পরিবেশ কিছুটা হলেও বিঘিœত করছে কিছু সহিংসতার ঘটনা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনে নৌকার নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর ও লুটপাটের
অভিযোগ উঠেছে দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে। গত শনিবার সন্ধ্যায় ছাতারপাইয়া
ইউনিয়নের ঠনারপাড় গ্রামে ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়িতে ভাঙচুর, লুটপাট ও
গুলিবর্ষণ করে দুর্বৃত্তরা। ওদিকে ‘আট স্থানে হামলা, ভাঙচুর গুলি, আহত ১৩’
শিরোনামে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, পাবনার ঈশ্বরদীতে ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের
নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা
ঘটেছে।
ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে নৌকার নির্বাচনী অফিসে হামলা-ভাঙচুর,
পটুয়াখালীর গলাচিপায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকের দোকান ভাঙচুর, ফরিদপুরে
নির্বাচনী প্রচারে হামলা হয়েছে। মোট আট স্থানে ১৩ জন আহত হয়েছেন। এদিকে
জামালপুরে এক সাংবাদিককে প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রশাসন ও
পুলিশের মধ্যস্থতায় প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কোলাকুলি করে ‘আর
সংঘাতে না জড়ানোর’ প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরদিনই ফের সহিংসতা হয়েছে রাজশাহীর
বাগমারায়।
জয়পুরহাট-২ আসনে ক্ষেতলাল উপজেলায় নৌকা প্রার্থীর সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ উভয় পক্ষের পাঁচজন আহত হয়েছেন।
অথচ
বাংলাদেশে নির্বাচনকে ভোট উৎসব বলেই ধরা হয়। নির্বাচন উৎসবে প্রার্থীদের
কর্মী-সমর্থকরা নানা আয়োজনে ভোট প্রার্থনায় নামে। পথসভা, কর্মিসভার আয়োজন
করা হয়। বিশেষ করে সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পাড়া-মহল্লায় চলে
নির্বাচনী প্রচার।
প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে প্রার্থী এবং তাঁদের অনুসারীরা
ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে বাদ্য বাজিয়ে অনেকেই মিছিল করে। এবার সেই উৎসবমুখর
পরিবেশ সংঘাত-সংঘর্ষে রূপ নিয়েছে। ঘটেছে প্রাণহানির ঘটনা। জাতীয় সংসদ
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ ও এর
অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষ শুরু হয়েছে।
অতীতেও
দেখা গেছে, নির্বাচনের আগে অস্থিতিশীলতা, দ্বন্দ্ব-সংঘাত, হানাহানি বেড়ে
যায়। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। অস্ত্রের ঝনঝনানি বেড়ে যায়।
নির্বাচন ঘিরে সহিংসতার শঙ্কা বাড়ে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিপক্ষের
নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন ও ভাঙচুর অনেক সময় নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়।
ওদিকে গত সোমবার পুরান ঢাকার চকবাজার এলাকা থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করে
ডিবি। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ডিবি জানিয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে
রেখে দেশে নাশকতা চালাতে বিশেষ সন্ত্রাসী দল তৈরি করেছে সরকারবিরোধী একটি
সংঘবদ্ধ চক্র। তারা অর্থের বিনিময়ে বোমা হামলা, যানবাহনে আগুন দেওয়া ও
রেলপথে নাশকতার মতো অপরাধমূলক ঘটনা ঘটিয়ে আসছে।
সব ধরনের নাশকতা ও সহিংসতার আশঙ্কা দূর করতে যথোপযুক্ত ও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।